কালার ইনসাইড

একজন হুমায়ুন ফরিদী ও তাঁর কিছু কালজয়ী উক্তি


প্রকাশ: 29/05/2022


Thumbnail

কিংবদন্তী অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী। নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা মঞ্চ- সবখানেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। ২০১২ সালে ফাগুনের রঙে বিষাদ ছড়িয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি। মারা যাওয়ার এতোদিন পরেও ভক্তদের মনে এখনো জীবিত আছেন তিনি। তার কথা এখনো নাড়া দেয় ভক্তদের মন। আজ ২৯ মে হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন। ভাষা আন্দোলনের বছর অর্থাৎ ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেঁচে থাকলে ৭০-এ পা দিতেন নন্দিত এই তারকা।


শুধু অভিনয় দিয়েই মানুষকে বিমোহিত করেছিলেন ডাকসাইটে এই অভিনেতা। তাকে বলা হয় অভিনেতাদের অভিনেতা, একজন আদর্শ শিল্পী। তার অভিব্যক্তি, অট্টহাসি, ব্যক্তিত্বের ভক্ত কে না ছিলেন! অনেকের কাছে তার ব্যক্তিজীবনের গল্পও বেশ অনুপ্রেরণার। তেমন তাঁর কয়েকটি  কালজয়ী কথা দেখে আসা যাক।

মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হুমায়ুন ফরীদি বলেছিলেন, মৃত্যুর মতো এতো স্নিগ্ধ, এতো গভীর সুন্দর আর কিছু নেই। কারণ মৃত্যু অনীবার্য, তুমি যখন জন্মেছো তখন মরতেই হবে। মৃত্যুর বিষয়টি মাথায় থাকলে কেউ পাপ করবে না। যেটা অনীবার্য তাকে ভালোবাসাটা শ্রেয়।

প্রেম নিয়ে হুমায়ুন ফরীদির সীমাহীন মুগ্ধতা ছিল। তিনি বলেছিলেন, প্রেমে পড়ার মতো এত আনন্দনায়ক কিছু কি আছে পৃথিবীতে? আমি এখনো একটা মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসি। নাম বলা ঠিক হবে না, ওর ক্ষতি হবে।

হুমায়ুন ফরীদির কাছে প্রেমের সংজ্ঞাও ছিল চমৎকার। তার ভাষ্য ছিল, প্রেম হচ্ছে স্বর্গীয়। প্রেমের যে অনুভূতি, এটা পবিত্র এবং স্বর্গীয়। প্রেমের চেয়ে ভালো বিষয় মানব ইতিহাসে নেই। আমি শুধু মানুষে মানুষে প্রেমের কথা বলছি না। একটা মানুষ বৃক্ষের সঙ্গে প্রেম করতে পারে, একটা মানুষ তার বাসার জানালার পাশে যে গাছটি আছে, সে গাছে যে দোয়েল পাখিটি বসে, ওই পাখির প্রেমেও পড়তে পারে। সাধারণত আমরা প্রেম বলতে বুঝি, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে এরকম না। যেমন আমাদের নবীর সঙ্গে আল্লাহ্‌র প্রেম, এটাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবে? এটাকে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব না। এটাকে শুধু হৃদয় থেকে অনুভব করতে হবে। প্রেম হচ্ছে এরকম।

প্রেম বলতে সাধারণ ভাষায় যেটা বোঝানো হয়, সেই প্রেম হুমায়ুন ফরীদির জীবনে প্রথম এসেছিল কৈশোরে। এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তখন আমার বয়স ১৪-১৫ বছর। প্রেমে পড়লাম এক গার্লস স্কুলের ম্যাডামের। যার বয়স আমার চেয়ে ২০ বছর বেশি। ওটা আমার প্রথম পড়া। এরপর বহুবার প্রেমে পড়েছি। প্রেমে পড়ার মতো আনন্দ বোধহয় আর কিছুতে নেই। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, কাউকে আঘাত দিয়ে প্রেমে পড়ার মতো গর্হিত কাজ পৃথিবীতে নেই।

ভালোবাসা নিয়ে হুমায়ুন ফরীদির আরেকটি কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ায়। তিনি বলেছিলেন, তুমি যখন কাউকে ভালোবাসবে, এক বুক সমুদ্র নিয়ে ভালোবাসতে হবে। তা নাহলে সে প্রেমের কোনো অর্থ নেই।


ফরীদির নাট্যাভিনয় থেকে চলচ্চিত্রে আসা ছিল অনেক নাটকীয়। দেশীয় চলচ্চিত্রের তখনকার বেহাল অবস্থা দেখে রূপালি পর্দার জন্য কাজ করবেন কিনা এ বিষয়ে দ্বিধায় ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সুবর্ণা মুস্তাফার অকুণ্ঠ সমর্থনে ও নিজের দৃঢ়তায় এক নতুন আঙ্গিক নিয়ে বড় পর্দায় আসেন ফরীদি। তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ তার অভিনীত প্রথম ছবি।

নব্বই দশকে বাণিজ্যিক ছবির পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘বীরপুরুষ’ ও ‘লড়াকু’ ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপরেই দেশীয় চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্র পায় এক অন্যমাত্রা। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছিল যে, একসময় মানুষ নায়কের পরিবর্তে তাকে দেখার জন্যই প্রেক্ষাগৃহে যেতো।

পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘অপহরণ’, ‘দুঃসাহস’সহ ২৮টি ছবির মধ্যে ২৫টিতেই রাখেন ফরীদিকে। তার অভিনীত ছবির তালিকায় আরও আছে ‘দহন’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘দূরত্ব’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘ত্যাগ’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘মাতৃত্ব’ ও ‘আহা!’র মতো ছবিতে অভিনয় করে এ দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনেন তিনি।

২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। বেঁচে থাকতে একুশে পদক পাননি এই শক্তিমান অভিনেতা। তবে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন তিনি।


হুমায়ুন ফরীদির ব্যক্তিজীবন খুব বেশি সুখের ছিল না। আশির দশকের শুরুর দিকে বিয়ে করেছিলেন মিনুকে। প্রথম সংসারে দেবযানী নামের এক মেয়েকে রেখে গেছেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন ফরীদি। ২০০৮ সালে সেই সম্পর্কেরও বিচ্ছেদ হয়। পরের সময়গুলো অনেকটা নিঃসঙ্গ কেটেছে এই শক্তিমান অভিনেতার।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭