ইনসাইড বাংলাদেশ

পদ্মা সেতু: স্বপ্ন পূরণে বাঁধা হতে পারেনি নকশা জটিলতাও


প্রকাশ: 03/06/2022


Thumbnail

পদ্মা সেতু। শুধু একটি সেতু নয়, একটি আবেগ, একটি গৌরবের নাম। প্রমত্তা পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে যেই সেতুটি এখন স্বাক্ষ্য দিচ্ছে বাংলাদেশের স্বাবলম্বী হওয়ার, বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার। জানান দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্পাত কঠিন মনোবল বিশ্বের দরবারে। দেশের মানুষের জন্য এতো বড় একটি সহস শেখ হাসিনা ছাড়া আর কে-ই বা দেখাতে পারেন? নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজটি সহজ ছিল না। একসময় আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নদীনির্ভর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর সড়ক যোগাযোগ গুরুত্ব পেতে থাকে। এ ক্ষেত্রেও বাধা ছিল নদ-নদী। যে কোনো সড়ক তৈরি করতে গেলেই ছোট-বড় নদী অতিক্রম করতে হতো। অনেক ফেরি চালু ছিল। যমুনা সেতু নির্মাণের আগে উত্তরাঞ্চলের মানুষ কখনও ভাবতেই পারেনি সকালে রওনা দিয়ে দুপুরে ঢাকা পৌঁছে, কাজ শেষ করে সেদিনই ফিরে আসবে। 

১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন করা হয়। সে সময়েই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য পদ্মায় সেতু নির্মাণের বিষয়টি সামনে আসে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল বাঙালির পদ্মা বিজয় অভিযান। বর্তমানে চলাচলের জন্য প্রায় প্রস্তুত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ৯৯ ভাগ কাজই শেষ হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ। আগামী ২৫ জুন দেশের কোটি মানুষের কাঙ্ক্ষিত এ সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে প্রমত্তা পদ্মার ওপর নির্মিত এই সেতু। ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষের যাতায়াত হবে আরও সহজ ও সময়সাশ্রয়ী।

এই সেতু এখন বাস্তব। পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এই সেতু তৈরি এতোটা সহজ ছিলো না। উত্তাল পদ্মার বুকে একটি সেতু দাঁড় করানো ছিলো অনেকটা কল্পনার অতীত। সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দান করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এই সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রও কম হয়নি। এখনও যে হচ্ছে না তাও নয়। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে এখন পদ্মা সেতু মানুষের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে অপেক্ষমান। এই পদ্মা সেতু তৈরিতে কম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। অনেক সময় মনে হয়েছে এই বুঝি আর এগোবে না পদ্মা সেতুর কাজ। বাড়ে বাড়ে বাঁধায় থমকে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আবারও কাজ শুরু হয়েছে। সেরকমই একটি সমস্যা শুরু হয় পদ্মা সেতুর নকশা নিয়ে। 

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ছয় নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। এরপর সাত ও ছয় নম্বর পিলারে তিনটি করে মোট ছয়টি পাইলের বটম সেকশনের কাজ করা হয়। কিন্তু এসব পাইল বসাতে গিয়ে নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর পাওয়া যায়। তখন দুটি পিলারের ছয়টি পাইলের টপ সেকশনের কাজ বন্ধ রাখা হয়। মাওয়া প্রান্তে কাজ বন্ধ রেখে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়। পরে আরও ১২টি পিলারের পাইল বসানোর সময় মাটির স্তরে কাদামাটি পাওয়া যায়। আগের নকশা অনুযায়ী এ ১৪টি পিলারের পাইলের সংখ্যা ছিল ৮৪। পরে আরও আটটি পিলারের জটিলতা দেখা দেয়।

সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই ইউকে লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞরা মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই করেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ২২টি পিলারের মধ্যে পাইলের সংখ্যা একটি করে বাড়ানো হয়। অন্যদিকে এসব পিলারে খাঁচকাটা পাইল বসিয়ে বিশেষ ধরনের সিমেন্টের মিশ্রণে নরম মাটি শক্ত করা হয়। কিন্তু ছয় ও সাত নম্বর পিলারে আগে থেকে ছয়টি পাইল বসে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েন বিশেষজ্ঞরা। এসব পাইল তুলে নতুন করে পাইল বসানোর কথাও ভাবা হয়। শেষ পর্যন্ত আগে থেকে বসে যাওয়া পাইলগুলো রেখেই ছয় ও সাত নম্বর পিলারের নকশা চূড়ান্ত করা হয়। অবশেষে নকশা জটিলতার পুরোপুরি অবসান হয় পদ্মা সেতুর। চূড়ান্ত করা হয় সেতুটির সবগুলোর পিলারের নকশা। নকশা চূড়ান্ত করার মাধ্যমে বড় সমস্যা কাটানো সম্ভব হয় পদ্মা সেতুর।

স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরে যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি হলেও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ফেরি ও লঞ্চের উপরই নির্ভরশীল ছিল। এ অবস্থায় পদ্মা সেতু জাতীয় উন্নয়নে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। এখন পদ্মা সেতুর প্রতীক্ষায় আছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় তিন কোটি মানুষ। পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হলে কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে যাবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে এই সেতু দেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু হয়ে উঠবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭