ইনসাইড বাংলাদেশ

পদ্মা সেতুর অর্জন ঢেকে যাচ্ছে লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে?


প্রকাশ: 08/07/2022


Thumbnail

গত ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরে দক্ষিণের দুয়ার খুলে গেছে। এবার ঈদযাত্রায় মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারছে। বিশেষ করে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের এবারের ঈদ অন্যরকম উৎসবমুখর হচ্ছে। ঢাকা থেকে তিন-চার ঘন্টায় খুলনায় পৌঁছে যাচ্ছে। ফরিদপুর, মাদারীপুরের মানুষ বাড়ি ফিরছেন আরো আগে। এটি বাংলাদেশের সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মানুষের যে সারা, যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সেটি সরকারের একটি বড় অর্জন বলেই অনেকে মনে করছিলেন। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই সারাদেশে লোডশেডিংয়ের প্রত্যাবর্তন নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, পদ্মা সেতুর অর্জন ঢেকে যাচ্ছে লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে। যদিও সরকার বলছে লোডশেডিং একচি সামরিক বিষয় এবং এটির জন্য সরকার দায়ী নয়। সরকারের উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে এবং চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরকার এখন উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন সরকারকে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। 

আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭০ ভাগের বেশি গ্যাসনির্ভর এবং সেই গ্যাসটি আমরা আমদানি করি। বাংলাদেশের মজুদ গ্যাসের সঠিক হিসেব না থাকার কারণে সরকার গত ১০ বছর গ্যাস আহরণ এবং অনুসন্ধানে দিকে মনোযোগ দেয়নি। বরং আমদানিনির্ভর হয়েছে আমাদের জ্বালানী কৌশল। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বেড়েছে বহুগুণ। এর ফলে সরকারের পক্ষে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এ কারণেই এখন লোডশেডিংগুলো হচ্ছে। কিন্তু মানুষ গত ১০ বছরের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেয়ে অভ্যস্ত। মানুষের এখন চাহিদাও বেড়েছে। মধ্যবিত্তের ঘরেও এয়ারকুলার, এসিসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রয়েছে। এই লোডশেডিংয়ের কারণে তারা ভোগান্তিতে পড়ছেন এবং তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকার এই বিষয়টি অবহিত। যদিও সরকার জনগণকে কৃচ্ছতা সাধন এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই লোডশেডিং নিয়ে সরকারের এক ধরনের সমালোচনাই করছে। 

অনেকে মনে করছেন যে, এই লোডশেডিংয়ের বিষয়টি জনঅস্বস্তি এবং জনঅসন্তোষের একটি বড় কারণ হতে পারে। মানুষ একটা অভ্যস্থতা থেকে এখন লোডশেডিংয়ে ফিরে যেতে রাজি নয়। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে অনেক বেশি। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। এই কারণেই ঢাকার বাইরের মানুষজন এখন অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন। এখন লোকজনের মধ্যে সরকারের সমালোচনা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন নির্বাচনের আগে এই লোডশেডিং সরকারের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবে। আর এই কারণে এখন থেকেই এ ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া দরকার। সরকার মনে করছে যে, এখনও নির্বাচনের দের বছর বাকি আছে। কাজেই তার আগে পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। তবে বিদ্যুতের এই লোডশেডিংয়ের কারণে বিরোধীদলের হাতে একটি ভালো অস্ত্র এসেছে। বিরোধীদল এখন সরকারের বিদ্যুৎ নীতিরই সমালোচনা করছে। আর এই সমালোচনাটা নির্বাচন পর্যন্ত চলবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। এই বাস্তবতায় পদ্মা সেতুসহ মেগা উন্নয়ন নিয়ে যে অর্জন, তা শেষ পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে ঢেকে যায় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭