ইনসাইড থট

টেকসই জীবনযাপন: চাই প্রকৃতির সাথে সম্প্রীতি


প্রকাশ: 05/06/2022


Thumbnail

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। প্রতি বছর ৫ জুন সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। এটি পৃথিবীকে সংরক্ষণ, পরিবেশগত কর্মকান্ড এবং রূপান্তরমূলক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখে। ২০২২ সালের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘একটাই পৃথিবী’ (Only One Earth), প্রকৃতির সাথে সম্প্রীতিতে টেকসই জীবনযাপনের উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করা। ৫০ বছর আগে ‘একটি পৃথিবী’ স্লোগান নিয়ে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছিল। পাঁচ দশক পরে, এটি এখনও সত্য কারণ পৃথিবী এখনও আমাদের একমাত্র বাড়ি এবং মানবজাতিকে অবশ্যই এর সীমিত সম্পদগুলো রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং টেকসই জীবনযাপনের জন্য নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং চাহিদা ও পছন্দগুলোর রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিশ্ববাসীকে একযোগে কাজ করতে হবে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ধারণাটি ৫০ বছর আগে ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জাতিসংঘের মানব পরিবেশ সম্মেলনে জন্ম হয়েছিল। এটি এই উপলব্ধি থেকে জন্ম গ্রহণ করেছিল যে বায়ু, মাটি এবং পানি রক্ষার জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে, যার উপর আমরা সবাই নির্ভরশীল। ১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস বার্ষিকভাবে পালিত হচ্ছে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির পরিবেশগত মাত্রার অগ্রগতি তুলে ধরার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের মাধ্যমে পৃথিবীকে রক্ষা এবং পুনরুদ্ধার করার জন্য বিশ্বব্যাপী সমষ্টিগত, রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস আয়োজক দেশ সুইডেন। সেখানে ২ ও ৩ জুন জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) এবং অংশীদারদের সহায়তায় ‘স্টকহোম+৫০: সকলের সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্থ গ্রহ - আমাদের দায়িত্ব, আমাদের সুযোগ’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরা হয়েছে। 

বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন আজকের বিশ্বে জিডিপি সমৃদ্ধি পরিমাপের সঠিক উপায় নয়। বিশ্বে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের উত্তরের অংশ হল অর্থনৈতিক শক্তির পরিমাপ হিসাবে জিডিপি ত্যাগ করা। তিনি এটিকে একটি অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম হিসাবে চিহ্নিত করেছেন যা ‘দূষণ এবং বর্জ্যকে পুরস্কৃত করে’ এবং জি-২০ সরকারগুলিকে ‘একটি বৃত্তাকার এবং পুনর্জন্মমূলক অর্থনীতিতে স্থানান্তরিত হওয়ার’ আহবান জানিয়েছেন। আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন “আমাদের অবশ্যই পরিবেশের উপর সত্যিকারের মূল্য দিতে হবে এবং মানুষের অগ্রগতি এবং কল্যাণের পরিমাপ হিসাবে মোট দেশীয় পণ্যের বাইরে যেতে হবে। আমাদের ভ’লে যাওয়া চলবে না যে আমরা যখন একটি বন ধ্বংস করছি, তখন আমরা জিডিপি তৈরি করছি। যখন অতিরিক্ত মাছ খাই, তখন আমরা অতিরিক্ত জিডিপি তৈরি করি।”

মহাসচিব পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় ১৭টি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাসÍবায়নের জন্য প্রতিটি রাষ্ট্রকে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। তিনি ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্য নির্গমন অর্জনের জন্য আরও প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার  উপর জোর দেন। তিনি জি-২০ নেতৃবৃন্দকে কয়লা অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলা, ২০৩০ সালে ওইসিডি (Organisation for Economic Co-operation and Development) দেশগুলিকে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে অন্য সকলকে সম্পূর্ণ ফেজ-আউটের আহবান জানান । জীবাশ্ম জ¦ালানীতে অর্থায়ন ত্যাগ করে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানীতে বিনিয়োগের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি আহবান জানান।

মহাবিশ্বে কোটি কোটি ছায়াপথ, আমাদের ছায়াপথে রয়েছে কোটি কোটি গ্রহ, কিন্তু আছে একটাই পৃথিবী। আসুন এটির যত্ন নেওয়া যাক। জাতিসংঘের মতে বর্তমানে পৃথিবী তিনটি সংকটের মুখোমুখি: জলবায়ু খুব দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, বাসস্থানের ক্ষতি এবং অন্যান্য চাপে তিন বিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ এবং আনুমানিক এক মিলিয়ন প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে, দূষণ আমাদের বায়ু, ভ’মি এবং পানিকে বিষাক্ত করে চলেছে, যা প্রতি বছর প্রায় নয় মিলিয়ন অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের অর্থনীতি এবং সমাজকে তাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং প্রকৃতির সাথে আরও সংযুক্ত করার মাধ্যমে রূপান্তর করা। আমাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীর ক্ষতি করা থেকে, এটি নিরাময়ের দিকে যেতে হবে। আশার খবর হল সমাধান এবং প্রযুক্তি বিদ্যমান এবং ক্রমবর্ধমান সাশ্রয়ী মূল্যে। 

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী সময় ফুরিয়ে আসছে এবং প্রকৃতি জরুরী অবস্থায় চলে এসেছে। এই শতাব্দীতে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হলে আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনকে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে এই দশকের মধ্যে বায়ু দূষণ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে জলজ বাস্তুতন্ত্রে প্রবাহিত প্লাস্টিক বর্জ্য প্রায় তিনগুণ হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদেরকে জরুরীভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে, কেবল একটাই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে টেকসই জীবনযাপনের উপর ফোকাস করা, যা সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। 

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বায়ু দূষণ এবং প্লাস্টিক  বর্জ্যরে ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক সমুদ্রে জমা হয়। এসব বর্জ্য সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হওয়ার আগে এক হাজার বছর পর্যন্ত স্থায়ী অবস্থায় থাকতে পারে। সমুদ্রে প্লাস্টিক অতি ক্ষুদ্র টুকরায় ভেঙ্গে যায়। এসব টুকরা মাছ খায় কিন্তু হজম হয় না। মাছের পেটে জমা হতে থাকে এবং তা খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। ১৯৫০ দশক থেকে বিশ্বে উৎপাদিত প্লাস্টিকের পরিমাণ মোট ৮.৩ বিলিয়ন মেট্রিক টন। যার মধ্যে বর্জ্য হচ্ছে ৬.৩ বিলিয়ন মেট্রিক টন। এবর্জ্যরে নয় শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা এবং বার শতাংশ পোড়ানো হয়েছে। বাকি বর্জ্য ভ’মি ভরাট বা প্রাকৃতিক পরিবেশে ফেলা হয়েছে।

প্লাস্টিক দূষণ আমাদের নদী, সাগর ও ভ’মিকে বিষাক্ত করছে, সামুদ্রিক জীবন ক্ষতিগ্রস্থ করছে  এবং জনস্বাস্থ্য, জনজীবন ও পরিবেশে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত প্লাস্টিকের বোতল ও বিভিন্ন সামগ্রী এবং পলিথিন ব্যাগের অধিকাংশই পুনর্ব্যবহার, পুনঃচক্রায়ন না করে  প্রাকৃতিক পরিবেশে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। যা পরবর্তীতে খাল, নদী, সমুদ্রে জমা হচ্ছে। সেখান থেকে জলজ প্রাণী তা গ্রহণ করছে। এসব প্রাণীর মাধ্যমে তা আমাদের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে।

জনজীবন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সরকার আইন করে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু এই আইনের কোন বাস্তবায়ন নেই। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় এক হাজার দুই শত কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরী হচ্ছে। এগুলোর বেশীর ভাগই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। শুধুমাত্র ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই কোটির বেশী পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। এগুলো দ্বারা ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে সকল বা যে কোন প্রকার পলিথিন শপিং ব্যাগ, বা এরূপ সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানী, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন সহজলভ্য বিকল্প তৈরি না হওয়ায় পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীকে বিনয়ের সাথে বলতে চাই পলিথিন নিষিদ্ধের আইন প্রণয়নের পর তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ফলে বিকল্পের চাহিদা দেখা দেয় এবং তা বাজারে চলে আসে। আইনের প্রয়োগে শিথিলতায় বিকল্পের চাহিদা কমতে থাকে এবং ধীরে ধীরে তা শূণ্যের কোটায় নেমে আসে। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন বন্ধ হলে বিকল্পের চাহিদা সৃষ্টি হবে এবং তা বাজারে চলে আসবে। যে সব সুবিধার অপব্যবহার করে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন করা হচ্ছে তা দেখভাল করার দায়িত্বও তাঁর মন্ত্রণালয়াধীন পরিবেশ অধিদপ্তরের।

পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের উপর জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তায় বর্তমানে সারা দেশে পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, সততা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং জবাবদিহিতার অভাবে বর্তমানে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলা। পাশা পাশি রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব। 

বাংলাদেশ পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধকারী প্রথম দেশ হিসাবে বিশ্ববাসীর প্রসংশা কুড়িয়েছে। পলিথিনের বিকল্প হিসাবে জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে কাগজের ব্যাগ, প্যাকেট ও ঠোঙা, কাপড়ের ব্যাগ, চটের ব্যাগ, পাটের বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে চলে আসে। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে এসব বিকল্পের পাইকারি দোকান গড়ে ওঠে। এছাড়াও জনগণ বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন। বিকল্প তৈরিতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে গ্রামীন নারীদের। পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এর ফলে জনজীবন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে। আইন প্রয়োগে শিথীলতা এবং জনসচেতনতা ধরে রাখার ব্যর্থতার কারণে পলিথিন সমহিমায় আবার তার পূর্বের অবস্থান ফিরে আসে। এমনকি আগের চেয়েও বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এবছরসহ গত কয়েংক বছর একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা মহানগরীতে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তার অন্যতম প্রধান কারণ পলিথিন প্লাস্টিক। এগুলো পানি চলাচল ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখে।

আসুন আমরা জনগণ বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে বাজারে যাই, খাদ্য সরবরাহবারীকে নন-প্লাস্টিক প্যাকেজিং ব্যবহারে চাপ প্রয়োগ করি, পানির বোতল কেনা এড়িযে চলি, নিজের বোতল সঙ্গে রাখি, প্লাস্টিক কাটলারি বর্জন করি। নিজেদের এবং পরবর্র্তী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে পরিবেশ সংরক্ষণের সংগ্রামকে আরো বেগবান করতে হবে, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রতিদিনই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমাগতভাবে ৮ বিলিয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে এবং আমরা আমাদের বর্তমান জীবনধারা বজায় রাখতে ১.৬ পৃথিবীর সমতুল্য সম্পদ ব্যবহার করছি। আমাদের জীবনধারা সমস্ত গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের দুই তৃতীয়াংশের সাথে যুক্ত। গবেষণায় দেখা যায় যে টেকসই জীবনধারা এবং আচরণ ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের নির্গমন ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ কমাতে পারে। টেকসই ব্যবহার এবং উৎপাদন অর্থনৈতিক উন্নয়নকে চালিত করতে পারে, জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রশমিত করতে পারে, স্বাস্থ্য ও দূষণকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং দারিদ্র্য দূর করতে সাহায্য করতে পারে। ২০৬০ সালের মধ্যে নি¤œ ও মাঝারি আয়ের দেশগুলিতে ১১ শতাংশ এবং উচ্চ আয়ের দেশগুলিতে ৪ শতাংশ সম্ভাব্য আয় বৃদ্ধি পাবে।

আমাদের এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে উন্নত বিশ্বের ভোগবিলাসী জীবনের লাগাম টেনে ধরতে হবে, উন্নয়নশীল বিশ্বকে উন্নত বিশ্বের ভোগবিলাসী জীবনের প্রতিযোগীতা থেকে সরে আসতে হবে এবং স্বল্পোন্নত ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জীবনমান উন্নয়নে উন্নত বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমি হ্রাস, নদী-খাল-বিল-হাওর দখল-ভরাট-দূষণ, বনাঞ্চল দখল-হ্রাস, ভ’গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা, পানি ও বায়ু দূষণ এর বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন ও পরিবেশকে পরস্পরের মুখোমুখি দাড় করানো কোনোভাবেই সমীচিন নয়। উন্নয়ন ও পরিবেশ একে অন্যের সম্পূরক, পরিপূরক। পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা হলে তা টেকসই হবে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনবে।

এমুহূর্তটি আমাদের সকলের - বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের। আমরা সময় ফিরিয়ে দিতে পারি না। তবে আমরা গাছপালা জন্মাতে পারি, আমাদের শহরগুলো সবুজ করতে পারি, আমাদের বাগানগুলো পুননির্মাণ করতে পারি, আমাদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন করতে পারি এবং নদী ও উপক’ল পরিষ্কার করতে পারি। জীবন ও জীবিকার জন্য প্রকৃতি ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় আমাদের প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ এবং সর্বস্তরের জনগণের বিশেষ করে যুব সমাজের সক্রিয় অংশ গ্রহণ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭