প্রেস ইনসাইড

‘মফস্বল সাংবাদিকরা ইলিশে সন্তুষ্ট, আমাদের নজর প্লট-ফ্ল্যাটে’


প্রকাশ: 23/06/2022


Thumbnail

সাংবাদিকতা পেশার নানা সংকটের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু বিষয় উঠে এসেছে গণমাধ্যমকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে এক আলাচনায়। এতে সাংবাদিকদের বিভক্তির বিষয়টি যেমন আসছে, তেমনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা ও ঘাটতি নিয়েও কথা হয়েছে।

বুধবার (২২ জুন) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় এসব নিয়ে কথা বলেছেন সাংবাদিক নেতারা। ‘সুশাসনে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির জন্য নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ নামের প্রকল্পের ফলাফল নিয়ে এই সভার আয়োজন করা হয়। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই)। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ছয়টি বিভাগের ৭৫৬ জন ব্যক্তিকে নিয়ে কাজ করা হয়। এসব ব্যক্তির মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিকেরাও ছিলেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘বলা হয় মফস্বলের সাংবাদিকেরা দুর্নীতিবাজ। আমিও মফস্বল থেকে আসা মানুষ। ওরা ডিসি–এসপির সাথে ঘোরে। বড়জোর মাসে হাজার দুয়েক টাকা পয়সা, দু–চারটা ইলিশ মাছ কেনে। সে ইলিশ মাছেই তারা সন্তুষ্ট। তাদের আর দুর্নীতির কিছু নাই। অন্যদিকে আমরা যারা ঢাকায় আছি, আমাদের তো ইলিশ মাছ না, প্লটের দিকে নজর, ফ্ল্যাটের দিকে নজর, বিদেশ সফরের দিকে নজর, প্রকল্পের দিকে নজর। কাজেই ওরা ছোট দুর্নীতি করে। আমরা বড় দুর্নীতি করি। দু্টিই ভালো সাংবাদিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে এমন কাজের বিষয়ে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘আমাদের বাইরেও আমাদের কেউ ওয়াচ করছে এটা ভালো দিক। এতে বাইরের লোকেরা আমাদের ভুলত্রুটি ধরতে পারবে। কারণ, রাজনৈতিকভাবে আমরা বিভক্ত। হয়তো আমার ভুল আমি ধরতে পারব না। আরেকজনের ভুল নিয়ে চিল্লাচিল্লি করব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সুশাসনের মধ্যে থাকব না, অথচ রাষ্ট্রীয় সুশাসনের জন্য লড়াই করব। এটা তো হতে পারে না।’

বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, টেলিভিশনের বুমটা (মাইক্রোফোন) রাজনীতিবিদের কাছে আকর্ষণীয় বিষয়। আর সাধারণ মানুষের কাছে ভীতির বিষয়। সাধারণ মানুষের ধারণা, টেলিভিশনে কি–না–কি দেখিয়ে দেবে, পরে মানসম্মান যাবে।

টাকার বিনিময়ে মফস্বল সাংবাদিকদের হাতে বুম তুলে দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগও পেয়েছেন বলে দাবি করেন ওমর ফারুক। যেমন চট্টগ্রামের একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানকার এক সাংবাদিক ঢাকার একটি অফিস থেকে ১০ লাখ টাকায় একটি টেলিভিশনের বুম নিয়েছেন। ছয় মাস না যেতেই তাঁকে বাদ দিয়ে আরেকজনের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে বুমটা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে ১০ লাখ টাকা দেওয়া ব্যক্তি তাঁর কাছে এসেছেন। পরে তাঁরা ওই টেলিভিশনের মালিকের কাছে যান। তখন ওই মালিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি এমন ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন। পরে ‘সিকিউরিটি মানির’ বিষয়টি লেখা স্ট্যাম্প বের করে দেখালে মালিক বললেন, ‘ও.. দিয়েছিল। তারা তো চাঁদাবাজি করে, এটার জন্য আমি ১০ লাখ টাকা নিয়েছি।’

ওমর ফারুক বলেন, ওই মালিক তখন টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য এক মাস সময় নিলেও এখন আর ফোন ধরছেন না। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। সারা দেশে এমন বিশৃঙ্খলা চলছে। তিনি বলেন, দু–একটা টেলিভিশন আগে বেতন দিত। তারাও এখন বেতন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুক বলেন, ‘হাতে বুম দিয়ে বলা হচ্ছে এটা নিয়ে যাও, এটা নিয়ে তুমি করে খাও। আমারে এটা দিয়ো, তুমি এটা নিয়ো।’

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো বিভাজন। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যদি রাখতে চাই, তাহলে আমাদের দল মতনির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি নয়। রাজনৈতিক আদর্শ থাকতে পারে কিন্তু একজন পেশাজীবী সাংবাদিক হিসেবে, ইউনিয়নের নেতা হিসেবে কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করব না। এটা বিশ্বাস করে সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে আজকের দুর্বলতা থেকে মুক্ত হতে পারব।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমকে সমাজের একটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করাটা বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। গণমাধ্যমে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এখন প্রান্তিক শ্রেণিতে পরিণত হয়েছেন। মফস্বল সাংবাদিকেরা সেই প্রান্তিক শ্রেণির একটি উপশ্রেণি। তাঁদের অবস্থা বিচার করে বাংলাদেশের সুশাসনের অবস্থা বিচার করা ভুল হবে। তিনি বলেন, সুশাসনকে কার্যকর করতে হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা সুবিধামতো কিছু আইন করে। তখন তারা সুবিধা নেয়। যখন চলে যায়, তখন তাদের ওপর ওই আইন প্রয়োগ করলে এর প্রতিবাদ করে। নিবর্তনমূলক আইন তৈরি করে তারা এর সুবিধা নেয়। সরকার চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নয়। আইন কিন্তু থেকে যায়। যখন আইনটা করে তখন তারা খেয়াল করে না তারা কী আইন করছে। যখন ক্ষমতা থাকবে না, তখন এই আইনের শিকার হবে কি না, তা তারা ভাবে না।’

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। আর সঞ্চালনায় ছিলেন বিইআইয়ের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭