ইনসাইড এডুকেশন

ব্যাগের বোঝায় ক্লান্ত শৈশব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/01/2018


Thumbnail

প্রতিটি শিশুই অফুরন্ত সম্ভাবনাময়। তাদের প্রতিভার যথাযথ বিকাশের জন্য প্রয়োজন যেমন বাবা-মায়ের ভূমিকা, তেমনি প্রয়োজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের, যিনি সহজেই শিশুর মন-মেজাজ গভীরভাবে উপলব্ধিতে আনতে পারেন। যাতে করে তারা শ্রেণীকক্ষে একটি আনন্দঘন পরিবেশে শিখন-শেখানো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রাথমিক স্তরে শিশুর শিক্ষা অর্জনের পথ যদি হয় মসৃণ, তবে তা পরবর্তী শিক্ষাজীবনে শক্ত ভিত হিসেবে কাজ করে।আমাদের দেশে শিশুর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় পাঁচ বছর বয়স থেকে। ফলে, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকালেই শিশুর সঙ্গে বিদ্যালয় পরিবেশের পরিচিতি ঘটে। এখানে শিক্ষকের সাহচর্য, শ্রেণীর সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচয় এবং বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুমনের নানা কৌতুহল ও ভীতি দূর হয়।

শিশুরা একটি দেশের আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু আমাদের দেশের শিশুরা কি সে অর্থে আগামীর ভবিষ্যৎ হিসেবে বেড়ে উঠছে? আমাদের অনেক শিশুর বিদ্যা অর্জনের পথে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। এর মধ্যে স্কুলব্যাগ অন্যতম। সময় পরিক্রমায় এটি এখন তাদের জন্য বোঝাস্বরূপ। এনসিটিবি কর্তৃক নির্দিষ্ট পাঠ্যবই, প্রয়োজনীয় উপকরণের বাইরেও অনেক ওজনের ডায়েরি, গাইড বই, অতিরিক্ত শিট (নতুন প্রবর্তিত), অতিরিক্ত খাতা ইত্যাদির চাপে মূলত ব্যাগের ওজন বেড়ে যায়। যার ভার শিশুদের প্রতিনিয়ত বইতে হয়।বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে শিশুরা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

আসলে একথা ঠিক যে, শিশুশ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ওপর বেশি বইয়ের ব্যাগের বোঝা চাপিয়ে দেয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। কেননা শিশুরা প্রথমত শিখবে কোন কিছু করার মাধ্যমে। আর প্রাথমিক স্তরে শিশুরা কতটুকু শিখবে বা জানবে, তা প্রাথমিক স্তরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধিক মুনাফার আশায় তথাকথিত শিক্ষায় দৌড়ের কথা বলে শিশুর বয়স ও মননের কথা বিবেচনায় না নিয়ে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেয়। ফলে বিদ্যালয়গামী শিশুটিকে সবচেয়ে বেশি মানসিক ও শারীরিক চাপ পোহাতে হচ্ছে। সে শিশুটি শুধু স্কুল আওয়ারেই ব্যাগের বোঝা নিয়ে বিদ্যালয়ে থাকছে, এমনটি নয়। বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর আগে কিংবা কর্মঘণ্টা শেষে তাকে আবার করতে হচ্ছে নানা রকম কোচিং।

সন্ধ্যার পর হয়তো আবার বাসায় আসে গৃহশিক্ষক। উদ্দেশ্য একটাই তা হলো, পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেতেই হবে। এই প্রতিযোগীতায় দৌড়াতে গিয়ে এখনকার শিশুরা যেন ভুলেই গেছে উন্মুক্ত পরিবেশে খেলাধুলার কথা, ঘুরে বেড়ানোর কথা, কিংবা চিত্তবিনোদনের কথা। ফলে শিশুরা হয়ে গেছে আত্মকেন্দ্রিক। তাদের আন্দময় শৈশব যেন স্কুল আর কোচিংয়ের ব্যাগের বোঝায় ক্লান্ত শৈশবে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সরকারের পক্ষ থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়, যেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল, শিশুরা যে ব্যাগ বহন করবে, তার ওজন শিক্ষার্থীর ওজনের এক-দশমাংশের বেশি হবে না।

স¤প্রতি, আবার শিক্ষার্থীর ব্যাগে সরকার অনুমোদিত বই ও উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু না দিতে সবাইকে সতর্ক করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। উদ্যোগটির যদি যথাযথ বাস্তবায়ন হয়, তবে তা হবে শিশুদের স্বার্থে কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক। তবে এটির সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন অভিভাবক, শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ সবার আন্তরিকতা ও সচেতনতা সেই সাথে কর্তৃপক্ষের যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা। তবেই এই সমস্যার সমাধান দ্রæত হবে বলে আমরা মনে করি।

বাংলা ইনসাইডার

 

 

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭