ইনসাইড পলিটিক্স

দলেই তোপের মুখে ফখরুল


প্রকাশ: 10/06/2022


Thumbnail

তারেক জিয়ার আস্থাভাজন হওয়ার জন্য চাটুকারিতার নতুন রেকর্ড করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর এই চাটুকারীতা এবং তোষামদি করতে যেয়ে দলের ভেতরই তোপের মুখে পড়েছেন বিএনপি মহাসচিব। দলের নেতারা বলছেন, এরকম ব্যক্তিত্বহীন, চাটুকার ব্যক্তির মহাসচিব হওয়া উচিত নয়, হওয়া উচিত তারেক জিয়ার পিএস। বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, মির্জা ফখরুল আসলে দলের মহাসচিব, না তারেক জিয়ার একান্ত অনুগত ব্যক্তি সেটি আসলে এখন খুঁজে দেখা দরকার। কারণ মহাসচিবের কাজ এটি হতে পারে না। বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রধান কাজ হলো তারেক জিয়াকে সন্তুষ্ট রেখে বিএনপি মহাসচিব পদটিকে আকড়ে রাখা। কারণ তারেক জিয়ার কৃপাতেই তিনি এখনও বিএনপি মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর সে কারণেই তার প্রথম এবং একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে তারেক জিয়াকে খুশি রাখা এবং খুশি রাখার জন্য তিনি একের পর এক এমন সব বক্তব্য দিচ্ছেন, যে বক্তব্যগুলো তাকেই শুধু হাস্যকর করছে না, পুরো দলকেই বিব্রত করেছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন যে, পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এই কথায় সারাদেশে এক ধরনের কৌতুকের উদয় হয়েছে। শুধু কৌতুক নয়, বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্য বিএনপিকেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, তারেক জিয়ার নির্দেশেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেছেন। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন যে, পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সংক্রান্ত মির্জা ফখরুলের বক্তব্য একান্তই তার। এটি দলের বক্তব্য নয় এবং এই ধরনের বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপিকে হাস্যকর এবং খেলো করেছে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। এটি অবশ্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রথম হাস্যকর বক্তব্য নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার একই কাণ্ড করেছেন। কিছুদিন আগে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন। এই বক্তব্য মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

এমনকি বিএনপিতে যারা মুক্তিযোদ্ধা তারাও এই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এটি নিয়ে আর এগোননি। তার দলের কোনো নেতাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাশে এসে দাঁড়াননি। এর পরপরই মহাসচিব কানাডা থেকে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য একটি পদক আবিষ্কার করেন এবং এই পদকটি যারা দিয়েছে তারা ছিল অস্তিত্বহীন। এইরকম একটি পদক বেগম খালেদা জিয়াকে কেনো দেওয়া হলো এ নিয়ে বিএনপিতেই তোপের মুখে পড়েন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে এটি নিয়েও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছুটা চাপের মুখে পড়েছিলেন। আর এখন পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের গল্প বলে তিনি রীতিমতো তোপের মুখে পড়েছেন।

বিএনপি নেতারা মনে করেন যে, ২০১৮ এর নির্বাচনের ব্যর্থতার পর পরই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর পদত্যাগ করা উচিত ছিল। মহাসচিব পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল। সে সময় দলের সব সিনিয়র নেতারা মহাসচিব পরিবর্তনের ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন। প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সহ একাধিক নেতা প্রকাশ্যে নেতৃত্ব পরিবর্তনের আওয়াজ তুলেছিলেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৮ এর নির্বাচনের ব্যর্থতার পরও টিকে যান শুধুমাত্র তারেক জিয়ার দয়ায়।  এর পরপরই তিনি তারেক জিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের কোনো সংযোগ নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কোনো সমস্যার তিনি কোনো সমাধান করতে পারেন না। এমনকি দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি কি হচ্ছে সে সম্পর্কে তিনি অন্ধকারে থাকেন। তিনি আসলে একটি পোস্ট বক্স। তাকে যেভাবে লন্ডন থেকে কমিটি পাঠানো হয়, সেভাবেই তিনি সেই কমিটি ঘোষণা করেন। এমনকি কোথায় কি হচ্ছে সে সম্পর্কেও তিনি জানেন না। আর এ কারণেই মহাসচিব হিসেবে তিনি দলের বিশ্বাসযোগ্যতা, কর্মীদের আস্থা হারিয়েছেন। আর এ কারণে এখন এই পদে থাকার জন্য তার একটি উপায়, তা হলো তারেক জিয়াকে খুশি রাখা। আর এই খুশি করতে গিয়ে তিনি অতিরিক্ত চাটুকারিতা করছেন এবং এই চাটুকারিতা করে নিজেই হাসির খোরাকে পরিণত হচ্ছেন। শুধু সাধারণ মানুষের কাছেই তার বিশ্বাসযোগ্যতা কমেনি, দলের মধ্যেও তিনি এখন কৌতুকের বস্তুতে পরিণত হয়েছেন বলেই বিএনপি নেতারা বলছেন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭