ইনসাইড বাংলাদেশ

চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা, আমরা কতটুকু প্রস্তুত?


প্রকাশ: 23/06/2022


Thumbnail

সপ্তাহ ধরে করোনার সংক্রমণ বেশ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অনেকটা গাণিতিক হারে। গত ছয় দিন ধরে শনাক্তের হার পরীক্ষার বিপরীতে ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। এই চিত্র শুধু বাংলাদেশে নয়, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশেই করোনার ঢেউটা এখনো রয়েছে। পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে এখন তৃতীয়-চতুর্থ ঢেউ চলছে। এখন বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে জার্মানিতে। অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ব্রাজিল। প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, ইতালি, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। এরকম কিছু কিছু দেশে করোনার শনাক্ত বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে। দেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

গত এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে ৩৮৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এই বৃদ্ধির হার ছিল ১১৮ দশমিক ১ শতাংশ। তবে গত দুই সপ্তাহে দেশে করোনায় কারো মৃত্যু না হলেও গত ২০,২১ ও ২২ জুন একজন করে মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার (২২ জুন) দেশে এক দিনে করোনা শনাক্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে, দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট বা উপ-ধরন শনাক্ত হয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক বিএ.৪/৫ (BA.4/5) নামের নতুন এ সাব-ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত করেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, গত ৬ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৩৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর গত ১৩ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৫২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ২১২ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

এদিকে, গত ২৩ মে থেকে ২৯ মে দেশে করোনা শনাক্ত নিম্নমুখী ছিল। ওই সপ্তাহে ২১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর পরের সপ্তাহে সংক্রমণ আরও কমে আসে। ৩০ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ২১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আগের সপ্তাহের তুলনায় শনাক্তের হার কমে দাঁড়ায় এক দশমিক ৯ শতাংশে। তবে এর পরবর্তী সপ্তাহ থেকেই করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়তে থাকে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ ১১৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে যায়। আর গত সপ্তাহে দেশে করোনা শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৪ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, করোনা আবার নতুন করে ঢেউ তৈরি করবে কিনা সেটা আসলে বলা মুসকিল, যেহেতু আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও কিছুটা বাড়ছে। সেটা অবশ্য বিপজ্জনক পর্যায়ে না, কিন্তু বলা যায় না, এটা আবার যেকোনো সময় বাড়তে পারে। এখানে আবহাওয়ার একটা প্রভাব থাকে। আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের দেশে এখন আর কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। সেজন্য একটা ঝুঁকি কিন্তু রয়েই গেছে। করোনা একটি ভাইরাস, তাই সুনিদিষ্টভাবে বলা মুসকিল। এটা যেকোনো সময় এর চরিত্র বদলাতে পারে। আবার নতুন কোনো চরিত্র ধারণ করতে পারে। আবার নতুন ঢেউ আসতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, বিশ্বব্যাপী ইদানিং করোনা সংক্রমণ আবার বাড়ছে। বিশেষ করে ইউরোপে আরও বাড়ছে। সুতরাং আমাদের দেশেও আবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু হবে না।

স্বাস্থ সেবা সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আমাদের দেশের পরিস্থিতি এখন সেই বিপজ্জনক পর্যায়ে নেই। কিন্তু ঝুঁকি তো আছেই। সেজন্য দেশের জনগণকে একটু সচেতন হবে হবে, সবাইকে স্বাস্থবিধি মানার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যারা এখনো টিকা নেন নাই বা নিচ্ছেন না তাদের টিকা নেওয়া উচিত। তারা বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে এখন মানুষ অনেক বেশি উদাসীন। সবাই এখন করোনার পূববর্তী স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। পরিস্থিতি এমন যে, সামনে করোনার চতুর্থ ঢেউ আসলে সেটা সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ মানুষ এখন মাস্ক পরতে ভুলে গেছে, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার চর্চা এখন মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। হাট বাজার বা শপিং মলগুলোর মতো জন সমাগম জায়গা গুলোতে স্বাস্থবিধি মানার কোনো বালাই নেই। সামনে ঈদ  আসছে, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ব্যাপক জন সমাগম হবে। সংক্রমণ বাড়ার একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করবে। ফলে চতুর্থ ঢেউ আমরা কিভাবে মোকাবিলা করবো সেটা একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরাই বা কতটুকু প্রস্তুত আছি চতুর্থ ঢেউ মোকাবিলা করার জন্য।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭