ইনসাইড বাংলাদেশ

পদ্মা সেতু: যেভাবে হয়েছিল ষড়যন্ত্র


প্রকাশ: 26/05/2022


Thumbnail

পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান, অপেক্ষা উদ্বোধনের। কিন্তু পেছন ফিরলেই দেখা যায়, স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঘিরে সংগঠিত হয়েছিল নানা ষড়যন্ত্র। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সগৌরবে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা সেতু। কিভাবে সেই ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়েছিল তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।

পদ্মা সেতুর অর্থায়নে শুরুতে এডিবি, এরপর যোগ দেয় বিশ্বব্যাংক। উন্নয়ন সংস্থাগুলো যোগ দিতে থাকে অর্থায়নে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সিংহভাগ অর্থ দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি)। এরপর কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন থেকে সরে যেতে থাকে বিশ্বব্যাংকসহ থেকে অন্যান্য সংস্থাগুলো। তাদের একটার পর একটা আবদার রক্ষার চেষ্টা করেও বিশ্বব্যাংককে ফেরানো যায়নি পদ্মায়। এরপর জানা যায়, বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে ড. ইউনুসকে সরিয়ে দেয়ায় অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। তখন পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতি নিয়ে বেশ সরব হয়ে ওঠে দেশের শীর্ষ দুটি গণমাধ্যম প্রথম আলো-ডেইলি স্টার।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তারা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের প্রমাণ পেতে ‘ফোনে আড়ি পাতা তথ্য’ (ওয়্যার ট্যাপস) ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ২০১১ সালে তিনটি আবেদন করে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি)।

অন্টারিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ইয়ান নরডেইমার আদেশে ওই তিন আবেদনের বিষয়ে তার ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। এগুলোতে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গালগল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’ বলে মূল্যায়ন করেন তিনি। কল্পিত সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হতে সময় লাগেনি বেশিদিন। ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রায় দেন কানাডার আদালত। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ পায়নি কানাডার আদালত। তাই এই মামলার কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের সাবেক ৩ কর্মকর্তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

২০১২ সালের ২৫ জুলাই লন্ডনে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যখন (পদ্মা সেতুতে) পরামর্শ নিয়োগের বিষয় এলো, তখন একটা কোম্পানির জন্য তারা (বিশ্বব্যাংক) বার বার চাপ দিচ্ছিল সরকারকে এবং যোগাযোগমন্ত্রীকে। যেন ওই কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। এখন যদি আমি প্রশ্ন করি, বিশ্বব্যাংক কত পার্সেন্ট টাকা খেয়ে ওই কোম্পানির জন্য তদবির করেছে?

এ ছাড়াও ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন, পদ্মা সেতু এই আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। জোড়াতালি দিয়ে বানানো সেতুতে, কেউ উঠবেও না।

এরপর একের পর এক পদ্মা সেতু বিরোধী মন্তব্য আসতে থাকে বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে। রাজনৈতিক বিরোধিতার সুরে তাল মিলিয়ে ‘কান নিয়ে গেছে চিলে’ এমন রব তোলেন কয়েকজন সুশীলও।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার পদ্মা সেতু নিয়ে বলেছিলেন, দুর্নীতি আমাদের কীভাবে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে তার আরেকটি উদাহরণ এটি (পদ্মা সেতু)। জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

সরকার সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করায় দুঃখ পান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছিলেন, প্রথম অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব হলো অভিযোগ অস্বীকার করে যাওয়া। অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দাতাগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করতে পারেনি।

অপরদিকে, দুদকের বিচার করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছিলেন, দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল কোনো প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু কানাডার পুলিশ এসে এ দুর্নীতির প্রমাণ দিয়ে গেছে। এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত করার সামর্থ্য আছে কিনা দুদকের, সেটি নিয় আমার সন্দেহ রয়েছে। এ ঘটনার তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা তাদের আছে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এরপর সরকার নিজস্ব অর্থেই এ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের যে ক্ষতের জন্ম দেয় শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মার মূল সেতুর কাজ শেষ হওয়ায় তা দেশের সক্ষমতা আর শৌর্যের প্রমাণ হয়ে এখন দাঁড়িয়ে পদ্মার বুকে।

ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ড. ইউনূস ও মাহফুজ আনাম আমেরিকায় চলে যায়। তাঁরা স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায় ও হিলারির কাছে যায় এবং ইমেইল পাঠায়। হিলারী শেষ পর্যায়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে মিস্টার জলিল যিনি অ্যাসিসটেন্ট ডাইরেক্টর ছিলেন, তিনি শেষ কর্মদিবসে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিলেন। যাক একদিকে আমাদের সাপে বর হয়েছে। বাংলাদেশ যে নিজের অর্থে পদ্মা সেতু করতে পারে, তা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭