ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামে পদ্মা সেতু


প্রকাশ: 25/06/2022


Thumbnail

সব জল্পনা-কল্পনা পেছনে ফেলে পদ্মার বুকে বাস্তবে ধরা দিল বহুল কাঙ্খিত পদ্মা সেতু। খরস্রোতার এপার ওপার এক সেতুবন্ধনে আবদ্ধ হলো। স্বপ্নসত্যির এই মাহেদ্রক্ষণে শনিবার (২৫ জুন) বর্ণিল উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশের দীর্ঘতম ও বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বিরল ও ঐতিহাসিক এই দিনটিতে বাংলাদেশের সাহসী এই পদক্ষেপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্ব মিডিয়া। আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমের খবরের শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খবর। 

মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট প্রেস (এপি) এর শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতুর উদ্বোধন’। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার দেশের দীর্ঘতম সেতুর উদ্বোধন করেছেন। রাজনৈতিক সংঘাত আর দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে এই সেতু তৈরি করতে সময় লেগেছে আট বছর।

এপি লিখেছে, জনসাধারণের জন্য রোববার খুলে দেওয়া হবে সেতুটি। এর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে।

ঢাকা থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এটি আমাদের আবেগ, সৃজনশীলতা, সাহস, সহনশীলতা এবং অধ্যবসায়ের ফল।’

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, দুর্নীতির অভিযোগ, মানব বলির গুজব ছড়িয়ে পিটুনির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডসহ নানা ঘটন-অঘটনের পর শনিবার রাজধানী ঢাকার কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ।

আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির দীর্ঘতম পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার প্রায় আট বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মূল অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এই প্রকল্পে কর্মকর্তাদের ঘুষের অভিযোগে কানাডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এসএনসি-লাভালিনকে এক দশকের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে দরপত্রে অংশ নেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কানাডার প্রসিকিউটররা এই কোম্পানির নির্বাহীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পাননি।

পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা বলি দিতে হবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ৮ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ধরনের নানা ঘটনার পর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের দীর্ঘদিনের এক স্বপ্নের দুয়ার খুলেছে শনিবার।

‘বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেল-সড়ক সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার দেশের দীর্ঘতম এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের সড়ক-রেল সেতুটি রাজধানী এবং অন্যান্য অঞ্চলের সাথে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগকারী পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে।

বহুমুখী সড়ক-রেল সেতুটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এনডিটিভি লিখেছে, বাংলাদেশের এই সেতুর উদ্বোধন অনেক তাৎপর্য বহন করে। অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও তা উড়িয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। তবে আমি মনে করি যারা পদ্মা সেতু নির্মাণ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন এবং এটাকে ‘পাইপ ড্রিম’ বলেছিলেন, তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। আমি আশা করি এই সেতু তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া ট্যুডে বলছে, শনিবার পদ্মা নদীর ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেল-সড়ক সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশাল পরিবর্তনের গল্পের শুরু হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এটি বাংলাদেশের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প।

এছাড়াও ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুুস্তান টাইমস, আনন্দবাজার, দ্য হিন্দু, মধ্যপ্রাচ্যের গালফ নিউজ, খালিজ টাইমস, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। 

এদিকে শনিবার (২৫ জুন) কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা লিড শিরোনাম করেছে ‘পদ্মা সেতু: জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়! পদ্মা সেতু উদ্বোধনে হাসিনার কণ্ঠে সুকান্ত’। এমনকি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি তাদের ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। 

ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের বাংলা সংস্করণও লাইভ আপডেট জানিয়েছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের। স্মারক নোট প্রকাশ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর টোল পরিশোধের খবর ধারাবাহিকভাবে উঠে এসেছে তাদের প্রতিবেদনে।

সংবাদ প্রতিদিন লিখেছে, ‘শত বাধা পেরিয়ে তৈরি স্বপ্নের পদ্মা সেতু, বাংলাদেশকে অভিনন্দন আমেরিকা ও চীনের’।

ইটিভি ভারতের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পদ্মা সেতু: ঢাকা-কলকাতা আরও কাছাকাছি, বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনে শেখ হাসিনা’।

এবিপি আনন্দ লিখেছে, ‘সড়কপথে এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলায় পৌঁছানোর দূরত্ব কমাবে পদ্মা সেতু’।

প্রতিবেদনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণের কথা উল্লেখ করেছে ভারতের টাইমস গ্রুপের বাংলা সংবাদমাধ্যম এই সময়। তাদের শিরোনাম, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা’। সেতুটি নির্মাণে কত খরচ হয়েছে তা নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন করেছে তারা।

কলকাতার জাতীয় দৈনিক আজকালের শিরোনাম, ‘বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বুকে: শেখ হাসিনা’।

বার্তা সংস্থা এএনআই লিখেছে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের স্বপ্ন সত্য হলো: পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’। দ্য ইকোনমিক টাইমস এবং টাইমস অব ইন্ডিয়াও একই খবর প্রকাশ করেছে।

দ্য হিন্দু পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু খুললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’।

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের শিরোনাম, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বললেন স্বপ্ন সত্য হয়েছে’।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের খবরের শিরোনাম, বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। তাদের এই খবর প্রকাশ করেছে এবিসি নিউজ, টরন্টো স্টারের মতো বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক দৈনিক দ্য স্ট্রেইট টাইমস শুক্রবার পদ্মা সেতু নিয়ে বিশদ এক প্রতিবেদন করেছে। তাদের শিরোনাম, ‘বিদেশি ঋণের ফাঁদ, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়িয়েছে বাংলাদেশের নতুন সেতু’।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭