ইনসাইড পলিটিক্স

কুসিক নির্বাচন: বিএনপির ডাবল বোনাস


প্রকাশ: 17/06/2022


Thumbnail

বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। শুধু এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নয়, গত কিছুদিন ধরে বিএনপি কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করছে না। বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছে এবং বলছে, নির্বাচন কমিশন এবং এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সেই ধারায় নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন বিএনপি বয়কট করে। সেই নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট নেতা তৈমুর আলম খন্দকার স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, পরে তাকে বহিষ্কার করা হয়। একই কায়দায় বিএনপির দুইজন প্রার্থী কুসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের দুজনকেই বহিষ্কার করা হয়েছে। এরকম পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু এবং কায়সার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং দুইজন মিলে প্রায় ৮০ হাজার ভোট পেয়েছেন। এর ফলে কুমিল্লার রাজনীতিতে বিএনপির যে একটি শক্ত অবস্থানে আছে তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকে দুই ধরনের লাভ করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছে যে, বিএনপি এই নির্বাচনে না থেকেও ডাবল লাভ করেছে। প্রথম যে বিএনপির লাভ সেটি হলো বিএনপির যে একটি নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে সেই ভোটব্যাঙ্ক অটুক রয়েছে। মনিরুল হক সাক্কু এবং কায়সার দুজনই নির্বাচনের দ্বিতীয় তৃতীয় হয়েছেন এবং ভালো ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের এতো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরও এখনো বিএনপির পক্ষে একটি ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। যদিও নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ওই নির্বাচনে কায়সার আসলে বিএনপির ভোটব্যাঙ্কের ভোটটা পেয়েছেন। অন্যদিকে মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন সাধারণ ভোট। কিন্তু অনেকেই মনে করেন যে, মনিরুল হক সাক্কুও সাধারণ ভোটের বাহিরে দলীয় ভোটও পেয়েছেন। সেই বিবেচনায় বিএনপির যে একটি নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক অটুকু রয়েছে, এটি বিএনপির একটি বড় প্রাপ্তি। এখনো দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পরও বিএনপির একটি সমর্থক গোষ্ঠী আছে যারা বিএনপিকে ভোট দিতে চায়। এটি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির বড় প্রাপ্তি।

দ্বিতীয় প্রাপ্তি হলো, বিএনপি সবসময় বলে আসছে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা এর পিছনে কারণ হিসেবে বলছে যে, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের যে ঘটনা ঘটেছে তার ফলে বিএনপির দাবি আরও পোক্ত হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন যখন বাহারকে এলাকা ত্যাগের নোটিশ দিলেন সেই নোটিশটি তিনি অগ্রাহ্য করেন। এলাকায় অবস্থান করেন ভোটের দিন পর্যন্ত এবং ভোটের ফলাফলের পরে তিনি সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত হন। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপি বলার সুযোগ পাবে যে, নির্বাচন কমিশন একজন এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না, তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ এমপির বিরুদ্ধে কিভাবে ব্যবস্থা নেবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দাতা দেশ বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী এবং বারবার তারা বলছে, বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা দেখতে চান। আর সেক্ষেত্রে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়, সেটি তাদের একটি বড় চাওয়া। এবারের কুমিল্লা নির্বাচনে সবকিছুই সুষ্ঠু হয়েছে, শুধুমাত্র বাহাউদ্দিন বাহারকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত ব্যাকফুটে চলে গেছে। এরকম একটি পরিস্থিতির কারণে মনে করা হচ্ছে যে, বিএনপি এটিকে সামনে নিয়ে আসবে এবং এমপিদের প্রভাব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বত্র পড়তে পারে, এরকম একটি বক্তব্যকে তারা জোরালো করার চেষ্টা করবে। ফলে বিএনপির দাবি একটি ভিত্তি পাবে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন যে, কুমিল্লা নির্বাচন একটি স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। যখন জাতীয় নির্বাচন হবে তখন ৩০০ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তখন তারা এলাকায় প্রভাব বিস্তার বা অন্য কোনো কিছু করার সুযোগ পাবেন না। তবে যাই হোক না কেন, এই নির্বাচনের ফলাফলে বিএনপির অনেকে নেতার মধ্যে চাপা খুশি আর গোপন থাকেনি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭