এডিটর’স মাইন্ড

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে চমক আবুল?


প্রকাশ: 10/06/2022


Thumbnail

অবশেষে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে। আগামী ২৫ জুন উদ্বোধনের তারিখ ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জাঁকজমক এবং স্মরণীয় করে রাখতে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করছে সরকার। একদিকে যেমন সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এই মাহেন্দ্রক্ষণটিকে একটি আবেগময় এবং উৎসবমুখর পরিবেশে করতে চায়। সেজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এই পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে মঞ্চ হবে এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে ভাষণ দেবেন বলেও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। আনুষ্ঠানিক এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুরো বাংলাদেশের মধ্যে এক ধরনের আবেগ-উত্তেজনা কাজ করছে। সরকার তার এই সাফল্যকে জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে উপস্থাপন করতে চায়। পদ্মা সেতু কেবল একটি সেতু নয়, এটি বাঙালির আত্মমর্যাদা এবং অহংকারের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে। কিন্তু পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এই আবেগঘন মুহূর্তে একটি প্রশ্ন সবার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। তা হলো সৈয়দ আবুল হোসেন কি করবেন?

সৈয়দ আবুল হোসেন ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বেই প্রথম পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল এবং প্রথম টেন্ডারটি আহ্বান করা হয়েছিল। এর পরপরই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে এবং দুর্নীতির সন্দেহের তীর ছোড়া হয় তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের দিকে। এছাড়াও সেই সময় যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকেও সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করে সৈয়দ আবুল হোসেন। আর এসবের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থ সাহায়তা বন্ধ করে। এরপর পদ্মা সেতুর অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক রাজি হয় বিভিন্ন শর্ত দিয়ে। এ শর্তের মধ্যে একটি ছিল যে সৈয়দ আবুল হোসেন, মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ যারা সন্দেহভাজন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তাদেরকে সরিয়ে দিতে হবে। দুর্নীতির মামলা করতে হবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এর প্রেক্ষিতে সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্ব দেয় এই বিষয়টি তদন্তের জন্য। সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়ান। গ্রেপ্তার হন তৎকালীন সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

কিন্তু সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রীত্ব যাওয়ার পরও পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে ফিরে আসেনি বিশ্বব্যাংক। বরং তারা অজুহাত দেখায় যে, দুর্নীতি দমন কমিশন যথেষ্ট স্বচ্ছতার সাথে তদন্ত করছে না। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর করার ঘোষণা দেন। যে পদ্মা সেতু এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। পদ্মা সেতুর সময় যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিশ্বব্যাংক কাল্পনিক, বানোয়াট অভিযোগ এনেছিল, তাদের সবাইকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কৃত করেছেন। মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া চাকরিই শুধু ফেরত পাননি, তিনি এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এখন তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে জার্মানীতে রয়েছেন। অন্যান্য যারা সেই সময় বিশ্বব্যাংকের কারণে নিগৃহীত হয়েছিল, তাদের সবাইকেই প্রধানমন্ত্রী তাদের সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন। শুধুমাত্র একজন ছাড়া তিনি হলেন সৈয়দ আবুল হোসেন।

এই ঘটনার পর থেকে আবুল হোসেনকে আর রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা যায়নি। তিনি নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেননি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পদেও তিনি নেই। সকলেই যখন তাদের সম্মান ফিরে পেলেন, তখন আবুল হোসেন কেন দূরে? এর পেছনে কি অন্য কোনো কারণ আছে? পদ্মা সেতু যখন উদ্বোধন হচ্ছে, তখন এই প্রশ্নগুলো ঘুরেফিরে উঠছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে থাকতে পারেন সৈয়দ আবুল হোসেন। প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এটা চমক দিতে চাচ্ছেন বলেও সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে কি সেই চমক, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭