গত ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বার খুলেছে পদ্মা সেতুর। পারাপার শুরু করেছে মানুষ। বিশ্বে নতুন পরিচয়ে বাংলাদেশ। সে নতুন পরিচয় হলো সক্ষমতার পরিচয়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু। অনেক প্রশ্ন আর অনেক ষড়যন্ত্রের সরষ ও নীরব উত্তর এখন এই সেতু। পদ্মা সেতু যেন না হয় সেজন্য যেমন দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে, তেমনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেন না হয় তার জন্যও হয়েছে নানা ষড়যন্ত্রের তৎপরতা। বিলি করা হয়েছিল পদ্মা সেতু বিরোধী প্রচারপত্র। উদ্বোধন হয়ে গেলেও থেমে নেই ষড়যন্ত্র, শুরু হয়েছে নতুন করে। জনসাধারণের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রথম দিনেই আবার নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সবার জন্য সেতু খুলে দেওয়ার পর এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে সেতুকে কেন্দ্রে করে। কে প্রথম টোল দিল, কে প্রথম সেতু পাড়ি দিল-এ রকম নানা চর্চা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হলো সেতুতে উঠে নোংরামি করা। সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমগুলোতে দেখা গেছে যে, অনেকে নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা করেছে সেতু ব্যবহারের নির্দেশনা।
নির্দেশনা অমান্য করে অনেকে সেতুতে মোটরসাইকেল নিয়ে উঠে সেতুর মাঝ পথে থেমে করেছেন টিকটক ভিডিও। এই উচ্ছ্বাসের ভিড়ে ঘটেছে একাধিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও। দুজন টিকটকার সেতুর মেটাল ব্যারিয়ারের নাট-বল্টু খুলে নেওয়ার ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেতুতে একজনের মূত্রত্যাগের ছবিও ছড়িয়েছে। এসব নিয়ে দিনভর আলোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অবশ্য নাট-বল্টু খুলে নেওয়া এক টিকটকার ধরাও পড়েছেন। অন্যদেরও ধরতে কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন।
জানা গেছে, পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলে গ্রেফতার হওয়া মো. বায়েজিদ মৃধা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বায়েজিদ পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের তেলীখালী গ্রামের আলাউদ্দিন মৃধার ছেলে। পটুয়াখালীতে থাকাকালে তিনি ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী মো. আশফাকুর রহমান বিপ্লবের অনুসারী ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা।
মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুর উপরে উঠে মাঝ পথে থেমে টিকটিক ভিডিও করাকে অতি উৎসাহী হিসেবে মেনে নিলেও সেতুতে উঠে নাট-বল্টু খোলা কখনোই মেনে নেওয়ার মতো নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এটি শুধু নিছক কোনো ঘটনাই নয়, একটি নাশকতা। আমরা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে লক্ষ্য করেছি যে, বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ড। আমরা নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে নিয়েছিলাম সে সব ঘটনা। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সেতু উদ্বোধনের আগে নাশকতার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছিলেন। কাজেই এটাকে নিছক ঘটনা হিসেবে নেওয়া যায় না। বিশ্লেষকরা বলছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে একটি মহল অনেকদিন ধরে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। পদ্মা সেতুর স্ক্রু খোলার বিষয়টি তারই নমুনা। এটিকে একটি পরিকল্পিত এবং নাশকতা হিসেবেই দেখছেন তারা। তারা বলছেন যে, সেতু নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে সরকারকে বেকদায় ফেলার পূর্ব কল্পিত চেষ্টা এটি।