এডিটর’স মাইন্ড

পদ্মা সেতু: ক্যারিয়ার বদলে দিলো এক আমলার


প্রকাশ: 25/06/2022


Thumbnail

আজ আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলো। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। খন্দকার আনোয়ার পদ্মা সেতুর কারণেই তার ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। পদ্মা সেতু নিয়ে ঘটনাপ্রবাহের আগে তিনি অনেকটাই আলোচিত এবং উপেক্ষিত ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ব্যাচের কর্মকর্তা খন্দকার আনোয়ার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই ব্যাচের সবচেয়ে আলোচিত আমলা ছিলেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যখন শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা। এ কারণে নজরুল ইসলাম খান অনেক বিপদসংকুল পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন, অনেক কঠিন সময় পার করেছেন। এমনকি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার তাকে তার প্রাপ্য গাড়িটিও দেননি। এরকম কষ্ট, নির্যাতন এবং পদোন্নতি বঞ্চিত থাকা অবস্থায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এন আই খান প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত একান্ত সচিব, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এই ব্যাচের সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত ছিল যে, এই ব্যাচকে বলা হতো টিকচিহ্ন ব্যাচ। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন প্রথম উপজেলা ব্যবস্থা চালু করেন তখন উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য তড়িঘড়ি করে একটি বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করা, যে বিসিএস ব্যাচটি টিকমার্ক দিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তখন কথা ছিলো যে, শুধুমাত্র তারা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই ব্যাচের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয় এবং এই রিটে তারা বিজয়ী হয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে যুক্ত হয় ৮৩ এর এই ব্যাচটি। এই ব্যাচের অনেক মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অনেকেই এই ব্যাচ থেকে নানাভাবে আলোচিত হন। আবার এই ব্যাচ থেকেই মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট জালিয়াতি বা বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অবসরেও গিয়েছিলেন। এসব আলোচনা-সমালোচনা বিতর্কের উর্ধ্বে ছিলেন খন্দকার আনোয়ার। তিনি নিভৃতে কাজ করতেন। কিন্তু যখন পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং তৎকালীন যোগাযোগ সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, ঠিক সেই সময়ে খন্দকার আনোয়ারকে দেওয়া হয় সেতু বিভাগের দায়িত্বে।

খন্দকার আনোয়ার একজন সৎ, পরিশ্রমী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনেকেই তাকে কোনো ঘরোনার নয়, কর্ম পাগল একজন ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতো। কিন্তু সেতু মন্ত্রণালয়ের পান তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় মধ্যে। এরকম পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়ে তিনি তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়টি পার করেন। মূলত তার বিচক্ষণতা, কর্ম তৎপরতা এবং সততার কারণে পদ্মা সেতু নিয়ে নতুন কোনো বিতর্ক হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর যে আস্থা রেখেছিলেন সেই আস্থার প্রতিদান তিনি খুব ভালমতোই দেন। আর এই এটিই তার ক্যারিয়ার বদলে দেয়। পদ্মা সেতুর সাফল্যের কারণেই সেতু বিভাগ থেকে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হন, যদিও আমলাতান্ত্রিক হিসাব-নিকাশে তার মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার কথা ছিল না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর আরও আস্থাভাজন হন। এজন্য তিনি দুদফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। একজন সৎ, পরিশ্রমী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি পরিচিত। তার সততা, যোগ্যতাই তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যেটি সম্ভব হয়েছে পদ্মা সেতুর কারণে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭