ইনসাইড বাংলাদেশ

নতুন দিনের অপেক্ষায় পদ্মার দুই পারের মানুষ


প্রকাশ: 26/06/2022


Thumbnail

স্বপ্নের পদ্মা সেতু শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো। আজ রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সেতুটি। এর মধ্য দিয়ে মাত্র ৬ মিনিটেই পদ্মার এপার থেকে ওপারে যাওয়া যাচ্ছে। আর এই পারাপার নতুন দিনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। রাতে, দিনে, ঝড়ে, বন্যায়, কুয়াশায় সড়কপথে যোগাযোগের আর কোনো বাধা থাকলো না। এছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন হলো  এই সেতু চালু হওয়ায়। সে কারণেই নতুন দিনের অপেক্ষায় পদ্মার দুই পারের মানুষ।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যোগাযোগের নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। ঢাকাসহ পুরো দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা। এদিন বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে শুরুটা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বহরে থাকা ১৮টি যানবাহনের জন্য ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল তিনি নিজ হাতেই দেন। প্রধানমন্ত্রী নিজের গাড়িবহর নিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে খোলেন যোগাযোগের দ্বার।

পদ্মা সেতু এমন এক সেতু যেটা দুই পাড়ের মানুষকে একই সুতোয় গেঁথেছে। এই সেতুতে জমি দিয়ে সহায়তা করেছে দুই পাড়ের হাজারো মানুষ। কেউ জমি দিয়ে, কারও মেধায়, কেউ শ্রমিক হিসেবে শ্রম দিয়ে প্রায় সাড়ে সাত বছরের চেষ্টায় পদ্মা সেতু দুই পারের সেতুবন্ধ তৈরি করেছে। 

যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল, বাংলাদেশে সেই প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন মাওয়ায় সুধী সমাবেশের সামনের সারিতেই ছিলেন। পরনে ছিল বাঙালি নারীর চিরায়ত পোশাক শাড়ি। হাসিমুখে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। আমরা এই সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ বিপুল অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে।’

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ায় সুধী সমাবেশস্থলে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা। আমি তাদের স্যালুট জানাই।’

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে যাঁরা সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদের এই সেতু দেখে সাহসী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশবাসীর সঙ্গে তিনিও আজ আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। তিনি বলেন, ‘অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্ত পদ্মার বুকে আজ বহুকাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট, স্টিল, কংক্রিটের অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, সৃজনশীলতা, সাহসিকতা আর জেদ।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি জানতাম পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোনো ষড়যন্ত্র হয়নি। এ জন্যই এই সেতু নির্মাণে আমার জেদ চাপে।’ নিজেদের টাকায় এই সেতু নির্মিত হলে অর্থনীতি, অগ্রগতি স্থবির হয়ে যাবে—অনেকের এমন ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি ধসে পড়েনি। বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছি, আমরাও পারি। তাই পদ্মা সেতু বাঙালির আত্মমর্যাদা ও সক্ষমতা প্রমাণের সেতু শুধু নয়, পুরো জাতিকে অপমান করার প্রতিশোধও।’

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের যে গঞ্জনা-অপবাদ সইতে হয়েছে, তা তুলে ধরেন। স্মরণ করেন পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যার ঘটনা। স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতাকে। একপর্যায়ে তিনি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন, চোখও মোছেন।

১৯৯৮ সালে প্রাক্‌-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাত্রা শুরু। নির্মাণ শেষ হলো ২০২২ সালে এসে। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

সেতুর অভাবে এত দিন দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষকে মাওয়া-কাওড়াকান্দি কিংবা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পাড়ি দিয়ে বাড়ি যেতে হয়েছে। ঝড়ের দিনে, ঘন কুয়াশায়, অত্যধিক স্রোতে, নদীর নাব্যতাসংকট, ফেরি বন্ধ থাকার এমন বহু কারণ হুটহাট ঘটে গেছে। কেউ বাড়িতে যাবেন অসুস্থ মাকে দেখতে, কারও স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। কেউ হয়তো ছোট সন্তানকে দেখেন না কয়েক মাস। বাড়ির পথ ধরে ঘাটে এসে আটকে গেছেন। তখন অপেক্ষায় থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এখন সেতু চালু হওয়ায় চলাচলে তাদের স্বাধীনতা এসেছে। এই স্বাধীনতা দুই পারের মানুষকে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। নতুন দিনের অপেক্ষায় রয়েছে পদ্মার দুই পারের মানুষ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭