কালার ইনসাইড

কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি'র জন্মবার্ষিকী


প্রকাশ: 29/05/2022


Thumbnail

মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু। এরপর ছোটপর্দা কিংবা বড়পর্দা সব জায়গায় ছড়িয়েছেন আলো। অভিনয়গুণে যিনি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি হুমায়ুন ফরীদি। আমাদের অভিনয় জগতের জাদুকর কিংবা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। কিংবদন্তি এই অভিনেতার জন্মদিন আজ। 

দেখতে দেখতে আট'টি বছর পেরিয়ে গেল। তাকে হারাবার যন্ত্রণা আজও অটুট, আজও সতেজ।

জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে ৬০ বছর বয়সে গুণী এই মানুষের না ফেরার দেশে চলে যাওয়া কাঁদিয়েছে সবাইকেই। শুধু অভিনয় দিয়েই মানুষকে বিমোহিত করেছিলেন ডাকসাইটে এই অভিনেতা। তাকে বলা হয় অভিনেতাদের অভিনেতা, একজন আদর্শ শিল্পী। তার অভিব্যক্তি, অট্টহাসি, ব্যক্তিত্বের ভক্ত কে না ছিলেন!

তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সনদের প্রয়োজন অনুভব করেননি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য ছিলোনা জীবনভর। তার কাছে এ যেন ছিলো, দায়িত্ব পালন শেষে নিজের ঘরে ফেরার মতো বিষয়।

পুরো নাম হুমায়ুন কামরুল ইসলাম ফরীদি (হুমায়ুন ফরীদি)। বাংলাদেশের অভিনয় জগতের সবচে বর্নাঢ্য মানুষ৷ বাংলাদেশের অবিসংবাদিত অভিনেতা তিনি। মঞ্চ, টিভি আর চলচ্চিত্রে এরকম ভার্সেটাইল অভিনেতা একটিও নেই।

সেলিম আল দীনের ‘সংবাদ কার্টুন’-এ একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করে ফরিদী মঞ্চে উঠে আসেন। অবশ্য এর আগে ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জে মহল্লার নাটক ‘এক কন্যার জনক’-এ অভিনয় করেন। মঞ্চে তার সু-অভিনীত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘শকুন্তলা’, ‘ফনিমনসা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘মুন্তাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কেরামত মঙ্গল’ প্রভৃতি। ১৯৯০ সালে স্ব-নির্দেশিত ‘ভূত’ দিয়ে শেষ হয় ফরীদির ঢাকা থিয়েটারের জীবন।

টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে, নিখোঁজ সংবাদ, হঠাৎ একদিন, পাথর সময়, সংশপ্তক, সমুদ্রে গাংচিল, কাছের মানুষ, মোহনা, নীল নকশাল সন্ধানে, দুরবীন দিয়ে দেখুন, ভাঙ্গনের শব্দ শুনি, কোথাও কেউ নেই, সাত আসমানের সিঁড়ি, সেতু কাহিনী, ভবের হাট, শৃঙ্খল, জহুরা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, প্রতিধ্বনি, গুপ্তধন, সেই চোখ, অক্টোপাস, বকুলপুর কত দূর, মানিক চোর, আমাদের নুরুল হুদা প্রভৃতি।

হুমায়ুন ফরীদি বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনি বিকল্পধারার চলচ্চিত্রেও রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। নব্বইয়ের গোড়া থেকেই হুমায়ুন ফরীদির বড় পর্দার জীবন শুরু হয়।

বাণিজ্যিক আর বিকল্প ধারা মিলিয়ে প্রায় ২৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে প্রথম ছবি তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’। এরপর তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে ‘সন্ত্রাস’, ‘বীরপুরুষ’, ‘দিনমজুর’, ‘লড়াকু’, ‘দহন,’ ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘কন্যাদান’ (১৯৯৫), ‘আঞ্জুমান’ (১৯৯৫), ‘দুর্জয়’ (১৯৯৬), ‘বিচার হবে’ (১৯৯৬),‘মায়ের অধিকার’ (১৯৯৬) ‘আনন্দ অশ্র“’ (১৯৯৭), ‘শুধু তুমি’ (১৯৯৭), ‘পালাবি কোথায়’, ‘একাত্তুরের যীশু’, ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’, ‘মিথ্যার মৃত্যু’. ‘বিদ্রোহ চারিদিকে, ‘ব্যাচেলর’ (২০০৪), ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’ (২০০৪), ‘রূপকথার গল্প’ (২০০৬), ‘আহা!’ (২০০৭), ‘প্রিয়তমেষু’ (২০০৯) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন ফরিদী দুবার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮০'র দশকে। 'দেবযানী' নামের তার এক মেয়ে রয়েছে এ সংসারে। পরবর্তীতে বিখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে তিনি বিয়ে করলেও তাদের মধ্যেকার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৮ সালে।

এদিকে, মৃত্যুর ছয় বছরপর ২০১৮ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্মান দেয় এ অভিনেতাকে। মরণোত্তর একুশে পদক দিয়ে সম্মাননা জানানো হয় হুমায়ুন ফরীদিকে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭