ইনসাইড গ্রাউন্ড

ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটুকু?


প্রকাশ: 14/06/2022


Thumbnail

২০১৮ সালের পর পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে উইন্ডিজ সফরে গেছে বাংলাদেশ দল। দুই টেস্টের সঙ্গে সমান তিনটি করে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে সিরিজ খেলবে সফরকারীরা। সাদা পোশাকের ফরম্যাট দিয়ে ১৬ জুন মাঠে গড়াবে দুই দলের লড়াই। এজন্য অ্যান্টিগায় ক্রিকেট উইন্ডিজ প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে তিন দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজের আগে এটিই ছিল টাইগারদের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাদা পোশাকের সিরিজ শুরুর আগে এই প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে সফরকারীরা। যেখানে নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ দল। আসলেই কি তাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল?

ম্যাচে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৩১০ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ দল। তামিম অপরাজিত থাকেন ১৬২ রানে। ২৮৭ বলে ২১টি চার ও ১টি ছয়ের মার ছিল তার ব্যাটে। শান্ত খেলেন ৫৪ রানের ইনিংস এবং নুরুল হাসান সোহানের ব্যাট থেকে আসে ৩৫ রান। ব্যাটিংয়ে এটুকুই বলার মত। ব্যাটিং লাইনআপে ব্যর্থ ছিলেন মুমিনুল, লিটন,  মেহেদী হাসান, মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটাররা। 

এরপর ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ৩৫৯ রান করার পর নিজেদের ইনিংস ঘোষণা করে ক্রিকেট উইন্ডিজ প্রেসিডেন্ট একাদশ। তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন ওপেনার জেরেমি সোলোজানো। প্রায় এক বছরের বেশি সময় পর লাল বলের ক্রিকেটে ফেরার দিনে উজ্জ্বল ছিলেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। প্রস্তুতি ম্যাচের শেষ দিনে মাত্র ৬ ওভারে ৩ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। আরেক পেসার এবাদত হোসেন নেন ৩টি। বাকি দুই পেসার খালেদ আহমেদ আর রেজাউর রহমান রাজা ১টি করে উইকেট শিকার করেন। স্পিনার তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেনরা ছিলেন উইকেটশূন্য।

প্রস্তুতি ম্যাচটির ফোকাসে ছিলেন তামিম ইকবাল। তামিমের অপরাজিত দেড়শ রানের ইনিংসটি অন্য ব্যাটারদের আড়াল করে রেখেছে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ মূল দলের বিপক্ষে একা সামাল দিতে পারবেন তামিম? তাছাড়া দলে নেই টেস্ট স্পেশালিস্ট আরেক ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। ব্যক্তিগত কারণে সে ছুটিতে রয়েছে। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচের যে পারফরম্যান্স দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে, তা এক অর্থে তাদের দৈন্যতা ঢাকার অবলম্বন মাত্র। বল হাতে পেসার এবাদত নিয়েছেন তিন উইকেট। বাকি দুই পেসার খালেদ আহমেদ আর রেজাউর রহমান রাজা ১টি করে উইকেট শিকার করেন। শেষ দিনে দলের সাথে যুক্ত হয়ে মুস্তাফিজ ৩ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং ধ্বসিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বোলিং লাইন আপে ছিল বাংলাদেশের মূল অস্ত্র স্পিন। যারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দলে অভিজ্ঞ এবং টেস্ট স্পেশালিস্ট স্পিনার তাইজুল ছিলেন উইকেটশূন্য। মেহেদী হাসানও বাংলাদেশের স্পিন অ্যাটাকের অন্যতম অস্ত্র। তাদের পারফরম্যান্স রীতিমত হতাশাজনক।

এ তো গেল পারফরম্যান্সের কথা। দলের অধিনায়ক ছিলেন না প্রস্তুতি ম্যাচে। ফলে স্বাগতিকদের বিপক্ষে সফরকারী দলটির পরিকল্পনার কোন আলামত খুঁজে পাওয়া গেল না। দল নিয়ে তার কী ভাবনা, বা কী পরিকল্পনা রেখেছেন ক্যারিবীয়দের বিরূদ্ধে, তা এখন পর্যন্ত ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে। খেলার আগে প্রতিটি অধিনায়কই তাদের লক্ষ্যের কথা জানায়। বাংলাদেশের অধিনায়ক এখনও লুকোচুরির মধ্যেই আছেন। ফলে তার কমিটমেন্ট সম্পর্কে কিছুই আঁচ করা যাচ্ছে না।কোন দলগত ইভেন্ট বা পিকনিকের একটা সুনির্দিষ্ট প্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনা থাকে। এবারের সফরে তার ছিঁটেফোটা দেখা যাচ্ছে না বাংলাদেশ দলে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে কন্ডিশন নিতে সমস্যা হচ্ছে না বলে প্রস্তুতি ম্যাচের আগেই জানিয়েছিলেন মুমিনুল। প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে কন্ডিশনের সাথেও দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ জানিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। আর ম্যাচ শেষে তামিমের বড় ইনিংস, শান্তর ফিফটি এবং নিজের ও মুস্তাফিজের তিন উইকেট প্রাপ্তিকে এক কথায় দলের সাফল্য বলে ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্টির ঢেকুর তুলেছেন পেসার এবাদত হোসেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই জোড়াতালির পারফরম্যান্স নিয়ে একজন খেলোয়াড়ের সন্তোষ প্রকাশ করা কি তার সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা বোঝায় না?

সম্প্রতি পাকিস্তানে তিন ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জা নিয়ে দেশে ফিরছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাভাবিকভাবেই দেশের মাটিতে বাংলাদেশকে কোন প্রকার ছাড় দিতে চাইবে না ক্যারিবীয়ানরা। তাছাড়া টেস্টে বাংলাদেশ বরাবরই খাপছাড়া দল। ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। সিরিজে ব্যাক-টু-ব্যাক ভালো খেলেছে এরকম নজির খুবই কম। তাছাড়া টেস্টে এ পর্যন্ত উভয় দল মুখোমুখি হয়েছে ১৬ ম্যাচ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ১০ ম্যাচ, বাংলাদেশ জিতেছে চারটিতে, দুটি ড্র হয়েছে। ওয়ানডে ফরম্যাট বাংলাদেশের শক্তির জায়গা। যদিও এ পর্যন্ত ৩৮ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ১৫টিতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ২১ ম্যাচ, বাকি দুই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। অবশ্য আশার কথা হলো শেষ পাঁচ ওয়ানডেতে শেষ হাসি বাংলাদেশই হেসেছে। টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যানেও এগিয়ে ক্যারিবীয়ানরা। মোট ৬ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র দুটি। একটি পরিত্যক্ত হয়েছে এবং তিনটির ফল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে গেছে। 

কাগজে-কলমে এগিয়েই রয়েছে ক্রিকেট ইতিহাসের ঐতিহ্যবাহী দলটি। যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে বাংলাদেশের কিছু সুখস্মৃতি আছে, কিন্তু অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট সেসব ধার ধারবে কেন? আর স্বাগতিকরা হোম কন্ডিশনে একটু বেশিই সুবিধা পেয়ে থাকে, এটা সব খেলার জন্যই অমোঘ নিয়ম। সেখানে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের এমন গাছাড়া মনোভাব চিন্তার উদ্রেক করে বৈকি। এছাড়া নতুন দায়িত্ব নিয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণও রাখতে চাইবে নিকোলাস পুরান। সবদিক থেকে সে বাংলাদেশের ‘আপাত নতুন’ অধিনায়ক সাকিবের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে, সন্দেহ নেই। তাই কথার ফুলঝুরি নয়, মাঠের পারফরম্যান্সই বলে দেবে, কতটা যোগ্য দল সাজিয়েছে টাইগাররা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭