ইনসাইড বাংলাদেশ

পদ্মা সেতু: সৃষ্টি হতে যাচ্ছে যোগাযোগের নতুন মাইলফলক


প্রকাশ: 04/06/2022


Thumbnail

পদ্মা সেতু এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তবতা। দীর্ঘ প্রায় এক যুগের অক্লান্ত পরিশ্রম, নানা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এই বাস্তবতাকে একটু একটু করে বাস্তবে রূপ দান। সে এক বিশাল মহাযজ্ঞ। এক বিস্ময়কর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ নিজের টাকায় নির্মাণ করেছে স্বপ্ন সাধের পদ্মা সেতু। ১৮ কোটি মানুষের উচ্ছ্বসিত অপেক্ষার পদ্মা সেতু। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগের নুতন মাইলফলক এই পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন।

স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরে যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেমন উন্নতি হয়েছিল, ঠিক তেমনি দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ স্থাপনের এই পদ্মা সেতু যে এক বিরাট অবদানের নাম সেটা অনায়াসেই বলা যায়। পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হলে কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে যাবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি সড়ক পথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের দ্বার উন্মোচিত হবে। এই সেতু ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন। পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনা থেকে ঢাকার যাতায়াতের সময় তিন ঘণ্টা কমে আসবে। মাত্র চার ঘণ্টায় খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকায় যাওয়া যাবে। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে, তেমনি যাত্রার ব্যয়ও সাশ্রয় হবে। সব মিলিয়ে সুফল পাবে ২১ জেলার মানুষ। এখন মাওয়া-জাজিরায় পদ্মা নদী পাড়ি দিতে ফেরিতে দেড় থেকে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগে। আরিচা-পাটুরিয়া ঘাটেও যাত্রীদের বহু সময় নষ্ট হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুতে সেই সমস্যা থাকবে না। পদ্মা সেতু চালু হলে এ সময় বাঁচবে। সহজ হবে যোগাযোগ। বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনা থেকে ঢাকা যেতে সময় সাশ্রয় হবে। এখন ঢাকায় যেতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগে। ফেরি পারাপারের ওপর নির্ভর করে কত সময় লাগবে। ফেরিতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। সেতু চালু হলে টোল দিয়ে মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে পদ্মা নদী পার হওয়া যাবে। সে হিসেবে মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া যাবে। দেশের বৃহত্তম এ সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীসহ অন্যান্য অংশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। স্বপ্নের এ সেতু দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার গতিশীলতা বাড়াবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রফতানি ও আমদানি করতে উৎসাহিত হবেন।

দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাটশিল্প, যার অধিকাংশ খুলনা থেকে রফতানি হয়। পদ্মা সেতু হলে এ আয় আরও বাড়বে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বেনাপোল, দর্শনা ও ভোমরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের অর্থনীতিতে গতি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কাজে ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও সমস্যা নেই। পদ্মা সেতুকে ব্যবহার করে সেই সময়ে কোলকাতা পৌঁছানো সম্ভব হবে মাত্র ৪-৫ ঘন্টায়। এর ফলে অন্তত অর্ধেক সময় কমে আসবে। এক কথায় পদ্মা সেতু যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটন খাতে এক নতুন মাইলফলক তৈরি করবে। 

পদ্মা সেতু একটি আবেগের নাম। এই আবেগে তাড়িত হয়ে পদ্মার পাড়ের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার তাদের জমি দিয়েছেন পদ্মা সেতু তৈরিতে। তাদের স্বপ্ন ছিল পদ্মা সেতু হবে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে আর বেশি দেরি নেই। আর মাত্র ২১ দিন পরই খুলে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যেটি হবে বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭