পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেছেন, এবারে অতি ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে যে আকস্মিক বন্যা হয়েছে, তা অবর্ণনীয়। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। সংখ্যায় প্রায় ৪০ লাখ। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে উঁচু স্থান, স্কুল বা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ। কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে-নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বানভাসি মানুষ। এ সময় তাদের জন্য শুকনো খাবার এবং নিরাপদ বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।
দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষা এবং মানুষের সুস্থ্য থাকাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। পাঠকদের জন্য প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।
প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, এছাড়াও আমাদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। এখন একসঙ্গে অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। যেখানে সবাইকে শুকনো খাবার যেমন, বিস্কুট, মুড়ি, চিড়া, গুড় এই সমস্ত দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পানির ব্যবস্থা করা এবং সেটা অবশ্যই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। সবাইকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিতে হবে। কারণ এখন বন্যাকবলিত অঞ্চলে কোথাও পানি ফুটিয়ে খাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া বোতলজাত পানিরও ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আশ্রয়স্থলে থাকা মানুষজনের মলমূত্র ত্যাগের বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে। তারা যেখানে থাকছেন এবং যে সমস্ত জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করবে এই দুটোর মধ্যে যেন একটা দূরত্ব থাকে। তা নাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়বে। কারণ এক দিকে বন্যার প্রকোপ এবং মানুষের দুভোর্গ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্যার মধ্যেই তাদের বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে, বিশেষ করে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ সেটা মানুষের মলমূত্র থেকেও হতে পারে, আবার বিশুদ্ধ পানির অভাবেও হতে পারে। যেহেতু এখন সব ধরনের পানি একাকার হয়ে গেছে। নদী, খাল-বিল, টয়লেট সব কিছু একাকার হয়ে গেছে। সেজন্য মানুষকে সুস্থ্য রাখতে হলে বিশুদ্ধ পানির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, এ সময় বন্যার্ত মানুষদের মধ্যে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করা হচ্ছে এবং সেগুলো সবই করা হচ্ছে পলিথিনের মাধ্যমে। যা আমাদের পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব তৈরি করে। সেজন্য যদি সম্ভব হয় তাহলে যেন পাটজাত ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। আর নয়তো এসমস্ত পলিথিন বা পলিথিনজাত দ্রব্য ব্যবহারের পর যেখানে সেখানে যেনো ফেলে না দেওয়া হয়। এমনিতেই বন্যা পরবর্তীতে পরিবেশের উপর একটা খারাপ প্রভাব পড়বে। তার উপর যদি পলিথিন যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা আরও খারাপ রুপ ধারণ করবে।