ইনসাইড গ্রাউন্ড

বিশ্ব ফুটবলের অগ্রযাত্রায় কেন বাংলাদেশের এই অধপতন?


প্রকাশ: 13/06/2022


Thumbnail

ফুটবল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। গতিময় ফুটবলের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে স্কিল। নতুন নতুন টেকনিক ও ট্যাকটিক্স দেখা যাচ্ছে ফুটবলের মাঠে। তাতে খেলা যেমন উপভোগ্য হচ্ছে, তেমনি লড়াইটা আরও কঠিনতর হচ্ছে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ব্যবধান কমছে। শুধু ইতিহাস আর ঐতিহ্য দিয়ে এখন আর ফুটবলকে মাপার সুযোগ নেই। ফলে নতুন নতুন দল, ও দেশ থেকে উঠে আসছে প্রতিভাধর ফুটবলার। তৈরি হচ্ছে নতুন তারকা।

ফুটবলে পিছিয়ে থাকা এশিয়া মহাদেশের দলগুলোর উন্নতি কিছুটা মন্থর হলেও বড় টুর্নামেন্টে চমক সৃষ্টি করছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ইরান সে ধারাবাহিকতা রেখেছে। সবাইকে চমক দেখিয়ে কাতার তো বিশ্বকাপেরই আয়োজন করতে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল ফুটবলে তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পেরেছে। কিন্তু বাংলাদেশ? ফুটবলে বাংলাদেশ কি থেমে আছে, নাকি উল্টো পথে যাচ্ছে, সেটাই এখন গবেষণার বিষয়!

বিশ্ব ফুটবলের র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এমনিতেও তলানিতে। এবার আরও পেছালো। দুই মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশ ফুটবল র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়েছে ছয় ধাপ! এ বছরের মে'তে ১৮৪তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ, এরপর চার ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৮৮তম স্থানে। এশিয়া কাপ বাছাইপর্বের দুই ম্যাচ হেরে ফিফা র‍্যাংকিংয়ে আরও চার ধাপ নেমে  বাংলাদেশ এখন ১৯২তম। তিন বছরের মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন র‍্যাংকিং। এর আগে সর্বনিম্ন র‍্যাংকিং ছিল ১৯৭তম স্থানে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর ১৯৯৬ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ র‍্যাংকিং ছিল ১১০তম স্থানে।

ফিফা র‌্যাংকিংকে বলা হয় একটি দেশের ফুটবল আয়না। উন্নতি-অবনতির প্রমাণ যে এটি দিয়ে বোঝা যায়। এবার আড়াই মাস পর ফিফা অধিভুক্ত দেশগুলোর কি অবস্থান সেটি জানানো হয়েছে। ২১০ টি দেশের মধ্যে এখন বাংলাদেশের অবস্থান পিছিয়েছে আরও চার ধাপ। সে হিসেবে বাংলাদেশের পরে আছে কেবল ২১টি দেশ! যাদের নাম-পরিচয় খুব কম মানুষই জানে।যে ভারতকে একটা সময় বাংলাদেশের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবা হতো তারা এখন ১০৭ এ অবস্থান করছে। এই দেশটি নিজেদের ইতিহাসে ৯৬ পর্যন্ত উঠে গিয়েছিলেন। ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার লক্ষ্য রয়েছে ভারতের। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটাই তিমিরে রয়েছে। যে মালদ্বীপকে একটা সময় ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিত সেই দ্বীপ রাষ্ট্রটি রয়েছে ১৫৮ নাম্বারে।

কিন্তু বাংলাদেশ কেন প্রত্যাশামাফিক উন্নতি করতে পারছে না, সেটি প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়। রুগ্ন অবস্থা থেকে স্বাস্থ্যাবান অবস্থা তো পরের কথা, মোটামুটি পর্যায়েও আসতে পারছে না। অথচ ফুটবল আমাদের জাতীয় খেলা না হলেও সবচেয়ে জনপ্রিয়, তাতে সন্দেহ নেই। আবাহনী-মোহামেডান উত্তুঙ্গ দ্বৈরথ কে না জানে? সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সাফ গোল্ডকাপ তো বাংলাদেশেরই অর্জন ছিল। ফুটবল আমাদের সে সময় স্বপ্ন দেখিয়েছিল বিশ্ব মঞ্চে প্রতিযোগীতা করার। 

গ্যালারি ভরা দর্শকের মাঠ আজ শূন্যে হাহাকার। দর্শক আর ফুটবল ঘুমিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে গন্তব্যহীন পথে। একের পর এক ব্যর্থতা আর নানা দুর্নীতির জাতাকলে পড়ে ফুটবলের গৌরব হারিয়ে গেছে। আর তখন থেকেই ক্রিকেটের জয়গান শুরু। আর এখন ক্রিকেটের জয়োৎসবের ছায়ায় পড়ে ফুটবল লুকিয়ে গেছে লজ্জার চাদরে। আর ফুটবলটা ওই যত্নহীন মাঠেই পড়ে আছে। দিনের পর দিন প্রিয় ফুটবলের ব্যর্থতার দায়ভার ফুটবলের নীতিনির্ধারক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন- বাফুফের। তারা এক যুগের বেশি সময় ধরে ফেডারেশনে রাজত্ব করলেও ফুটবল ও ফুটবলারদের জন্য কিছুই করতে পারেননি। তাদের সমস্ত উৎসাহ এবং উদ্দীপনা ফেডারেশনের নির্বাচন ঘিরে! এবং ঘুরে-ফিরে তারাই ফুটবলকে নিজেদের আখের গোছানোর ব্যবসা বানিয়ে বসে আছেন। 

বাফুফের বর্তমান কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ তরুণরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাচ্ছে প্রতিক্রিয়া। ফুটবলপ্রেমী সমর্থকরা তাদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে। তাদের আছে সাহস, শক্তি, উদ্যেম। শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছার। যেখানে একটা ফুটবল একাডেমি নেই, সেখানে কীভাবে ফুটবলের পাইপলাইন তৈরি হবে? সবার আগে আধুনিক জিমনেসিয়াম সমৃদ্ধ ফুটবল একাডেমি প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি কোচিং স্টাফ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, মিডিয়া, স্পন্সরশিপের পৃষ্ঠপোষকতা ফুটবলকে আরও এগিয়ে নিতে পারে। প্রয়োজন একটি সঠিক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা। এক যুগের পরিচর্যার সক্ষমতা নিয়ে এগোলে ইতিবাচক ফলাফল অন্তত আশা করা যায়। স্কুল ফুটবল, জেলা লিগের মত মাঠ পর্যায়ের টুর্নামেন্ট নিয়মিত হলে ভাল খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। দেশের ক্লাবগুলো পেশাদারি মনোভাব নিয়ে দল সাজিয়ে আধুনিক একাডেমি করুক। বয়সভিত্তিক দলগুলোর পরিচর্যা হোক আধুনিক ফুটবলের মানদণ্ডে। ইতিবাচক ফল আসতে বাধ্য। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সুদৃষ্টিই পারে ফুটবলের বর্তমান দীনহীন প্রেক্ষাপট বদলে দিতে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭