ইনসাইড বাংলাদেশ

পরিস্থিতি ভয়াবহ, উদাসীন রাজনৈতিক দলগুলো


প্রকাশ: 20/06/2022


Thumbnail

জলবায়ু পরিবর্নজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশ। প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয় বাংলাদেশকে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এরকম নানা দুর্যোগ সঙ্গে নিয়ে এ দেশের মানুষ বসবাস করে আসছে। কিন্তু এবারে অতি ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে যে আকস্মিক বন্যা হয়েছে, তা অবর্ণনীয়। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এবারের বন্যা অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গেছে। প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সিলেট নগরীর পথঘাট-লোকালয়। কোথাও পানি ছুঁয়েছে কোমর পর্যন্ত। দুই জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। সংখ্যায় প্রায় ৪০ লাখ। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে উঁচু স্থান, স্কুল বা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ। কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে-নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বানভাসি মানুষ। এমন ভয়াবহ রূপ আগে দেখেনি সিলেটবাসী। হতভম্ব ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষ। অবাক হয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। এর মধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস, মুঠোফোন সেবা ও ইন্টারনেট এবং ব্যাংক লেনদেন সেবা।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে সরকার বন্যাদুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী নিয়োগ করেছে। ক্রুজ ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও উদ্ধার কাজে নেমেছে কিছু স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি, সংগঠন। কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় এই উদ্ধার কাজ যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ধনী-গরিব সবাই এখন খাদ্য সংকটে ভুগছে। সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে ভুক্তভোগী সংখ্যার তুলানায় তা অপ্রতুল। ৪০ লাখ পানিবন্দী মানুষের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট। পাশাপাশি টাকা ও চালের যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেটাও যথেষ্ট নয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় শুধু সরকারের একার পক্ষেও সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর এই দায়িত্ব বর্তায়। কিন্তু পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ হওয়া স্বত্বেও উদ্ধার তৎপরতা বা ত্রাণ বিতরণে দেখা যায়নি কোনো রাজনৈতিক দলকে। যা দেখা গেছে সেটা শুধু রাজধানীতে বসে পরিকল্পনার কথা জানা গেছে।

রাজনৈতিক পর্বেক্ষকরা বলছেন, দেশে বন্যার যে ভয়াবহতা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জে, তাতে করে উদ্ধার তৎপরতা এবং ত্রাণ বিতরণ খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। যেকোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ‍খুব দ্রুত নিতে হবে। সেটা শুধু সরকারের একার পক্ষে নয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এগিয়ে আসার উচিত। কিন্তু বড় উদ্বেগের বিষয় হলো ঘটনাস্থলে এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো প্রতিনিধি কিংবা তাদের কোনো ত্রাণ দেখা যায় নি। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বড় উদ্বেগের বিষয় হলো দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বাগবিতণ্ডা করছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি শুধু তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো উদ্যোগ নেই। যা জাতির জন্য চরম হতাশার। অথচ ভয়াবহ পরিস্থিতির আজ প্রায় ৪ দিন হতে চলছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেয়ে এর বাস্তব প্রয়োগ বেশি দ্রুত হওয়া উচিত। কিন্ত রাজনৈতিক দলগুলো এক্ষেত্রে উদাসীনতা পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭