এডিটর’স মাইন্ড

ভিলেনরা কি যাবেন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে?


প্রকাশ: 22/06/2022


Thumbnail

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে আগামী ২৫ জুন। ওই দিন সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সেতুর উদ্বোধন করবেন এই সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ প্রধানমন্ত্রী গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এই সংবাদ সম্মেলনে দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়, তবে বাকি সময়টা ছিল পদ্মা সেতু নিয়ে নানারকম আলোচনা। প্রধানমন্ত্রী খোলামেলাভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রধানমন্ত্রী এই সময় পদ্মা সেতু নিয়ে বিভিন্ন মহলের বিরোধিতার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানিয়ে সরে আসে, তখন বিভিন্ন বিশিষ্টজনেরা যেসব মন্তব্য করেছিল, সেই সমস্ত মন্তব্যগুলো প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে। তিনি কয়েকজন সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরোধীতার কথাও উল্লেখ করেন তার সংবাদ সম্মেলনে। এই সমস্ত ব্যক্তিদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো যে, যারা সেই সময় পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিলেন এবং পদ্মা সেতু হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা কি আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবেন? 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদের কথা উল্লেখ করেছেন, তাদের মধ্যে প্রথমে নাম ছিল বেগম খালেদা জিয়ার। বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন যে, এই সরকার পদ্মা সেতু কাজ শুরু করছে, কিন্তু এই সরকার তা শেষ করতে পারবে না। বেগম খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুর নির্মাণের ক্রটির কথাও উল্লেখ করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই তার পক্ষে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাওয়া সম্ভব না বলে তার পারিবারিক সূত্র বলেছে। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক দাওয়াত পান নাই। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে দাওয়াত করার ক্ষেত্রে যদি আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকে, তাহলে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তবে বেগম খালেদা জিয়া যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না এটা মোটামুটি নিশ্চিত।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারী হিসেবে যাকে চিহ্নিত করেছেন তিনি হলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে কি কি করেছিলেন তার বিবরণও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, একজন ব্যক্তির একটি পদ আঁকড়ে রাখার জন্য দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকার জন্যই তিনি পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাধা দিয়েছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবেন কিনা এ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্য কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি যাবেন না। তবে এ ব্যাপারে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। 

ড. আকবর আলি খান: পদ্মা সেতু নিজ অর্থে করার সমালোচক হিসেবে ড. আকবর আলী খানের একটি বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী আজ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন। ড. আকবর আলি খানের পারিবারিক সূত্র বলছে, তিনি অসুস্থ এবং পদ্মা সেতু পর্যন্ত যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা তার নেই। এজন্য তিনি পদ্মা সেতুতে যাবেন না। যদিও তার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তিনি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া এবং নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এটির ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যযয়ের কথাও বলেছিলেন। তবে জানা গেছে যে, ড. দেবপ্রিয় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। সেতু বিভাগ সূত্র জানা গেছে যে, তাকে ইতোমধ্যে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। 

শাহদীন মালিক: শাহদীন মালিকও পদ্মা সেতুর সমালোচনা করেছিলেন। সেখানে তিনি সুশাসনের অভাবের কথা বলেছিলেন এবং বিশ্বব্যাংককে সরে যাওয়াটাকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছিলেন। শাহদীন মালিকেও পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শাহদীন মালিকের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছেন তিনি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবেন না। 

অর্থাৎ যারা যারা পদ্মা সেতু হবে না, নিজে অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা সম্ভব নয় বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা কেউই আসলে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। তবে এটি কি লজ্জায়, না হতাশায় সেটি অবশ্য জানা যায়নি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭