ইনসাইড পলিটিক্স

বাজেট প্রস্তাবিত: বিরোধীতার স্বার্থেই কি বিরোধীতা?


প্রকাশ: 10/06/2022


Thumbnail

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ প্রতিপাদ্য ঠিক করে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্বাধীনতার পরবর্তী দেশের জন্য (১৯৭২-৭৩) অর্থবছরের প্রথম বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। এখন সেই বাজেটের পরিমাণ ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। দেশের জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করে বাজেটের এই পরিমাণ। এটি নিছক শুধু একটি পরিমাণই নয়। দেশের সক্ষমতা আর সামর্থ্যের প্রতীক এই বাজেট। অথচ এই সহজ হিসাবটাই মেনে নিতে চাচ্ছেন না অনেকে। যাদের উদ্দেশ্যই হলো সবকিছুতে বিরোধীতা করা।

মহান জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ হওয়ার পর বাজেট নিয়ে জোর সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির কাছে এই বাজেটের গুরুত্ব নেই। এই বাজেট হলো আওয়ামী লীগের লুট করার একটা হিসাব। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই এই বাজেট। বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘লুটপাটবান্ধব বাজেট’বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। ঋণ করে ঘি খাওয়ার বাজেট বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা বাজেট নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করেছেন তারা মূলত শুধু মাত্র রাজনৈতিক দিক বিবেচনা করেই এটা করেছেন। এর মূল পিছনে মূল উদ্দেশ্য সরকারের বিরোধীতা করা। এছাড়া তারা ব্যক্তি আর রাষ্ট্রের বাজেটের ধারণা এক করে ফেলেছেন। বস্তুত ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের বাজেটের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। ব্যক্তি আগে আয় কত হবে, সেটি ঠিক করেন, তারপর ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্র করে ঠিক উল্টোটা। রাষ্ট্র আগে ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করে। এরপর ঠিক করে, কোথা থেকে অর্থ আসবে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, সংকটের বাজারে এ বাজেট চ্যালেঞ্জের, তবে বাস্তবায়ন সম্ভব। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত সময়োচিত বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এদিকে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেছে যে, নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই বহিঃপ্রকাশ। দেশের সর্ববৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানিয়েছেন, এবারের বাজেট ব্যবসায়ীক সক্ষমতা বাড়াবে।

এছাড়া বাজেটে বেশ কিছু চমক রয়েছে। তা নির্দেশ করে এখন আর আমরা তলা বিহীন ঝুড়ি নই। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার জোরালো ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটি সময়োপযোগী, গণমুখী ও মানুষ বাঁচানোর বাজেট। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের বিষয়কে নজর দেওয়া হয়েছে। মাথাপিছু আয় বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এবারের বাজেট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বাজেট। এটি কোনো গতানুগতিক বাজেট নয়। করোনা মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে এ বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সতেজ ও চাঙা রাখার জন্য এ বাজেট সময়োপযোগী ও গণমুখী। গণপ্রত্যাশা পরিলক্ষিত হয়েছে বাজেটে। কিন্তু এতো কিছুর পরও নিছক খোঁড়া অজুহাতে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে বাজেট নিয়ে বিরোধীদের বিরোধীতা নিছক কিই বিরোধীতা?




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭