ইনসাইড পলিটিক্স

ফায়দা লুটতে শ্রীলঙ্কা তত্ত্ব


প্রকাশ: 22/05/2022


Thumbnail

গত কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক অস্থিরতায় নিমজ্জিত। দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। দেশটির পেট্রোল, ওষুধ এবং বৈদেশিক রিজার্ভ শেষ হয়ে গেছে। মূলত বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র ঘাটতির কারণে দেশটির সরকার জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও আকাশ ছোঁয়া। যার ফলে সরকারের প্রতি ক্ষোভে ফুঁসে উঠে জনগণ রাস্তায় প্রতিবাদ করতে নামে। এক পর্যায়ে জনতা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী আসলেও শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। এদিকে শ্রীলঙ্কার এই করুণ পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের একটি বিশেষ মহল অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। তারা আশঙ্কা করছে খুব শ্রীঘ্রই হয়তো বাংলাদেশের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে এবং তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার একটা সুযোগ পাবে। সেজন্য বাংলাদেশও যে খুব তাড়াতাড়ি শ্রীলঙ্কার মতোই দেউলিয়া হতে যাচ্ছে এই বিষয়টি বিশেষ মহল খুব ফলাও করে প্রচার করছে। সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি করতে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা ছড়ানো হচ্ছে। তাদের ছাড়ানো বিভ্রান্তিগুলোর স্বপক্ষে দেশের মেগা প্রজেক্টগুলো উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও দেশের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যত ইন্ডিকেটর আছে তা সবগুলোই ইতিবাচক। বিপরীত দিকে শ্রীলঙ্কার সবগুলো ইন্ডিকেটরই ছিল নেতিবাচক। তাই বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়। করোনার দুই বছর শ্রীলঙ্কার আয়ের প্রধান খাত পর্যটন শিল্পে ধস নামে। ফলে এ খাতের আয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে দেশটি। বিপরীত দিকে পর্যটক আকৃষ্ট করতে গ্রহণ করা নানা প্রকল্পে আগে নেওয়া বিপুল বিদেশি ঋণের কিস্তি তো রয়েছেই। তাছাড়া শিল্প উৎপাদনে ধস নেমেছে, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সও পৌঁছেছে তলানিতে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গত টেনে অনেকে আমাদের দেশের মেগা প্রজেক্টগুলোর কথা বলছেন। কিন্তু আমরা যদি পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গটিই বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে, সেতুটি চালু হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। আর প্রতিবছর দারিদ্র্য নিরসন হবে শূন্য দশমিক ৮৪ ভাগ। এর মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় ৬ কোটি মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আনবে পদ্মা সেতু। আমরা উত্তরবঙ্গের বঙ্গবন্ধু সেতু দেখেছি কীভাবে দেশের অর্থনীতির গতিধারা পাল্টে দিয়েছে। টার্গেট ছিল ২৫ বছরে সেতুতে বিনিয়োগের টাকা তুলে আনার। কিন্তু সেই টাকা উঠে এসেছে সাত বছর আগেই। যা জাতীয় অর্থনীতির সুবাতাসকেই নিশ্চিত করেছে। একইভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক বিপল্প ঘটাবে মেট্রোরেল। মেট্রোরেল প্রকল্পটি প্রতি বছর ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে যা জাতীয় জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ এর সমান। তাছাড়া মেট্রোরেল ঢাকার ১৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জন্য যাতায়াত সহজ করবে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে গতিশীল করবে, যা অর্থনীতিতে একটি বড় ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে।

সুতরাং যারা বা যে মহলটি শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ টেনে বলছেন যে, বাংলাদেশও শ্রীলঙ্কার মতো হবে তাদের এই খোরা যুক্তি বোধ্যগম্য নয় বলেই মনে করছেন দেশের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা এটিকে একটি গুজব বলেই অ্যাখায়িত করতে চান। যারা কিনা এই গুজব ছড়িয়ে বিশেষ কোনো স্বার্থ হাসিলের সুযোগের অপেক্ষায় আছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭