ইনসাইড বাংলাদেশ

সিলেটে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে ‘মুরাদ খান’


প্রকাশ: 26/05/2022


Thumbnail

সিলেটে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে ‘মুরাদ খান’ নামক একটি নাম। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার একটি বিতর্কিত প্রতিবেদনের সঙ্গে এই নামটি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে করা সেই প্রতিবেদনের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনজন। তাদের একজনের নাম হলো মুরাদ খান বলে জানা যায়। 

ওই নামের এক ব্যক্তি অতিথি মঞ্চে বসে গত ২২ মে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এই মুরাদই সেই মুরাদ কিনা তা নিয়ে চলছে খোঁজ। 

সিলেট শিল্পকলা একাডেমিতে তিন দিনের নির্দেশনা কর্মশালা উদ্বোধন ও সমাপনী অনুষ্ঠানের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশ গুপ্ত। এতে সমাপনী অনুষ্ঠানে মুরাদ খানকে মঞ্চে দেখা যায়। পরে সেই ছবি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে অসিত বরণ তার পোস্টটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেন।

মঙ্গলবার (২৪ মে) বিকেলে অসিত বরণের সঙ্গে কথা হলে তিনি দাবি করেন, মুরাদ খানকে তিনি চেনেন না। এমনকি কর্মশালার অতিথিদের তিনি বা জেলা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে দাওয়াতও দেওয়া হয়নি। ‘অপরিচিত লোক’ মঞ্চে অতিথির আসনে বসানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনো উত্তর তিনি দেননি। 

কর্মশালার উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন দাওয়াত দিয়েছিল বলে দাবি করেন অসিত বরণ। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অনিরুদ্ধ ধর শান্তনুর দাবি, তিনিও মুরাদ খানকে চেনেন না। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে কর্মশালার ব্যাপক প্রচারণা দেখে মুরাদ খান সমাপনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তিনি নিজেকে ঢাকার আরণ্যক নাট্যদলসহ দেশে ও বিদেশে নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে পরিচয় দেন। এই সুবাদে তাকে শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।’ এভাবে কারও পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে বক্তৃতার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান শান্তনু। 

ওই কর্মশালা আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমিকে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মশালায় ‘দেশবিরোধী প্রচারণার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির অতিথি হওয়া’ নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী ফেসবুকে কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানের ছবিসহ এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এই কি সেই আল-জাজিরার মুরাদ খান? যদি হয়ে থাকে, তবে বাংলাদেশ-বিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতার সাথে সংশ্লিষ্ট এই মুরাদ খান শিল্পকলার মঞ্চে কি করে বসল? কে তাকে বসাল? কে তার নেপথ্য কর্তা? আমি জানতে চাই। কর্মশালার আয়োজকরা এর দায় এড়াবেন কিভাবে?’ 

স্ট্যাটাসের পাশাপাশি একটি ভিডিও লিংক শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘সকলের অবগতির জন্য সময় টিভির একটি ইউটিউব লিংক শেয়ার করলাম, দয়া করে সবাই দেখবেন কে সেই মুরাদ খান।’

পুরো ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। সদরুজ্জামান চৌধুরীর স্ট্যাটাসের নিচে নাট্যব্যক্তিত্ব, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। 

সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ-বিরোধী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের হোতা ডেভিড বার্গম্যান ও আল-জাজিরার করা জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সেই রিপোর্ট সরকারের সর্বোচ্চ মহল গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়েছে বলেই জানি। কাজেই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের (মুরাদ খানকে অতিথি করা) তীব্র নিন্দা জানাই।’

আওয়ামী লীগ নেতা সদরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে থেকে রাষ্ট্রবিরোধী লোকদের অতিথি করার ধৃষ্টতা যারা দেখিয়েছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত। কারণ, এরাই বিশ্বাসঘাতকদের এজেন্ট। এদের রোধ করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বাধা পাবে।’

আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করা হয় এর প্রতিষ্ঠাতা এবং অভিনেতা ও নাট্যপরিচালক মামুনুর রশীদের সঙ্গে। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘মুরাদ খান নামে এক সময় আমাদের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে সম্প্রতি দেশে এসেছেন। তবে তিনি আল-জাজিরার প্রতিবেদনে কখনো কণ্ঠ দিয়েছেন কিনা আমার জানা নেই।’

প্রসঙ্গত, ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদন গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সম্প্রচার হলে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটি ভিত্তিহীন দাবি করে কঠোর ভাষায় এর প্রতিবাদ জানায়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭