ইনসাইড গ্রাউন্ড

কেন পারছেন না মুমিনুল?


প্রকাশ: 12/06/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান ধরা হয় মুমিনুল হককে। ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল স্বপ্নের মত। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন মুমিনুল হক। এমনকি দেশের হয়ে সবচেয়ে দ্রুততম ২০০০ রানের (৪৭ ইনিংসে) মালিকও ‘বাংলাদেশি লিটল মাস্টার’।

ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছেন মুমিনুল। দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়েছেন। হয়েছিলেন অধিনায়কও। লাল বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে তিনি নতুন একটি উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। সেটা পূরণ করতে না পারলেও টেস্ট ক্রিকেটে তার হাত ধরেই আসে সবচেয়ে বড় সাফল্য। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সিরিজ জয়। কিন্তু সেটাই শেষ। তাছাড়া তার অধিনায়কত্ব নিয়েও নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে দলকে সামনে থেকে তিনি কতটা নেতৃত্ব দিতে পারছেন। কিংবা  অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলকে কতটা স্বাধীনতা দেয়া হয়। এছাড়া  রিভিউ নিয়েও বেশ হক্কি পোহাতে হয় এই টেস্ট অধিনায়ককে। প্রায় প্রতি টেস্টেই রিভিউ নেয়া, না নেয়া নিয়ে একটা বিশাল ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। আর অধিনায়ক হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই সেই দায়টা সবচেয়ে বেশি যায় মুমিনুলের উপরে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে অসংলগ্ন ও দায়সারা জবাব দেয়ার বিষয়টিও মুমিনুলের পরিপক্কতা ও যোগ্যতা প্রশ্নের মুখোমুখি করে।

টেস্টে মুমিনুলের গড়টা শুরু হয়েছিল ৫৫ থেকে। এরপর সেটাকে এক সময় ৭৫- এ নিয়ে যান বাংলাদেশের লিটল মাস্টার হিসেবে পরিচিত পাওয়া এ ক্রিকেটার। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতেও তার টেস্ট ব্যাটিং গড় ছিল ৫০ এর ওপরে। ধারণা ছিল বাংলাদেশের হয়ে অনেকগুলো রেকর্ডের জন্ম দেবেন “আমাদের দেশি ব্র্যাডম্যান”। কিন্তু এরপরই শুরু হয় ছন্দপতন। 

হঠাৎই যেন রান করা ভুলে যান এই টপ অর্ডার। শেষ ১৫ ইনিংসে বাজে খেলায় মুমিনুলের ব্যাটিং গড়ও ৪১ থেকে নেমে এসেছে ৩৯ কোটায়। ৫৩ ম্যাচের ৯৮ ইনিংসে তার গড় এখন ৩৮.৩১। টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুলের চেয়ে এখন বেশি গড় তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের। এর মধ্যে ৬৭ ম্যাচের ১২৮ ইনিংসে তামিমের গড় ৩৯.৫৩ ও ৬১ ম্যাচের ১১১ ইনিংসে সাকিবের গড় ৩৮.৯৯। 

অধিনায়ক হিসেবে ১৭ টেস্টের ৩১ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৯১২ রান করেছেন মুমিনুল। অধিনায়কত্ব পাওয়ার প্রথম ৭ টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি পেলেও পরের ১০ টেস্টে সেঞ্চুরিবিহীন তিনি। সর্বশেষ ১৫ ইনিংসে তার রান ১৭০, গড় ১২.১৪। অধিনায়ক হিসেবে ১৭ টেস্টে মুমিনুলে ব্যাটিং গড় ৩১.৪৪। অথচ অধিনায়ক হওয়ার আগে তার গড় ছিল ৪১.৪৭।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ৮৮ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন মুমিনুল। এরপরই বাংলাদেশ ক্যাপ্টেনের বাজে ফর্মের শুরু। বাকি ৯ ইনিংসের মধ্যে তিনবারই শূন্য রানে আউট হলেন তিনি। অন্য ৬ ইনিংসে ৩৭, ২, ৬, ৫, ২ ও ৯ রান করে তোলেন মুমিনুল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন বাংলাদেশ দলপতি মুমিনুল হক। আগের ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৯ রান। ফলে সর্বশেষ ১০ ইনিংসে তার সংগ্রহ দাঁড়াল ৭৪, যার গড় ৮.২।

শেষ পাঁচ টেস্ট ইনিংসে দুই অংকের স্কোর করতে পারেননি একবারো। এমনকি শেষ সাত টেস্ট ম্যাচে তাঁর হাফ সেঞ্চুরি মাত্র একটি। এ তো গেল আন্তর্জাতিক ম্যাচের পরিসংখ্যান। ঘরোয়া ক্রিকেটেও মুমিনুলের এই ফর্ম অব্যাহত ছিল। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে পাঁচ ম্যাচে তার সর্বোচ্চ স্কোর ২০। ব্যাট হাতে এমন নিদারুণ বাজে সময় কে, কবে কাটিয়েছেন, তাও একটি গবেষণার বিষয়!

সম্প্রতি ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে সিরিজ হেরে মুমিনুলের ফর্ম ও অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অবশেষে দলের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যহতি দেয়া হয়, যাতে তিনি ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে পারেন। অধিনায়কত্ব পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। সহ অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে ফর্মের তুঙ্গে থাকা উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে। বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করছে বাংলাদেশ দল। সেখানে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং করছে টাইগাররা। ক্যারিবীয়ান প্রেসিডেন্ট একাদশের বিরূদ্ধে তামিমের সেঞ্চুরি ও শান্ত অর্ধশতক ভদ্রস্থ রানে রেখেছে বাংলাদেশকে। এছাড়া টপ অর্ডারে কেউ তেমন রান করতে পারেন নি। পারেন নি মুমিনুলও। খুলতে পারেননি রানের খাতা, ৬ বল খেলে ফিরেছেন শূন্য হাতে। প্রস্তুতি ম্যাচেও মুমিনুলের রাহুর দশা কাটেনি। ১৬ জুন অনুষ্ঠিতব্য প্রথম টেস্টে আরও কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হবেন, সন্দেহ নেই। 

এমন অফফর্মে বিশ্বের যেকোন ব্যাটসম্যানই চিন্তিত হয়ে পড়বেন, নিজেকে ফিরে পেতে চাইবেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু মুমিনুল নিজেই বিশ্বাস করছেন না, ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বাজে সময় কাটছে তার। মুমিনুল নিজের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত না হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটকে চিন্তিত হতেই হচ্ছে। কারণ টপ অর্ডারের একজন ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতা পুরো দলের উপরই প্রভাব ফেলে। তাছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। ফলে ব্যাট হাতে তাঁর দ্রুত রানে ফেরাটা ভীষণ জরুরি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭