ইনসাইড বাংলাদেশ

অসত্য বক্তব্যে সাফাই গাইলেন ড. ইউনূস


প্রকাশ: 30/06/2022


Thumbnail

বয়স শেষ হলেও গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকার জন্য হিলারি ক্লিনটনের দ্বারস্থ হওয়া, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়ন বন্ধে দেনদরবার, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে তিন লাখ ডলার অনুদান এবং আরেকটি ফাউন্ডেশনকে ছয় মিলিয়ন ডলার অনুদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার আত্মপক্ষ সমর্থনে দেয়া বক্তব্যগুলো যে সম্পূর্ণ অসত্য সেটি একটু খতিয়ে দেখা যাক।

প্রথমত, ড. ইউনূসের বয়সসীমা পার হয়ে গেলেও তিনি এমডি পদে বহাল থাকতে চান। কিন্তু আইন অনুযায়ী তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারেন না, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। তিনি পদত্যাগ না করে এই পদে থাকার জন্য তিনি হিলারি ক্লিনটনের দ্বারস্থ হন। হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করিয়ে অনুরোধ করান তাকে যেন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে বহাল রাখা হয়। এরপর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

৬০ বছর বয়স হলেও গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে পদত্যাগ না করে পাল্টা মামলা করার প্রসঙ্গে জবাবে ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংক এমন একটি ব্যাংক যার ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক এর ঋণগ্রহীতারা। একটি আলাদা আইনের মাধ্যমে কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশ করে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ফলে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে এর পার্থক্য আছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয় এর পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে একটি চুক্তির অধীনে। এই নিয়োগের জন্য কোনও বয়সসীমা আইনে বা পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে উল্লেখ ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিয়মিত পরিদর্শন প্রতিবেদনগুলির একটিতে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিলে গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়টি ব্যাখ্যা করে। পরে ২০১১ সালে পদত্যাগ করতে বলায় গ্রামীণ ব্যাংকের মৌলিক আইনি মর্যাদা রক্ষায় তিনি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। এর সঙ্গে চাকরি ধরে রাখার কোনো সম্পর্ক নেই।

কিন্তু ড. ইউনূসের এই বক্তব্য অসত্য। কারণ ১৯৮৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংকের অর্ডিন্যান্স এর ধারা ১৪(১) অনুযায়ী এই ব্যাংকের এমডি'র নিয়োগ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমডি পদে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য একটি সিলেকশন কমিটি থাকে এবং সেই বাছাইয়ের ভিত্তিতে ব্যাংকের বোর্ড এমডি নিয়োগ করে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানও নিয়োগ করে সরকার। গ্রামীণ ব্যাংক একটি সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান বলেই আইনে এই নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতেই রাখা হয়েছে। তিনি হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছিল মূলত এমডি পদে বহাল থাকার জন্য।

হিলারি ক্লিনটনসহ বিশিষ্টজনদের দিয়ে ফোন করানোর বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. ইউনূসের অপসারণ বিশ্বব্যাপী সংবাদে পরিণত হয়েছিল। ড. ইউনূসকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না, তারা দেখতে চাইছিলেন গ্রামীণ কর্মসূচিগুলোর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। ড. ইউনূসের এই বক্তব্যও সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং হিলারি ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে বহাল রাখার অনুরোধ জানান।

দ্বিতীয়ত, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনসহ আরেকটি ফাউন্ডেশনে দেয়া অনুদান, ব্যক্তিগত হিসেবে ছয় কোটি টাকা নেওয়ার কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ সংক্রান্ত ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে বলে দাবী করেছেন ড. ইউনূস। এর কোন সঠিক তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি। কেবলমাত্র সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করে আত্মপক্ষ সমর্থনের একটি ব্যর্থ চেষ্টা করলেন ড. ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, অনুদান কিংবা কোনো উৎস থেকে টাকা আসলে সেটা প্রকাশ করতে হয়। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ড. ইউনূস ওই ফাউন্ডেশনে অনুদান দেন। কিন্তু বিবৃতি ড. ইউনূস এটি অস্বীকার করেন।

এপির তথ্য অনুযায়ী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে তিনবার দেখা করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং টেলিফোনে কয়েকবার কথা বলেছেন। ওই সময় বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব থেকে মুহাম্মদ ইউনুসকে পদত্যাগের জন্য বাংলাদেশ সরকার চাপ দিচ্ছিল। সে কারণে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করে সাহায্য চেয়েছিলেন মুহাম্মদ ইউনুস। এ সময় গ্রামীণ আমেরিকা, যে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ড. ইউনুস, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে এক লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। গ্রামীণ রিসার্চ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান,যেটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও রয়েছেন ড. ইউনুস, সেই প্রতিষ্ঠান থেকেও ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার অনুদান দেয়া হয়েছে।

শুধু ক্লিনটন ফাউন্ডেশন নয়, ড. ইউনূস আরও একটি ফাউন্ডেশনকে ছয় মিলিয়ন ডলার অর্থ দেওয়া এবং এক চেকে ছয় কোটি টাকা ব্যক্তিগত হিসাবে নিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে এটিকেও সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত বলে একই উত্তর দিলেন তিনি, যেখানে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা-প্রমাণ দিতে পারেননি।

তৃতীয়ত, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের ষড়যন্ত্রের অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন ড. ইউনূস। এই বিষয়ে ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ দুই বন্ধুর খেয়ালখুশি কিংবা একজন পত্রিকা সম্পাদকের সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার ওপরও নির্ভর করে না। প্রফেসর ইউনূস পদ্মা সেতু বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে কখনও কোনো অভিযোগ বা অনু্যোগ জানাননি। সুতরাং বিষয়টি নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত।

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের জন্য কথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকে চিঠি দেন ড. ইউনূস। সেই সাথে হিলারি ক্লিনটকে দিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে চাপও প্রয়োগ করেন তিনি। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের পেছনে একটি পত্রিকার সম্পাদককে সাথে নিয়ে ড. ইউনূস যে দেনদরবার করেছেন তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। এই প্রমাণিত অভিযোগকেও কেবল কল্পনাপ্রসূত বলা ছাড়া আত্মপক্ষ সমর্থনের আর কোন উপায়ও নেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।

অসত্য বক্তব্যে আত্মপক্ষ সমর্থনে সাফাই গাইতে যেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে কেবল একটিই যুক্তি উঠে এসেছে যে, সকল অভিযোগই 'কল্পনাপ্রসূত'। এছাড়া তিনি আর তেমন কোনো ব্যাখ্যাই দিতে পারেননি। অসত্য বক্তব্য দিয়ে ড. ইউনূস বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করলেও সেখানেও তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, তার এই বক্তব্যে যে অযৌক্তিক এবং মিথ্যা সেটি ইতোমধ্যে প্রমাণিত।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭