ইনসাইড থট

পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের ক্ষমা করে দিস


প্রকাশ: 24/06/2022


Thumbnail

প্রিয় বন্ধু মাহে আলম ও আনু,

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে তোদের দুজনের কথা খুব মনে পড়ছে। খুব খারাপ লাগছে। তোরা জানিস কিনা জানি না। আগামীকাল সকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রমত্তা পদ্মার বুকে নির্মিত পদ্মাসেতু উদ্বোধন করবেন। সারা দেশ তাই আনন্দে উদ্বেলিত। খুশির জোয়ারে ভাসছে সবাই। তোদের আর আমার মত যাদের বাড়ি ভোলা, ফরিদপুর বা যশোরে- তারা জানে এ সেতুর মর্ম। তোরা তো জীবন দিয়ে সেটা প্রমান করে গেলি। যারা আরিচা গোয়ালন্দ পাড়ি দিয়েছে ফেরি, লঞ্চ আর স্পিড বোটে তাদের মধ্যে তো খুশির জোয়ার বইবেই। এসব শুনে কি তোদের মন খারাপ লাগছে? তবে আজ আরো অনেকেরই মন খারাপ। যারা ষড়যন্ত্র করে পদ্মা সেতু নির্মাণ বন্ধ করতে পারেনি, আজ তাদের মন খুব বেজার। যারা বলেছিলো এ সরকার পদ্মা সেতু করতে পারবে না, তাদের মন তো খারাপ হবারই কথা। যারা বলেছিলো জোড়াতালির পদ্মা সেতুতে উঠবেন না। রিস্ক আছে। তাদের তো আতে ঘা লাগবারই কথা।

শুনলাম, আমাদের শৈশব কৈশোরের শহর বরিশাল থেকে অর্ধশত লঞ্চের মিছিল যাচ্ছে জাজিরায়। সরাসরি লঞ্চ মিছিলটি দেখতে পারলে ভালোই লাগতো। কিন্তু সম্ভব না। আমি আছি প্রবাসে। আর তোরা তো এখন তারা হয়ে আকাশে। আচ্ছা, তোরা কি উপর থেকে সব কিছু দেখতে পারিস? দেখতে পারলে তো ভালোই হতো। লঞ্চ মিছিলটি দেখতে পারতি। লঞ্চ মিছিলের কথা শুনেও তোদের ভালো লাগছে না? বুঝেছি। তোদের আর বিশ্ব ব্যাংকের পেছনে লাগাদের খারাপ লাগার কারণ এক না। তোরা হয়ত ভাবছিস, পদ্মা সেতু আরো আগে হলে তোদেরকে প্রমত্তা পদ্মায় ডুবে মরতে হতো না। ঠিকই তো। সেদিন তোরা লঞ্চ বা স্পিড বোটে পদ্মা পাড়ি না দিলে তোরা ওভাবে মরতি না। হ্যা রে, পানিতে ডুবে মরতে তোদের কি খুব কষ্ট হয়েছিল? আজকের এই সেতুটি থাকলে তোরা কি সেদিন লঞ্চ বা স্পিড বোটে উঠতিস। নিশ্চয়ই না। পদ্মা সেতু থাকলে হয়ত সেদিন বেঁচে যেতি। অকালে মরতে হতো না। কি জানি? বেঁচে থাকলে হয়তো দুজনেই আজ ডাক্তার হিসাবে দেশ দশের সেবা করতে পারতিস।

বন্ধু আনোয়ার হোসেন আনু, তোর জন্য একটু কম খারাপ লাগছে। তোর মৃত্যুর তারিখ ২৩ মে ১৯৯৬। তখন এ সেতু নিয়ে মাত্র কথাবার্তা শুরু হয়েছে। কিন্তু বন্ধু মাহে আলম, তোর জন্য আজ আমার বেশি কষ্ট হচ্ছে। কান্না পাচ্ছে। স্পিড বোট দুর্ঘটনায় তুই হারিয়ে গেছিস ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর। সরকার এপ্রিল ২০১০ সালে এ প্রকল্পের জন্য প্রাক-যোগ্যতা টেন্ডার আহ্বান করে। সেতুর নির্মাণ কাজ ২০১১ সালের প্রথম দিকে শুরু করার কথা ছিল। সেতুটি প্রস্তুত হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের শেষের দিকে। দেশি বিদেশী চক্রান্তে বিশ্ব ব্যাংক সেদিন অর্থায়ন থেকে সরে না গেলে হয়ত ওই সময়ের মধ্যে সেতুটি হয়ে যেত। তাহলে তোকে আর সেদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিড বোটে উঠতে হতো না। বন্ধুরা আমার, দেশি বিদেশী এসব কুচক্রীদের  ক্ষমা করে দিস। ওদের অনেকেই আমাদের এ দেশের সন্তান। হয়তো দেশপ্রেমের একটু অভাব রয়েছে। তবুও---। ওদের প্রতি রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ পুষে রাখিস না। অভিশাপ দিস না। শুধু দোআ করিস, আল্লাহ যাতে ওদেরকে হেদায়েত করেন। ভবিষ্যতে ওরা যাতে তোদের মতো আর কারো মৃত্যুর কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।

ইতি
তোদের সহপাঠী বন্ধু কামরুল
১৮ তম ব্যাচ, ১৯৮৬-৮৭ শিক্ষাবর্ষ
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭