ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

শেখ হাসিনার ভারত সফরে গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা ইস্যু


প্রকাশ: 29/06/2022


Thumbnail

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতিবেশী এই দেশটিতে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সফরের এজেন্ডায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ইস্যুটি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বুধবার (২৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এএনআই’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দ্বিপাক্ষিক সফরে ভারতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসনের ফলে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যার বিষয়টি উত্থাপন করবেন। এর মধ্যে মৌলবাদ বৃদ্ধি, মাদক পাচার এবং নারী ও শিশুসহ মানব পাচারের বিষয়টি রয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব মোমেন বলেছেন, ‘আমাদের কাছে একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান হলো (রোহিঙ্গাদের) তাদের রাখাইন প্রদেশে (মিয়ানমার) প্রত্যাবাসন। আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করবেন তখন তিনি এই বিষয়টিও উত্থাপন করবেন যে, এই প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় ভারত কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে।’

মোমেন আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করছি যে, এই বিশাল জনসংখ্যা অর্থাৎ দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে কেবল সহায়তা করাই নয়, একইসঙ্গে আমাদের এই সমস্যার কিছু টেকসই সমাধানের দিকেও নজর দিতে হবে। আমাদের কাছে একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান হচ্ছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের রাখাইন প্রদেশে প্রত্যাবাসন।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন: ‘আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি, তবে আমি মনে করি অন্য দেশগুলো মিয়ানমারের সাথে সম্মত হলে সেটি (প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায়) কিছু সাহায্য বা সহায়তা করতে পারে।’

‘মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়েরই অভিন্ন প্রতিবেশী ভারত। তাই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে অতীতেও আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি এবং ভবিষ্যতেও এ ক্ষেত্রে দেশটিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য আমরা অনুরোধ অব্যাহত রাখব।’

মাসুদ বিন মোমেন বলছেন, ‘উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং টেকসই জীবিকার পাশাপাশি আবাসনের মতো সুবিধার মাধ্যমে যদি তারা (রোহিঙ্গারা) সঠিক উপযোগী পরিবেশ খুঁজে পায়, তাহলে তারা ফিরে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে হয়তো কিছু সাহায্যের প্রয়োজন হবে এবং মিয়ানমার সম্মত হলে ভারত সেই সহায়তা করতে পারে এবং এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য গেম-চেঞ্জার।’

বাংলাদেশের এই কূটনীতিক আরও বলেছেন, তিনি গত বছর সাবেক ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। এছাড়া সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান মোমেন।

তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করবেন, তখন ভারত কীভাবে রোহিঙ্গাদের এই প্রত্যাবাসনে আমাদের সাহায্য করতে পারে সেটি তুলে ধরবেন।’

বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের কুতুপালং-এ অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে বাস করে। বিপুল সংখ্যক এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু।

মোমেন বলেন, ‘এটি কক্সবাজারের একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা, আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি অংশকে ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে এটিকে ঘনবসতি-মুক্ত করার চেষ্টা করছি, তবে এটিও একটি অস্থায়ী সমাধান।’

এদিকে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি দেশে তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ। বেশ কিছু রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালান ও শিশু পাচারের মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এই অঞ্চলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মৌলবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এএনআই’কে বলেন, ৬০ শতাংশেরও বেশি রোহিঙ্গা (শরণার্থী) খুবই অল্পবয়সী। তাই সেখানে মৌলবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে  এবং স্পষ্টতই এটি মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

‘এটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই মাথাব্যাথার কারণ নয়, বরং (পার্শ্ববর্তী) অঞ্চলের জন্যও। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড যাওয়ার পথে নারী ও শিশুসহ মাদক ও মানব পাচার এবং আন্দামান সাগরের (ভারত) কাছেও আমরা কিছু কার্যকলাপ খুঁজে পেয়েছি।’ 

গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নেমেছে। তারা মূলত সেখানে আগে থেকেই বসবাসরত আরও ২ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগ হয়েছেন। আগেই সেখানে বসবাসরত ওই দুই লাখ রোহিঙ্গা ২০১৭ সালে সৃষ্ট সংকটের কয়েক বছর আগে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। রোহিঙ্গা এই শরণার্থী সংকট সাম্প্রতিক ইতিহাসে সৃষ্ট সবচেয়ে বড়, দ্রুততম সংকটগুলোর একটি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭