ইনসাইড বাংলাদেশ

পদ্মা সেতু বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বড় ভুল?


প্রকাশ: 22/06/2022


Thumbnail

পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে আগামী ২৫ জুন। এই সেতুটি বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেতুর কাজ শুরু হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনে সেখান থেকে সরে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ তার আত্মমর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখছে পদ্মা সেতুকে। শুধুমাত্র আত্মমর্যাদা নয়, বাংলাদেশে যে পারে সেই বিষয়টি জানান দিচ্ছে পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের স্বাবলম্বিতা, বাংলাদেশের শক্তি এবং বাংলাদেশের সাহসের প্রকাশ পদ্মা সেতু। এখন যখন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, তখন বিশ্বব্যাংকও পুরো বিষয়টাকে নুতন করে মূল্যায়ন করছে। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত এবং সেখান থেকে সরে আসা কি বিশ্বব্যাংকের কোন ভুল সিদ্ধান্ত ছিল? বিশ্বব্যাংক যতগুলো ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যেই কি পদ্মা সেতু অন্যতম ছিল? ওই প্রশ্নগুলো এখন সামনে চলে এসেছে। 

বিশ্বব্যাংক বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক সহায়তায়কারি প্রতিষ্ঠান হলেও এই প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা এবং বিভিন্ন দেশে তার কর্তৃত্ববাদী মনোভাব নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করে এমন অভিযোগ করে উন্নয়নশীল এবং সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো। বিশ্বব্যাংককে সৃষ্টি করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো, যেন উন্নয়নের জন্য সংগ্রামরত রাষ্ট্রগুলো সমাজতান্ত্রিক বলয়ের মধ্যে ঢুকে না পরে। আর এ কারণেই বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন দেশে উন্নয়নের যে সমস্ত ফর্মুলা দিয়েছিল, সেইসব ফর্মুলাই ছিল মূলত ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে জিইয়ে রাখার জন্য। ফলে অনেক দেশেই কল্যাণের বদলে বিশ্বব্যাংক রাজনৈতিক ঋণ প্রদান করেছিল। যে ঋণগুলো আসলে ওই দেশগুলোকে পরমুখাপেক্ষী করেছে এবং বিশ্বব্যাংকের যে প্রক্ষেপণ সেই প্রক্ষেপণগুলো ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বহু দেশ বিশ্বব্যাংকের ফাঁদে পরে আরও দরিদ্র হয়ে গেছে। ঋণে ফাঁদে ফেলে ওই রাষ্ট্রগুলোর উপর নানা রকম শর্ত চাপিয়ে দেওয়া বিশ্বব্যাংকের একটা অন্যতম নীতি-কৌশল। কিন্তু পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে সেটি ঘটেনি। বরং পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের সরে আসাটা ছিল সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়, যেটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন। 

বিশ্বব্যাংক যে দুর্নীতির কথা বলে পদ্মা সেতু থেকে সরে এসেছিল, সেই দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে কানাডায় কোর্টে এবং তদন্তে দেখা গেছে যে, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ একটি গালগল্প হিসেবেই চিত্রিত হয়েছে। এই অভিযোগের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাহলে বিশ্বব্যাংক কেন এরকম একটি গালগল্প শুনে অর্থায়ন থেকে সরে আসলো? এখন এটি মোটামুটি পরিষ্কার যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন না করার ক্ষেত্রে কিছু মানুষ প্ররোচিত করেছিল। যারা আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী, তারাই বিশ্বব্যাংককে অর্থ না দেওয়ার জন্য এক ধরনের প্রচারণা করেছিল। আর বিশ্বব্যাংক যেহেতু মার্কিন প্রশাসন দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত, মার্কিন প্রশাসনই বিশ্বব্যাংকের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ে, তাই মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশেই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করেনি বিশ্বব্যাংক। কিন্তু এর ফলে বিশ্বব্যাংক একটি বড় উন্নয়ন বিজ্ঞাপন থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করলো।

পদ্মা সেতুতে যদি বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করতো তাহলে তারা প্রমাণ করতে পারতো যে, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তারা বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন দেশে বিশ্বব্যাংকের নির্ভরতা বাড়তো এবং বিশ্বব্যাংক প্রশংসিত হতো। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করলে বিশ্বব্যাংক এটাকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে পারতো। বিভিন্ন দেশে বিশ্বব্যাংক কি করতে পারে, তার উদাহরণ হিসেবে পদ্মা সেতুকে দেখাতে পারতো। আর সে কারণেই পদ্মা সেতুর যখন উদ্বোধন হচ্ছে, তখন বিশ্বব্যাংকের অনেক গবেষকই বিশ্বব্যাংকের এ সিদ্ধান্তে হতাশ। অনেকেই মনে করছেন, এটি বিশ্বব্যাংকের সেরা ভুলগুলোর একটি। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭