ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেলেই কি দুর্নীতি বলে ধরে নিতে হবে?


প্রকাশ: 16/06/2022


Thumbnail

যেকোন দেশের উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি তার অবকাঠামো। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে তার অবকাঠামোগত উন্নয়নও লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশও তার ব্যাতিক্রম নয়। বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পরার মত। এর জলজ্যান্ত উদাহরণ পদ্মা সেতু। কিন্তু এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে দুর্নীতির নানা গুঞ্জন। প্রশ্ন হল নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেলেই কি তাহলে দুর্নীতি বলে ধরে নিতে হবে? না। বিশ্বের বড় বড় দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পগুলো লক্ষ্য করলে এর অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। বাংলা ইনসাইডারের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ আমরা কথা বলব বার্লিন এয়ারপোর্ট নিয়ে। 

পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত এবং শক্তিশালী দেশ জার্মানি। বড় বড় মেগা প্রকল্প দেশটির কাছে নতুন কিছু নয়। জার্মানির ইতিহাসের অন্যতম একটি মেগা প্রকল্প ছিল বার্লিন এয়ারপোর্ট। জার্মানির অন্যতন ব্যাস্ত এবং বছরে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন যাত্রী ধারন করার লক্ষে হাতে নেয়া হয়েছিল এই মেগা প্রকল্পটি। নির্মান ব্যায় ২.৮৩ বিলিয়ন ইউরো ধরা হলেও কাজ শেষ হতে হতে নির্মাণ ব্যায় বেড়ে দাঁড়ায় ৭.৩ বিলিয়ন ইউরোতে।

বার্লিন এয়ারপোর্টের নির্মাণ ব্যায় বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ ছিল নকশার পরিবর্তন। ২০০৬ সালে যখন এয়ারপোর্টের নির্মাণ কাজ শুরু হয় তখন নির্মাণের জন্য অনুমোদিত টার্মিনালের জন্য যে, ২৬০,০০০ বর্গ মিটারের ফ্লোর এরিয়া এবং অভ্যন্তরীণ স্থান বরাদ্দ করা হয়েছিল, তা ছিল খুব ছোট। পরবর্তীতে এর নকশা পরিবর্তন করে আয়তন বাড়ানো হয় যার কারণে বেড়ে যায় প্রকল্পটির খরচ। নির্মাণ ব্যায় বৃদ্ধি পাওয়া মানেই যে দুর্নীতি নয় তার একটি বাস্তব উধাহরন বার্লিন এয়ারপোর্ট। 

এবার পদ্মা সেতুর কথা আসা যাক। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বাঙ্গালির স্বাপ্নের পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু নির্মানের সময় এসেছে নানা প্রতিবন্ধকতা, নানা রকম জটিলতা। নির্মাণ জটিলতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং বৈদেশিক চাপ। সব জটিলতাকে দক্ষতার সাথে মোকাবিলা করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ শুধু স্বপ্ন নয় বাস্তব। সব জল্পনা-কল্পনাকে পেছনে ফেলে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু। 

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ৬ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। এরপর ৭ ও ৬ নম্বর পিলারে তিনটি করে মোট ছয়টি পাইলের বটম সেকশনের কাজ করা হয়। কিন্তু এসব পাইল বসাতে গিয়ে নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর পাওয়া যায়। তখন দুটি পিলারের ছয়টি পাইলের টপ সেকশনের কাজ বন্ধ রাখা হয়। মাওয়া প্রান্তে কাজ বন্ধ রেখে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়। 

পরে আরও ১২টি পিলারের পাইল বসানোর সময় মাটির স্তরে কাদামাটি পাওয়া যায়। আগের নকশা অনুযায়ী ওই ১৪টি পিলারের পাইলের সংখ্যা ছিল ৮৪। সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই (COWI) ইউকে লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞরা মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই করেন। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী, কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের মধ্যে পাইলের সংখ্যা একটি করে বাড়ানো হয়। অন্যদিকে এসব পিলারে খাঁচ কাটা পাইল বসিয়ে বিশেষ ধরনের সিমেন্টের মিশ্রণে নরম মাটি শক্ত করা হয়। মূলত কয়েক দফায় নকশা পরিবর্তনের কারনেই বেড়ে যায় সেতুর ব্যায়।

বিশ্লেষকদের মতে, পদ্মা সেতুর মতো বড় মেগা প্রকল্পতে কাজ করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণে বারবার নকশা পরিবর্তন করতে হয়। এছাড়াও বিশ্ববাজারে সেতু নির্মাণের বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়া, ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি কারণে সবমিলিয়ে সেতুর নির্মাণ খরচ বেড়েছে। আর পদ্মা সেতুতে যে কোনো দুর্নীতি হয়নি, সেটি শুরুতেই কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। আর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুর নির্মাণ খরচ বৃদ্ধির কারণও এখন পরিষ্কার। সে কারণে যারা পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন তাদের উচিৎ বিশ্বের বড় বড় প্রকল্প সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া এবং জানা। তাহলে এই বিষয়গুলো তাদের মনে উঁকি দেবে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭