ইনসাইড বাংলাদেশ

ভূপেন হাজারিকার তুলনায় পদ্মা সেতু কেন ব্যায়বহুল?


প্রকাশ: 21/06/2022


Thumbnail

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু। নির্মাণ জটিলতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং বৈদেশিক চাপ, সব জটিলতাকে দক্ষতার সাথে মোকাবিলা করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ স্বপ্ন নয় বাস্তব। সব জল্পনা-কল্পনাকে পেছনে ফেলে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। কিন্তু এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে দুর্নীতির নানা গুঞ্জন। কেউ কেউ আবার নির্মাণ ব্যয় নিয়ে এটিকে তুলনা করছে ভারতের ভূপেন হাজারিকা সেতুর সাথে। একটি পদ্মা সেতুর টাকা দিয়ে নাকি ৩০ টি ভূপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণ সম্ভব! প্রশ্ন উঠেছে, কেন ভূপেন হাজারিকার তুলনায় পদ্মা সেতু ব্যায়বহুল? দুটি সেতুর নির্মাণ কৌশল, ভৌগলিক অবস্থান ইত্যাদি তুলনা করলেই নির্মাণ ব্যয়ের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

বাংলা ইনসাইডারের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ থাকছে ভূপেন হাজারিকা সেতুর চেয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় কেন বেশি?

ভূপেন হাজারিকা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯.১৫ কিলোমিটার, অপরদিকে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। তাহলে কেন পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় এত বেশি, এমন প্রশ্ন জাগাটা খুবই স্বাভাবিক। দৈর্ঘ্যে ছোট হলেও পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেশি হওয়ার পেছনে কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে। একটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় শুধুমাত্র সেতুর দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে না। সেতুর ব্যয় নির্ভর করে সেতুর প্রস্থ, যে নদীর উপর সেতুটি নির্মিত তার গতি-প্রকৃতি, নদীতে পাইলিং, পিলার, স্প্যান ইত্যাদি অনেক কিছুর উপর। ডিজাইনের দিক থেকেও ভূপেন হাজারিকা এবং পদ্মা সেতু অনেক আলাদা। ভূপেন হাজারিকা সেতুটি দুই লেন বিশিষ্ট, অন্যদিকে পদ্মা সেতু একটি দ্বিতল সেতু। এর নিচ দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন এবং উপর দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন। বিশ্বে এমন দ্বিতল নকশা বিশিষ্ট সেতুর সংখ্যা খুবই কম, যা পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয় বেশি হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।

এবার পাইলিং এর কথায় আসা যাক। বিশ্বের সবচেয়ে গভীরতম পাইল বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুতে। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত গিয়েছে পদ্মা সেতুর পাইল। পদ্মা সেতুর পাইল নদীর তলদেশে নিতে যে হ্যামার ব্যাবহার করা হয়েছে এটি বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামার। এর আগে অন্যকোনো সেতু নির্মাণে এত শক্তিশালী হ্যামার ব্যাবহার করা হয়নি। ফলে এখানেও নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে বহুগুণে।

পাইল লোড ক্যাপাসিটিতেও পদ্মা সেতু ভূপেন হাজারিকা সেতুর থেকে অনেক এগিয়ে। ভূপেন হাজারিকা সেতুর পাইল লোড ক্যাপাসিটি যেখানে মাত্র ৬০ টন, সেখানে পদ্মা সেতুর পাইল লোড ক্যাপাসিটি ৮ হাজার ২০০ টন, যা ভূপেন হাজারিকা থেকে ১৩৬ গুণ বেশি। ভূপেন হাজারিকা সেতুর প্রতিটি পিলারের ওজন ১২০ টন। অপরদিকে পদ্মা সেতুর একেকটি পিলারের ওজন ৫০ হাজার টন। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় কেন বেশি।

ভূপেন হাজারিকা সেতুটি পূর্ব ভারতের অসম রাজ্যে লোহিত নদীর উপর নির্মিত একটি সেতু। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী পদ্মার উপর। ভুপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণে নদী শাসন করতে হয়নি। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণে শুধুমাত্র নদী শাসনেই ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা, যা নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির একটি অন্যতম বড় কারণ।

মূলত পদ্মা সেতু এবং ভূপেন হাজারিকা সেতুর নকশা, নির্মাণ কৌশল ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। তাই দুটি সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের মধ্যে তুলনা করাটাও স্রেফ হাস্যকর এবং অসামঞ্জস্যপুর্ণ। তবুও একটি গোষ্ঠি রয়েছে যারা যেকোনো মূল্যে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে, সেটি প্রমাণে মরিয়া। কিন্তু শুরু থেকেই তাদের সেই সকল চেষ্টা বুমেরাং হয়ে যায়। পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। তাই এখন পদ্মা সেতুকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং জনগণের মাঝে মিথ্যাচার ছড়ানোই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতুতে বাস্তবিক অর্থে দুর্নীতির কোনো লেশমাত্র নেই। ফলে এখন অবাস্তবিক যুক্তি নিয়ে পদ্মা সেতুর সাথে ভুপেন হাজারিকা সেতুর তুলনা করে জনগণকে বিভ্রান্তের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে তারা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭