ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগ কি শত্রুমুক্ত?


প্রকাশ: 22/06/2022


Thumbnail

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ডামাডোলের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিষয়টি হারিয়েই গেছে। আগামীকাল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ৭৩ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এবং দেশের শক্তিশালী এই রাজনৈতিক দলটি। ৭৩ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগ বোধহয় গত এক যুগে সবচেয়ে ভালো সময় কাটাচ্ছেন। তারা টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করছে, তারা ক্ষয়িষ্ণু এবং অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও এ নিয়ে আক্ষেপ করেছেন। তিনি আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকাটা তার একটা আক্ষেপের বিষয়। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী একই মন্তব্য করছিলেন। কিন্তু আসলে কি আওয়ামী লীগ শত্রুমুক্ত? আওয়ামী লীগ বিরোধিতাকারীরা কি ক্ষমতাহীন, নিষ্প্রভ? 

বাস্তবে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগ সংসদে নিরঙ্কুশ অবস্থানে রয়েছে। সরকার পরিচালনায় কোনো ধরনের বাধার মধ্যে পড়ছে না। এমনকি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগ ঝুঁকিমুক্ত নয়, আওয়ামী লীগ শত্রুমুক্ত নয়। বরং আওয়ামী লীগের শত্রুরা নানারকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। আওয়ামী লীগের ১৩ বছরের মধ্যে এখন আওয়ামী লীগ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় কাটাচ্ছে বলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের সরাসরি প্রতিপক্ষরা এখন নানা ষড়যন্ত্র উপায় খুঁজছে বলেও মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ৫ শত্রু চিহ্নিত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন এই শত্রুগুলো যেকোনো সময় আওয়ামী লীগের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।

১. বিএনপি-জামায়াত জোট: বিএনপি-জামায়াত জোট আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক শত্রু বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিএনপি এখন নতুন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করার চেষ্টা করছে। বিএনপি বলেছে যে, তারা আগামী নির্বাচনে যাবে না। এছাড়া বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম বক্তব্য রাখছে, কর্মসূচি দিচ্ছে। তবে মাঠের বক্তব্যের চেয়েও বিএনপির একটি বড় অংশ লন্ডন থেকে ষড়যন্ত্র করছে সরকারের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিএনপি নেতারা বাংলাদেশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এই সমস্ত অপপ্রচারের কারণেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও নষ্ট হচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

২. সুশীল সমাজের একাংশ: সুশীল সমাজের একাংশ আওয়ামী লীগের ভয়ঙ্কর বিরোধিতা করছে এবং তারা আওয়ামী লীগের বড় শত্রু হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যু আনছেন। সম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সুশাসন ইত্যাদি প্রসঙ্গ এনে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছেন সুশীল সমাজের একাংশ।

৩. সাইবার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী: বিএনপি জামায়াতের ছত্রছায়ায় একটি সাইবার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। যারা বিদেশে বসে সরকারের বিরুদ্ধে নিরন্তর এবং লাগাতার অপপ্রচারে লিপ্ত আছে। এই সমস্ত অপপ্রচার সরকারের জন্য যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ হয়েছে বলেও বিভিন্ন মহল মনে করেন।

৪. প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা শত্রু: বাইরে আওয়ামী লীগ ভেতরে জামায়াত বা বিএনপির চিন্তা-চেতনা ধারণ করে এরকম একটি বড় অংশ এখন প্রশাসনের ভিতর জাঁকিয়ে বসেছে এবং এই গোষ্ঠী ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে বলে অনেকে মনে করে। আর এদেরকে প্রতিহত না করতে পারলে আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

৫. আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ: বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের প্রধান শত্রু আসলে আওয়ামী লীগ নিজেই। আওয়ামী লীগের অন্তঃকলহ, অন্তর্দ্বন্দ্ব, একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা, অপপ্রচার করা এবং একে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করাই আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সবচেয়ে বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

তাই ৭৩ বছরে দাঁড়িয়ে টগবগে আওয়ামী লীগকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হচ্ছে, সজাগ থাকতে হচ্ছে। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আওয়ামী লীগ সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যাবে। প্রশ্ন হলো এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য আওয়ামী লীগ কতটুকু প্রস্তুত। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭