কালার ইনসাইড

ইউটিউবারদের দৌরাত্ম্য: এফডিসি বিমুখ তারকারা


প্রকাশ: 22/06/2022


Thumbnail

জাতির জনকের হাতে গড়া এফডিসিকে যখন একদল অদম্য মেধাবীরা নিজেদের সৃষ্টি দিয়ে কোটি কোটি দর্শক তৈরি করে গেছেন, তখন সেই কোটি কোটি দর্শকদের অশ্রাব্য ভাষায় গুটি কয়েক লোক আমাদের শিল্পীসহ নানা প্রসঙ্গে অপ্রকাশযোগ্য ভাষায় টেনে কথা বলে পূর্বপুরুষদের অপমান করে নিজেদের গর্বিত ভাবছেন। আর আমরা দেখেও না দেখার ভান করছি। 

কানাডায় গেছি সেখানেও এসব নিয়ে অসংখ্যবার প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি। এতে করে দিন দিন এসব ইউটিউব বক্তারা যেমন ব্যস্ত তখন প্রকৃত শিল্পীরা একটু সম্মান পাওয়ার আশায় এফডিসি থেকে দূরে। এরা সমিতির নামধারী কিছু অসাধু। যাদের উদ্দেশ্য বেফাঁস কথা বলে ভিউ বাড়িয়ে টাকা ইনকাম করা। এই দুষ্টুদের অবশ্যই এফডিসি থেকে বের করে দিতে হবে।  ইউটিউবাদের উপর বিরক্ত হয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস।

তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রযুক্তি। আর এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ইউটিউবে অনেকেই অসত্য তথ্য প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে ঢালিউডের চলচ্চিত্রে। সাম্প্রতিক সময়ে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ইস্যুতে ইউটিউবে এমন অসংখ্য অসত্য প্রকাশের অভিযোগ রয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে চলচ্চিত্রের বিতর্কিত ইস্যুতে শিল্পীদের নিয়ে লাগামহীন বক্তব্যে সরব এফডিসির বেশ কয়েকজন এক্সট্রা শিল্পী।

বিএফডিসির জৌলুসের সময় গেটের কাছে ঘেঁষতেই দারোয়ানের ভয়ে তটস্থ থাকতো দর্শনার্থীদের। এখন আগের সেই জৌলুস নেই, তবে আছে কনটেন্টের উপযুক্ত বিতর্কিত সব উপাত্য। আর সেই উপাত্য সংগ্রহে অনেকেই বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান। প্রযুক্তির কল্যাণে হাতের মুঠোয় সেল ফোনে ধারণ করে ছেড়ে দেন নিজেদের মতো করে শিরোনাম দিয়ে। 

ইউটিউবারদের সঙ্গে বিভিন্ন সমিতির লোকজনের সখ্যতার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আর এসব কারণে দীর্ঘদিন এফডিসিপাড়ায় ঢোকেন না চলচ্চিত্র নির্মাতা দেওয়ান নজরুল, বজলুর রাশেদ চৌধুরী, এম এন ইস্পানিসহ অনেকেই। শিল্পী সমিতির কার্যকরী সদস্য ও সিনিয়র অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান, অরুণা বিশ্বাসরাও বিরক্ত এই ইউটিউবারদের দৌরাত্ম্যে।

এফডিসিতে ইউটিউবারদের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। এর আগেও শিল্পী ও কুশলীদের হেয় করেছেন কিছু কিছু ইউটিউবার। তবে এদের এফডিসিতে প্রবেশের বিষয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে কতিপয় প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পীরাই দায়ী! অভিযোগ প্রতিপক্ষকে হেয় করতে নিজেরাই ইউটিউবারদের এফডিসিতে প্রবেশ করান।

এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দোস্ত দুশমন’খ্যাত পরিচালক দেওয়ান নজরুল। তিনি বলেন, যেখানেই যাই ইউটিউবে এফডিসিতে ভুঁইফোড় কিছু লোকজন কথা বলছে। মনে হয় তারাই ইন্ডাস্ট্রির সবকিছু। এরা যে বলে যাচ্ছে অবিরাম তাদের থামানোর কেউ নেই। কেউ থামাচ্ছে না। এর কারণ কী? তিনি বলেন, এখানে এখন কেউ কাউকে সম্মান দেন না। যেখানে সম্মান পাই না সেখানে গিয়ে অসম্মানিত হওয়ার দরকার কী?

পরিচালক বজলুর রাশেদ চৌধুরী বলেন, আমি দীর্ঘ পাঁচ মাস হয় এফডিসি যাই না। অথচ আমার জীবনের অর্ধেক সময় সেখানেই কেটেছে। এখনো সেখানকার মানুষগুলোর সঙ্গে আমার ওঠাবসা। কিন্তু যেভাবে ভিউয়ের আশায় যাচ্ছেতাই লোকজন ইউটিউবে অপ্রকাশযোগ্য কথাবার্তা বলে বেড়ান তা শুনে রুচিতে বাধে, তাই প্রয়োজন ছাড়া যাই না। এদের এখনই সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে। এ ব্যাপারে সাংবাদিক ভাইয়েরা আশা করছি উদ্যোগ নেবেন।

অপরদিকে পরিচালক এম এন ইস্পাহানি বলেন, মন চাইলেই এফডিসিতে গিয়ে আড্ডা মারতে পারি না। যেখানেই যাই ইউটিউবারদের দৌরাত্ম। গেলেই কেউ না কেউ এসে বুম ধরে বসে বিব্রতকর বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে বসে। কোনো সেন্সর নেই। যদিও অনেকে সাক্ষাতকার দিয়ে নিজেকে বিজিত ভাবছেন। সত্যি বলতে এরা পরিচালক সমিতি, প্রযোজক, শিল্পী সমিতি সবার মধ্যে বিদ্যমান। সম্প্রতি মৌসুমী ইস্যুতে এদের কয়েকজন যে ভাষায় ইউটিউবে অশালীন কথাবার্তা ছড়িয়েছেন তাতে করে বাড়িতেও কথা শুনতে হচ্ছে আমাদের। অথচ আমাদের সমিতিগুলো নিশ্চুপ। এফডিসি কর্তৃপক্ষ চোখ বুঝে আছে। তাই খুব কাজ না থাকলে ওমুখী হই না। শুধু ইউটিউবার নয়, যারা ইউটিউবে নিম্নমানের কুরুচিপূর্ণ সাক্ষাতকার দেয় তাদেরও এফডিসিতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া উচিত।

সিনিয়র অভিনেত্রী অঞ্জনা বলেছেন, সত্যি বলতে আমি মহাবিরক্ত। মঙ্গলবার (২১ জুন, বিকাল চারটায়) আমাদের শিল্পী সমিতির মিটিং ছিল। যেতে পারিনি; তবে, যুগ্ম মহাসচিব সাইমন সাদিককে ফোনে বলেছি শিল্পী সমিতির তিন সদস্য (সাদিয়া মির্জা, মিজান এবং জামাল পাটোয়ারী) ইন্ডাস্ট্রিকে সমাজে জঘন্যভাবে হেয় করেছে। একজন শিল্পী হিসেবে আমিও অপমানিত হয়েছি। রাস্তাঘাটে কথা শুনতে হয়। এদের ব্যাপারে সমিতি যেন কঠোর অবস্থান নেয়। শিল্পী সমিতি কেন এসব জঘন্যদের আশ্রয় দিয়ে বিতর্কিত হবে?

ইউটিউবাদের উপর বিরক্ত পরিচালক এস এ হক অলিকও। তিনি বলেন, সম্প্রতি চিত্রনায়িকা মৌসুমী প্রসঙ্গে বেশ কয়েক জনকে দেখলাম ইউটিউবে কথা বলতে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে তারা চলচ্চিত্রের কারা? চাইলেই কি একজন মৌসুমীকে নিয়ে যাচ্ছেতাই বলা সম্ভব? তাদের এত সাহস দেয় কে? বলার আগে চিন্তা করা দরকার আমি কে, আমার ওজন কতটুকু। সত্যি এটি খুবই দুঃখজনক। সময় থাকতে এদের থামানো উচিত। না হলে ভবিষ্যতে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন থেকেই আলোচনায় বিএফডিসি। বেশ কয়েকটি ইস্যুতে কাঠগড়ায় শিল্পীরা। এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া বলেন, সবকিছুর আগে আমাদের কাজ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি বেশি বেশি সিনেমা নির্মাণ ও কাজ করি তাহলে ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে মনে হয় আর কখনোই প্রশ্ন আসবে না। নায়িকার ভাষায়, কাজ নেই বলেই এমনটি হচ্ছে।

চলচ্চিত্রের এ ধরনের অপ্রীতিকার ঘটনা ঘটলেই কিছু অসাধু লোক এসব নিয়ে সিনেমার মানুষদের চরিত্র হননে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা ফেসবুক লাইভ বা ইউটিউবে তুচ্ছ বিষয়গুলো নিয়ে নিজের মতো করে শিল্পীদের চরিত্র নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেন। তাদের বেফাঁস মন্তব্যে পুরো শিল্পী সমাজ তো বটেই চলচ্চিত্রের বদনাম হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন চিত্রনায়ক ওমর সানী।গত শনিবার (১৮ জুন) রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি শিল্পী সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

চলচ্চিত্রের চলমান তর্ক-বিতর্কে কতিপয় ফেসবুক কিংবা ইউটিউবার নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ ভিডিও অডিও ইডিট করে তা আপলোড দেয়। এতে মূল ঘটনা থেকে সরে গিয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনায় ওমর সানী কিংবা মৌসুমীর বদনাম হতে থাকে। এবার সেই সব মানসিকতা নিয়ে মানুষদের একহাত নিলেন ওমর সানী। মঙ্গলবার (২১ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি ছবিসহ একটি পোস্ট দেন।

সেই পোস্টে তিনি লেখেন, কতগুলো অথর্ব কানা বেয়াদব, ছাগল-পাগল যা ইচ্ছা বলছে ইউটিউবে, শুধু কয়েকটা ডলারের লোভে। সবাই নয় (শিল্পী ছাড়া আর কোনো সাবজেক্ট নেই)। সবাইকে ইতিবাচক হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭