প্রিয় মিল্টন,
মৃত্যুর এত বছর পরে আজ নিজেকে বড় তৃপ্ত মনে হচ্ছে। ‘একই মিথ্যা বারংবার বললে সেটি সত্যতে রূপান্তরিত হয়’ তত্ত্বের প্রবর্তন করে পৃথিবীতে আমি মিথ্যেকে যে শিল্পে পরিণত করেছিলাম, যোগ্য উত্তরসূরির অভাবে সেই তত্ত্ব প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। এই নিয়ে নরকে আমার প্রায়ই মন খারাপ হতো। লিডার হিটলারও এই নিয়ে সুযোগ পেলেই আমাকে খোঁচা দেন।
মিথ্যেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবার জন্য তার উপস্থাপনের ধরণটাও জরুরি। এমন মসৃনভাবে মিথ্যাকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে হবে যে দশবার নয়, একবার শুনলেই মানুষ তা বিশ্বাস করবে। সে ক্ষেত্রে তোমার দেশের মির্জা ফখরুল সাহেব বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে অদ্বিতীয়, চ্যাম্পিয়ন। গোয়েবলসের তত্ত্বকে তিনি প্রায়োগিকতার মুন্সিয়ানায় আরো উচ্চতর ধাপে নিয়ে গেছেন।
তোমাকে একটা ভিডিও ক্লিপ পাঠালাম। তুমি খেয়াল করলে দেখবে সেখানে মির্জা ফখরুল সাহেব কী চমৎকারভাবে পদ্মা সেতুর প্রথম উদ্বোধনের ব্যাপারে মিথ্যে তথ্য পরিবেশন করেছেন। অথচ উপস্থাপনার গুনে তাকেও সত্য বলে মনে হচ্ছে। আমার ডায়েরিতে লেখা আছে, ২০০১ সালের ৪ জুলাই সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। অথচ ফখরুল সাহেবের কথা শুনে তার নিপুন মিথ্যেটাকেই আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল।
কাল বিকেলে ইবলিশ আংকেলের কথায় অবশ্য মনটা একটু খারাপ হয়েছে। তোমাকে পাঠানো মির্জা ফখরুলের ভিডিও ক্লিপটা নিয়ে ফেসবুকে চ্যাংড়া পোলাপানগুলো নাকি ইতোমধ্যেই ট্রল করা শুরু করেছে। এটা কিন্তু খুব খারাপ হচ্ছে। যে দেশের মানুষ ফখরুলের মত বর্ণিল মিথ্যেবাদীকে সম্মান প্রদর্শন করতে জানে না, তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে আমি সন্দিহান!
অনেক ভেবে তোমাকে চিঠিটা লিখলাম। শুনেছি তোমার ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় নাকি সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আছেন। আমি নিশ্চিত, তোমার স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আমার মনোভাবের কথা দ্রুত তাদের কাছে পৌঁছে যাবে।
তুমি নিয়মিত কবিতা লিখো। তরুণীদের নিয়ে তোমার লেখা কবিতাগুলো আমার খুব ভালো লাগে। কলকাতার কবি অমিত গোস্বামী তো তোমার কবিতার খুব প্রশংসা করেন। তুমি হয়তো আমাকে আজো খুব অপছন্দ করো, কিন্তু তুমি তো জানোই, লিডার হিটলার এবং আমি বরাবরই শিল্পের খুব ভক্ত ছিলাম এবং আজো আছি।
মির্জা ফখরুলকে আমার আদর পৌছে দিও। চিয়ার্স!
ইতি
তোমার অপছন্দের গোয়েবলস
[সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন নিয়ে চরম মিথ্যাচার করেছেন। তারই প্রেক্ষিতে ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টনের এই ভিন্নধর্মী চিঠি।]