ইনসাইড পলিটিক্স

তারেক জিয়া কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হবেন?


প্রকাশ: 23/06/2022


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। দেশের বন্যা পরিস্থিতি এবং পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নীতিনির্ধারণী বক্তব্য দেন, বিভিন্ন খোলামেলা কথাবার্তা বলেন। সব প্রশ্নের উত্তর দেন ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যেতে গেলে একজন নেতা লাগে, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে প্রধানমন্ত্রী কে হবে? শেখ হাসিনা এটিও বলেন যে, বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলে কি চেয়ারপারসন করার মতো একজন লোক খুঁজে পাওয়া গেলো না? প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরপরই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী হবেন বেগম খালেদা জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়া যদি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণে অক্ষম হন, তাহলে সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তারেক জিয়া। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ বক্তব্যে আইন প্রণেতা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্নের উদয় হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি জেনেবুঝে এই কথা বলেছেন?

যে কারণে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না আরও দশ বছর, ঠিক একই কারণে তারেক জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না আরও ১০ বছর। বেগম খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দণ্ডিত আসামি। কাজেই তিনি নির্বাচনের জন্য অযোগ্য। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, একজন নাগরিক যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য দণ্ডিত হন, তাহলে তিনি পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হবেন। আর বেগম খালেদা জিয়ার মোট কারাদণ্ড ১৭ বছর। এই ১৭  বছরের পর যদি তিনি বেঁচে থাকেন এবং সেই নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনেও তিনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। অর্থাৎ ২৩ বছর বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি দুটি সাজা একসাথে ভোগ করতে হয়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে আরও দশ বছর কারাভোগ করতে হবে এবং এই কারাভোগ শেষ হওয়ার পর যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনেও তিনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

বেগম খালেদা জিয়া যে কারণে নির্বাচনে অযোগ্য, ঠিক একই কারণে তারেক জিয়াও নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। তারেক জিয়াকে দেশের হাইকোর্ট বিভাগ একটি অর্থ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং সেখানে তাকে সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর এ সমস্ত কোনো মামলাতেই তারেক জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। ফলে আইনে তার আপিল করার যে আইনি সময়সীমা সে সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে। কাজেই, আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দেখা যায় যে, খালেদা জিয়ার চেয়েও তারেক জিয়ার অবস্থা আইনগতভাবে অত্যন্ত নাজুক। খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করেছেন এবং পরবর্তীতে আপিল বিভাগে এটি নিষ্পত্তি হবে এবং আপিল বিভাগের রায়ের উপর নির্ভর করবে তিনি আসলে নির্বাচন করতে পারবেন, কি পারবে না। কিন্তু তারেক জিয়া যেহেতু আইনের দৃষ্টিতে একজন পলাতক, কাজে তিনি এখন আপিল করারও আইনগত অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। কাজেই, যাবজ্জীবন সাজা শেষ হওয়ার পর আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করে তবেই তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। তাহলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিসের ভিত্তিতে বললেন যে, তারেক জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন? তাহলে কি তারা দেশের আইন-সংবিধান মানে না? তারেক জিয়াই যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে সংবিধান লঙ্ঘন করতে হবে এবং বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে অস্বীকার করতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি সেটাই করতে চান?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭