ইনসাইড গ্রাউন্ড

ফুটবলের ব্রাজিলে ক্রিকেটের ‘নিরব বিপ্লব’


প্রকাশ: 09/06/2022


Thumbnail

ফুটবল প্রসঙ্গ আসলেই নাম আসে ব্রাজিলের। পাঁচ বারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের দেশে ফুটবলই প্রধান খেলা তাতে সন্দেহ নেই। তবে সেখানে ক্রিকেট যে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তা সাধারণত কারও চিন্তায় আসে না। ক্রিকেটের সেই মরুতেই ফুল ফুটিয়েছেন ম্যাট ফেদারস্টোন। 

ইংল্যান্ডের সাবেক এই ঘরোয়া ক্রিকেটার ২০০০ সালে পরিবার নিয়ে ব্রাজিলে বসবাস শুরু করেন। ব্রাজিলের ছোট্ট শহর পোকোস দে কালদাসের স্থানীয় তরুণদের নিয়ে সে সময় শুরু করেছিলেন ক্রিকেট খেলা। তাঁর উদ্যোগেই ব্রাজিলে এখন পাঁচ হাজারের বেশি ক্রিকেটার তৈরি হয়েছে। ১ লাখ ৭০ হাজার জনসংখ্যার এই শহরে ঘটনাক্রমে দেখা হয় লুইজ রবার্তো ফ্রান্সিসকোর সাথে। ফেদারস্টোন তাকে জানান যে ক্রিকেট ব্যাট বানাতে পারেন এরকম কাউকে তিনি খুঁজছেন। ব্যাট দেখে লুইজ নিজেই সেটি বানানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেলেন। তারপরই শুরু হয় এই কর্মকাণ্ড। তবে লুইজ নিজেও বোধহয় ভাবতে পারেননি যে আস্ত একটা ক্রিকেট ব্যাটের কারখানাই তিনি বানিয়ে ফেলবেন।   

দক্ষিণ পূর্ব ব্রাজিলে মিনাস গেরাইস রাজ্যের ছোট্ট শহর পোকোস দে কালদাস। তারই এক কোণে চলছে লুইজ রবার্তো ফ্রান্সিসকোর ধ্যানযজ্ঞ। তার ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানার নাম দিয়েছেন ‘রয়্যাল ওয়ার্কশপ। সাম্বা ফুটবলের দেশে তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট ব্যাট।  

৫১ বছর বয়সী ফেদারস্টোন তার ১৯ সহযোগী নিয়ে ক্রিকেটের প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন ব্রাজিলে। বর্তমানে তাদের ৬৩টি কমিউনিটি ইয়ুথ প্রোগ্রামের কারণে ব্রাজিলে এখন পাঁচ হাজারের বেশি পেশাদার ক্রিকেটার তৈরি হয়েছে। দেশটির জাতীয় নারী ক্রিকেট দল দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ পাঁচটিতেই জিতেছে। ২০০২ সালে আইসিসি’র সদস্যপদ পায় ব্রাজিল। ২০০৬ সালে সুরিনামে অনুষ্ঠিত আইসিসি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। ২০০৯ সালের আইসিসি আমেরিকাস চ্যাম্পিয়নশিপ ডিভিশন থ্রি টুর্নামেন্টে বেলিজ, চিলি ও পেরুর বিপক্ষে সবকটি ম্যাচে জেতে। এর ফলে তারা আইসিসি আমেরিকাস চ্যাম্পিয়নশিপ টু এর টিকিট পায়। ২০১৯ সালে সাউথ আমেরিকান ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে পেরুকে হারিয়ে নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয় পায় ব্রাজিল। এভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দ্রুতই উন্নতি করছে ব্রাজিল ক্রিকেট।

করোনা মহামারিতে ফেদারস্টোনের ক্রিকেট কর্মসূচিতে বাধা পড়ে। করোনা মহামারিতে সীমান্ত বন্ধ হয়ে গেলে আটকে যায় ব্যাটের সরবরাহ। ঠিক তখনই ফেদারস্টোন খোঁজ পান ফ্রান্সিসকোর। অবসরপ্রাপ্ত এই ইলেক্ট্রিশিয়ান পোকোস দে কালদাসে পরিচিত সকল কাজের কাজি হিসেবে। তাকেই ডেকে পাঠান ব্রাজিলের ক্রিকেট কর্তা। জিজ্ঞেস করেছিলেন, ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করতে পারে, এমন কাউকে দরকার তার। ফ্রান্সিসকোকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মেনে নিয়েই শুরু তার।

তবে কাজটা সহজ ছিল না মোটেও। জীবনে কখনো ব্যাট ছুঁয়েও দেখেননি, তার কাঁধেই কি-না পড়ল ব্যাট বানানোর দায়িত্ব! তার সঙ্গে যোগ করুন ব্রাজিলে ব্যাট তৈরির যন্ত্রেরও অভাবকে। সব মিলিয়ে কাজটা কঠিন হচ্ছিল ক্রমেই।

সমাধান পেলেন ইউটিউবে। নিজে প্রথমে বানালেন ব্যাট তৈরির যন্ত্র। এরপর মন দিলেন আসল কাজ, ব্যাট তৈরিতে। শুরুতে জানতেন না কোন কাঠের ব্যবহার চলবে তাতে। অনেক রকমের কাঠ ব্যবহার করলেন। অনেক মাসের ট্রায়াল অ্যান্ড ইরোরের পর তিনি ও ব্রাজিল ক্রিকেট থিতু হলো পাইন কাঠে। শেষমেশ নিজের উডওয়ার্কিং ওয়ার্কশপটাকে রূপ দিলেন ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানায়। 

ফ্রান্সিসকো এখন পাঁচ ঘণ্টায় বানিয়ে ফেলতে পারেন আস্ত এক ক্রিকেট ব্যাট। প্রতিটির দাম পড়ে ১০০ ব্রাজিলিয়ান রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় দুই হাজার টাকার কাছাকাছি। বাইরে থেকে শীর্ষমানের ক্রিকেট ব্যাট আনলে খরচটা বেড়ে যেত ৭০ গুণ, ফ্রান্সিসকোর কল্যাণে সেটাও এক ঝটকায় কমিয়ে ফেলেছে ব্রাজিল ক্রিকেট।

ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রিকেট। কদর বাড়ছে ফ্রান্সিসকোর ব্যাটেরও। ব্যাটের পাশাপাশি এখন স্টাম্প আর ফোল্ডেবল ক্রিকেট চেয়ারও বানাচ্ছেন তিনি। অনেকটা নীরবেই ব্রাজিলে ছড়িয়ে পড়ছে ক্রিকেট। ফেদারস্টোনের হাত ধরে শুরু। মশলা যোগাচ্ছেন ফ্রান্সিসকো। কে জানে, এক সময় হয়ত ক্রিকেট বিশ্বকাপেও দাপট দেখাবে ফুটবলের হলুদ-নীল জার্সির দেশটি!



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭