ইনসাইড হেলথ

দেশে এখনো মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়নি: বিএসএমএমইউ উপাচার্য


প্রকাশ: 24/05/2022


Thumbnail

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে এখনো মাঙ্কিপক্সের কোন রোগী ধরা পড়ে নাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের আক্রান্ত কোন রোগী পাওয়া যায়নি। তবে করোনা মহামারীকে আমরা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে মোকাবিলা করেছি, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে যেমনভাবে বাংলাদেশে আতংক সৃষ্টি করতে দেই নাই, সেরকমভাবে আমরা মাস্কিপক্স ভাইরাসের জন্যও প্রস্তুত আছি।

মঙ্গলবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারির বিশ্ব থেকে এখনো শেষ হয়নি। এরমধ্যেই বিশ্বে আরো একটি ভাইরাস জেঁকে বসবার উপক্রম করছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ১৪টি দেশে একটি ফুসকুড়িসহ জ্বরের ঘটনা ঘটেছে যা মাঙ্কিপক্স হিসাবে নির্ণয় করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কিপক্সকে শনাক্তযোগ্য ও বর্ধনশীল ব্যাধি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইতোমধ্যে সংক্রামক রোগ ‘মাঙ্কিপক্স’ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি স্থল, নৌ এবং বিমান বন্দরে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তিনি আরও বলেন, মাঙ্কিপক্স একটি ডিএনএ ভাইরাস। কাউপক্স, ভ্যাক্সিনিয়া এবং ভ্যারিওলা (স্ম্যালপক্স) এই গ্রুপের ভাইরাস। এটি একটি জুনোটিক ভাইরাস যার প্রাথমিক সংক্রমণ সংক্রমিত প্রাণীর সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বা সম্ভবত তাদের অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়। উদাহরণ-জংলী কুকুর, ইঁদুর, খরগোশ, কাঠবিড়ালি, বানর, সজারু ইত্যাদি। ১৯৫৮ সালে ল্যাবরেটরিতে প্রথম বানরের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম দেখা দিয়েছিল বলে ১৯৭০ সালে এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, এই ভাইরাসের ২টা স্ট্রেইন আছে। কঙ্গো বেসিন স্ট্রেন পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেইনের চেয়ে বেশি মারাত্মক। এই ভাইরাস পশু থেকে প্রাণী এবং পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণই সবচেয়ে ভয়ংকর মাধ্যম বলে বিবেচিত। ৯০% রোগী ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। গুটিবসন্তের টিকা বন্ধ করা এর একটি কারণ হতে পারে। আফ্রিকাতে ১-১০% পর্যন্ত মৃত্যুর হার রিপোর্ট করা হয়েছে, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে প্রাদুর্ভাবে কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। জটিলতার মধ্যে রয়েছে স্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কেরাটাইটিস, কর্নিয়ার আলসারেশন, অন্ধত্ব, সেপ্টিসেমিয়া এবং এনসেফালাইটিস। গুটিবসন্তের টিকা মাংকিপক্স থেকে ৮৫% সুরক্ষা প্রদান করে। ২ সপ্তাহের মধ্যে, সম্ভব হলে  ৪ দিনের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে হবে। ইনকিউবেশন পিরিয়ড গড়ে ১২ দিন, ৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। প্রড্রোম ১ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। জ্বরজনিত অসুখের সাথে ঠাণ্ডা লাগা, ঘাম, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা,  ফ্যারিঞ্জাইটিস, শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেন, লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি জ্বরের পরে ২-৩ দিনের মধ্যে ঘাড়ের চারদিকে দেখা যায়। ১ থেকে ১০  দিনের মধ্যে ফুসকুড়ি তৈরি হয়। ফুসকুড়ি প্রায়ই মুখে শুরু হয় এবং তারপর শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। এগুলো মুখমণ্ডল, শরীর , হাত-পা এবং মাথার ত্বক জড়িত। হাতের তালু এবং পায়ের পাতায় ক্ষত দেখা যেতে পারে। এগুলি ব্যথাহীন হয়।  যদি ব্যথা থাকে তাহলে এটি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হতে পারে। চুলকানি থাকতে পারে।

হেমোরেজিক এবং ফ্ল্যাট ফর্ম, যা গুটিবসন্তের সাথে দেখা যায়, মাঙ্কিপক্সের রোগীদের ক্ষেত্রে এটা দেখা যায় না। আক্রান্ত বা সন্দেহযুক্ত প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। প্রাণীর কামড়, আঁচড় এবং লালা বা প্রস্রাবের স্পর্শ থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। আর আক্রান্ত রুগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সকল ক্ষত শুকানো পর্যন্ত  আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টাইন করে চিকিৎসা করা আবশ্যক।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, এফডিএ গুটিবসন্ত বা মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়ার জন্য একটি লাইভ, নন-রিপ্লিকেটিং স্মলপক্স এবং মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। সিডোফোভির- মাঙ্কিপক্সের জন্য অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ স্মলপক্স ভ্যাকসিন, মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন উভয়ই লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাক্সিনিয়া স্ট্রেন থেকে উদ্ভূত।

তিনি বলেন, গতকাল সোমবার বিকালের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঙ্কিপক্সের প্রথম রোগী সনাক্ত হয়েছে বলে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। যা ছিল নিছক একটি গুজব। বিষয়টি প্রথমে আমাদের নজরে  আনেন গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল কিছু সংখ্যক সাংবাদিক ভাইয়েরা। তাদের এ তথ্যে আমাদের প্রশাসন  আরো তৎপর হয়ে পড়ে।  এহেন ঘটনার পরপরই আমরা খোঁজ নেয়া শুরু করি আসলে কী ঘটেছে।

এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, গুজব রোধ এবং গুজব রটনাকারীকে খুঁজে পেতে গণমাধ্যমের কর্মীদের পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের কাছে মৌখিকভাবে সহযোগিতা চাওয়া হয়। সাইবার ক্রাউম ইনভেস্টিগেশের তড়িৎ পদক্ষেপে আমরা যে নোয়াখালী জেলার সেনবাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা.আসিফ ওয়াহিদ অর্কের বরাতে সংশ্লিষ্ট গুজব পোস্ট হয় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ হই। তবে ডা. আসিফ ওয়াহিদ জানান এমন কোন ঘটনা সে জানে না। তিনি এমন পোস্টও করেনি। আমাদের ডাটাবেসেও মাঙ্কি পক্স রোগী ভর্তির কোন তথ্য নেই। সর্বোপরি এ গুজব প্রতিরোধে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। মূলত গণমাধ্যম কর্র্মীদের সোচ্চার ভূমিকার কারণে আজ দেশ একটি বড় গুজব প্রতিরোধ করতে পেরেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে আবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

তিনি বলেন, ডা. আসিফ ওয়াহিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের নতুন ভর্তিকৃত রেসিডেন্ট হলেও কোন ক্লাস করেন নি। যার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তাকে ট্রেস করতে পারিনি। তিনি ৩৯ তম বিসিএসের স্বাস্থ্য ক্যাডার। তিনি পরে নিজ ফেসবুকে মাঙ্কিপক্স নিয়ে কোন স্ট্যাটাস পোস্ট দেননি বলে জানান।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭