ইনসাইড গ্রাউন্ড

বিশ্বকাপ ও আমাদের ফুটবল


প্রকাশ: 08/06/2022


Thumbnail

বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপ। ৫১টি দেশ ঘুরে এবারের আয়োজক কাতারে যাবে বিশ্বকাপের ট্রফি। ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফি বাংলাদেশে আসবে বুধবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবে ট্রফিটি। ৬০ ঘণ্টার বাংলাদেশ সফরে ট্রফি নিয়ে থাকবে নানা আয়োজন। অনেকে কাছ থেকে দেখবেন, ছবি তোলার সুযোগ পাবেন। আর কোটি মানুষ গণমাধ্যমে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখবে দৃষ্টিনন্দন এই ট্রফিটি। সময় শেষে অন্য দেশে চলে যাবে ট্রফি। বাংলাদেশের মানুষের মনে রেখে যাবে ছোট্ট অথচ গভীর ছাপ। কখনও কি মনে হয়েছে, এই ট্রফি একদিন বাংলাদেশ জয় করে আনবে? এতটা ভাবার দুঃসাহসও আমাদের হয় না।

অথচ প্রতি চার বছর পর পর ফুটবল বিশ্বকাপের ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্যা আর্থ’ নিয়ে আমরাও কম মাতামাতি করি না। ভিনদেশে বিশ্বকাপ আয়োজনের উত্তাপে আমরা উদ্বেলিত হই। বাড়ির ছাদে পতাকা, গায়ে জার্সি, দেয়ালে প্রিয় দল ও তারকার ছবি, লেখনির পাশাপাশি চলে মিছিল। পাড়া-মহল্লা, অফিস-আদালত সর্বত্র চলে তর্কযুদ্ধ। কখনও হাতাহাতি, ফাটাফাটি। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় এখন যুক্ত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। ভক্ত-সমর্থকদের বাতচিতে যোগ হয়েছে নতুন আঙ্গিক, নতুন মাত্রা। কোন দুর দেশে বিশ্বকাপের আয়োজন, অথচ ঘুম হারাম বাংলাদেশিদের। এটাই আমাদের ফুটবল প্রেম। 

একটা সময় আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ ম্যানে অঘোষিত যুদ্ধ। দেশের সেই ফুটবল এখন সোনালী অতীত। নামে দল থাকলেও কোন অজানা কারণে দেশি ফুটবলের সেই উন্মাদনা হারিয়ে গেছে সুদূরে। তবে, বিদেশি লিগ বা বিশ্বকাপ নিয়ে বরং আমাদের মাতামাতি শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখনকার জেনারেশন বিশ্ব ফুটবলের নাড়ি-নক্ষত্রের খোঁজ রাখে। ভীনদেশি লিগ ফলো করে। রাত জেগে ম্যাচ দেখে। চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে জানে। মোটকথা ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশিদের আগ্রহ বা জানাশোনা কোন অর্থেই কম নয়। কিন্তু সেই তারাই কিন্তু দেশি ফুটবলের খবর রাখেন না বললেই চলে। কী কারণে এই বৈষম্য? 

ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে দেশি-বিদেশি বলে কোন ফারাক নেই। মূল বিষয় হচ্ছে আমাদের ফুটবলের দৈন্যতা। আমাদের ফুটবল নিয়ে বলার মত কোন কিছুই নেই। যা আছে প্রায় সবই নেতিবাচক। ম্যাচ পাতানো, বাজে রেফারিং, মাঠে ও মাঠের বাইরের রাজনীতি। মাঝে মধ্যে কিছু চমক সৃষ্টি হয়। দেশে-বিদেশে কিছু ভাল ম্যাচ বা নতুন উদ্যমী মুখ দেখা যায়, কিন্তু যথাযথ পরিচর্যার অভাবে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় অনেক সম্ভাব্য তারকা। দেশি ফুটবলে এই বিষয়টি রীতিমত ঐতিহ্যের পর্যায়ে চলে গেছে। এজন্য জাতীয় ফুটবলের এতই খারাপ যে, এখন বিনা টিকিটেও দর্শকেরা স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যান না। অনেক ম্যাচে তো ক্লাব কর্তারা ভাড়ায় লোক আনেন যাতে ফুটবলাররা অন্তত গ্যালারিতে মানুষ দেখে খেলায় উৎসাহ পান!

বাংলাদেশে ফুটবলে উন্নয়ন বলতে বোঝানো হয় বিদেশি কোচিং স্টাফ আনা, কিছু টেকনিক্যাল কাজ, আর ঘরোয়া লিগে বিদেশি খেলোয়াড় ভাড়া করা। মাঠ বা খেলোয়াড় তৈরির দিকে খুব একটা মনোযোগী নয় বাফুফে। কর্মকর্তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে নির্বাচন আর কোচ বদল করা। ডিডো, ক্রুসিয়ানি, জর্জোভিচ, টম, ক্রুইফ, জেমি—অনেক নামী কোচ এসেছেন আর হারের দায় নিয়ে বরখাস্ত হয়েছেন। কোন দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি বাফুফে। অথচ বড় বড় গালগল্পের ভাঙ্গা রেকর্ড শুনিয়ে চলেছেন যুগের পর যুগ। কয়েক বছর আগে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বড় গলায় বলেছিলেন, ২০২২ বিশ্বকাপে খেলার লক্ষ্য বাংলাদেশ দলের। ২০২২ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে অংশগ্রহণকারী দলের প্রীতি ম্যাচ চলছে। আর বাংলাদেশ ফুটবল দল এখন কোথায়?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭