ইনসাইড গ্রাউন্ড

বাজেটে ক্রীড়াখাতের বরাদ্দ কি পর্যাপ্ত?


প্রকাশ: 11/06/2022


Thumbnail

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব করেন। এবারের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে সর্বমোট ১ হাজার ২৮১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে ৪০৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং পরিচালন খাতে ৮৭৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যা আগের বছরের বাজেটের চেয়ে ১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেশি।

জাতীয় সংসদে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেন, “২০২১-২২ অর্থবছরে ক্রীড়া অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের ৮টি প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প। পাশাপাশি দক্ষ খেলোয়াড় তৈরির লক্ষ্যে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক দ্বারা খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ, গ্রামীণ খেলাধুলার মান উন্নয়নে কার্যক্রম গ্রহণ ও প্রতিভা অন্বেষণের মাধ্যমে প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুঁজে বের করে তাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।”

এছাড়া ক্রীড়াবিদদের জন্য শেখ কামাল পুরষ্কার প্রবর্তন করা হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দেশী ও আন্তর্জাতিক খেলাধুলার আয়োজন ও অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন, এসোসিয়েশন ও সংস্থাকে নিয়মিত আর্থিক অনুদান ও ক্রীড়াসামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। খেলাধুলাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে যা ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকদের প্রদান করা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশে ‘উন্নয়ন’ বলতে মোটাদাগে বুঝায় অবকাঠামোর উন্নয়ন। ক্রীড়াখাতে যুগ যুগ ধরে কেবল ভবন, মাঠ নির্মাণ ও সংস্কারের দিকেই বেশি মনোযোগী সরকার। আর বছর ঘুরতেই তাই বাজে হেয়ে ওঠে উন্নয়নের যোগানদার। অথচ ক্রীড়াচর্চার মূল উদ্দেশ্য মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। যে জাতি শৌর্য-বীর্যে যত এগিয়ে, জাতিগতভাবে তারাই উন্নত। অথচ বাংলাদেশে তরুণদের মানসিক বিকাশ নিয়ে অতি সামান্যই কাজ হয়। ক্রীড়া ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে স্বল্পমেয়াদী কিছু রুটিন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় দায়সারাভাবে। আয়োজকদের অভিযোগ থাকে বাজেটের স্বল্পতা অথবা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকা নিয়ে। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ কথা বলেন। কিছু ক্ষেত্রে সংবাদ হয়, ব্যস এতটুকুই। ক্রীড়া উন্নয়ন নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচির প্রচণ্ড অভাব। তাছাড়া বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে কি না, তা মনিটরেরও যথাযথ ব্যবস্থা নেই। 

জাতীয় বাজেটে ক্রীড়াখাত জুড়ে দেয়া হয়েছে যুব উন্নয়নের সঙ্গে৷ ফলে খেলাধুলার ক্ষেত্রে বরাদ্দ অপ্রতুল৷ ৩০-৩৫ বছর আগে বাংলাদেশে ক্রীড়াচর্চা হতো অনেক বেশি স্থানীয় সংগঠনের মাধ্যমে৷ সরকারের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত৷ গত ১৫-২০ বছরে স্থানীয় সাংগঠনিক পর্যায়ে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছে। ফলে খেলোয়াড় তৈরি বা ক্রীড়াক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে শুন্যতা। এই শুন্যতা পূরণ করতে হবে সরকারি উদ্যোগে। নইলে ক্রমবর্ধিত তরুণ সমাজ বিপথে চলে যাবে এবং অবক্ষয় ঘটবে। 

জনবহুল দেশ হিসেবে এক বছরে ক্রীড়াখাতে ১ হাজার ২৮১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। শতাংশের হিসেবে যা দশমিক তিন এরও কম৷ আসলেই কি এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত? তাছাড়া এই বাজেট দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দেয়া হলে প্রশিক্ষণ এবং ক্রীড়া আয়োজনে সংকট তৈরি হবে, যা মেটানোর কোন উপায় থাকে না। এজন্য ব্যক্তিগত বা বেসরকারি পর্যায় থেকে যেসব খেলোয়াড়রা দেশি-বিদেশি প্রতিযোগীতায় মাঝে মধ্যে চমক সৃষ্টি করেন, তারা দ্রুতই হারিয়ে যান পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাবে।

ক্রীড়াসাফল্য বলতে তো মোটা দাগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কথাই চলে আসে৷ কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের মুখাপেক্ষী না৷ আয়ে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ তাদের আয়ের উৎস এবং অঙ্ক অন্য কোন ক্রীড়া ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ে বহুগুণ বেশি। এজন্য ক্রিকেট ছাড়া অন্য ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন তারা চেয়ে থাকে বাজেটের দিকেই৷ আর অন্যান্য খেলাতেও যে বাংলাদেশে প্রতিভা রয়েছে, কিছুদিন আগে বিশ্বকাপ আর্চারি রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টের ফাইনালে উঠে প্রমাণ দিয়েছেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী জুটি৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগীতা করা এসব খেলোয়াড় প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না পেলে অচিরেই ঝরে পড়বেন।

ক্রীড়া সামগ্রী ও খেলোয়াড়দের প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই আমদানীনির্ভর। খেলোয়াড়দের এ সকল জিনিস চড়া দামে কিনে প্র্যাকটিস করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা পৃষ্ঠপোষকতার অভাব বোধ করেন। বা পৃষ্ঠপোষকতা পেলেও তা পুরোপুরি প্রয়োজন মেটাতে পারেনা। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে অধিকাংশেরই নিজের টাকা এগুলো কেনার সামর্থ্য থাকে না। ফলে বহু প্রতিভা ঝরে যায়। অনেকে পেশা পরিবর্তন করে দেশের বাইরে গিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। অথচ সরকারের প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আন্তর্জাতিক পদকসহ বহু সুনাম বয়ে আনতে পারত। এরকম উদাহরণ ভুরি ভুরি রয়েছে বাংলাদেশে। এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব ক্রীড়া প্রতিভা লাইমলাইটে আসতে না পেরে হতাশায় খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। 

মাঠে ভাল ফল চাইলে অবশ্যই দরকার বড় প্রণোদনা৷  ক্রীড়ায় অগ্রাধিকার দিলে সবচেয়ে ‘ভালো ফল' হবে বলাই বাহুল্য। খেলার বিকাশ এবং খেলার সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। কারণ খেলার সুযোগ সৃষ্টি করলেই তো তৈরি হবে খেলোয়াড়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান দরকার৷ তা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট থাকা উচিৎ। সামগ্রিক মেধা-মননের যথাযথ বিকাশে এর বিকল্প নেই। সর্বস্তরে ক্রীড়া ছড়িয়ে দিতে পারলে জাতির জন্য তখন সত্যিকার অর্থেই হবে শক্তি। ক্রীড়ার এই শক্তি থেকে মিলবে সামাজিক অনাচার থেকে মুক্তি৷ এর জন্য চাই বড় অঙ্কের বরাদ্দ। জাতীয় বাজেটে এই খাতের বরাদ্দে এবার কি থাকবে তার প্রতিফলন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭