ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

প্রসঙ্গ: যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া


প্রকাশ: 14/07/2022


Thumbnail

অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা এবং অন্য দেশের প্রশাসন উৎখাত করা ‘মার্কিন নীতির’ অংশ। চীনা কূটনীতিক ওয়েন বিনের করা এই মন্তব্য যে খুবই সত্যি তাতে কোন সন্দেহ নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শুরু হওয়া সাম্যবাদ আর পুঁজিবাদের স্নায়ুযুদ্ধে আমেরিকানরা বিশ্বজুড়ে নিজেদের সুবিধামত তৎপরতা চালিয়েছে, যখন যাকে প্রয়োজন হয়েছে ক্ষমতায় এনেছে এবং প্রতিপক্ষকে উৎখাত করেছে। 

“আমেরিকার মত বন্ধু যার থাকে তার আর আলাদা করে শত্রুর দরকার হয় না”, এই কথাটা ইউক্রেনের ক্ষেত্রে বেশ প্রযোজ্য। শুধুমাত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইউক্রেনকে স্রেফ গুটি হিসাবে ব্যবহার করছে আমেরিকা। ফলে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ আদোতে রাশিয়া আমেরিকা যুদ্ধ। কিন্তু রাশিয়াকে এখন আর কম্যিউনিস্ট বলা চলে না, তাদের অর্থনৈতিক কাঠামোও পুঁজিবাদী কাঠামো। সে যাই হোক, আর্থ-রাজনৈতিক স্তরবিন্যাসের বৈসাদৃশ্যের কারণে রাশিয়া সব সময়ই আমেরিকার প্রধান প্রতিপক্ষ থাকবে। 

বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে আছেন, তার প্রধান উদ্দেশ্য আসলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে জোট গঠন করা। এদিকে ইরানের সাথে রাশিয়ার নতুন জোট বাইডেনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরান এবং রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ দুই দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য আরব দেশগুলোর সাথে ইরানের বিরোধিতা অনেক আগে থেকেই, তাছাড়া ইরানই মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ যারা আমেরিকার সাথে সরাসরি টক্কর দিতে পারে। সুতরাং, ইরানের সাথে রাশিয়ার বন্ধুত্ব হবে সেটা তো স্বাভবিক। 

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে ইসরায়েলকে নিয়ে। ইসরায়েল আমেরিকার সন্তানের মত। এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের মাধ্যমে আমেরিকার প্রভাব বিস্তারে সবচেয়ে বড় হুমকি ইরান। সেই সাথে আরব দেশগুলোর জন্যও ইরান বড় হুমকি। তার মানে দাঁড়াচ্ছে আরব-ইসরায়েলদের এখন কমন শত্রু হল ইরান। তাহলে কি এখন আরব-ইসরায়েল বন্ধু? রাশিয়া-ইরান এদের সবার শত্রু। 

আমেরিকার প্রধান স্বার্থ হল যে কোন ভাবেই হোক ইরান-রাশিয়াকে আটকানো। কিন্তু যদি ইতিহাসের দিকে ফিরে যাই তাহলে দেখা যাবে রাশিয়া এবং ইরান দুইদেশেরই নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি রয়েছে। ফলে তারা কারও মুখাপেক্ষী না। আমেরিকার এই সাম্রাজ্যবাদী এবং আধিপত্যবাদী মনোভাব তাদের মানার কোন কারণ নেই। চীনেরও নেই। রাশিয়া, চীন, ইরান এবং ভারত তারা আমেরিকা ছাড়াই নিজেদের প্রস্তুত করেছে সবকিছুতে। সুতরাং, সমস্যাটা শেষ পর্যন্ত আমেরিকা এবং তার মধ্যপ্রাচ্যীয় বন্ধুদের। 

আর সেইজন্যই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন মধ্যপ্রাচ্য সফরে। তিনি জানেন, রাশিয়াকে একঘরে করে দেয়ার যে প্রক্রিয়া তিনি করেছেন তাতে তেল নিয়ে সমস্যার সমাধান আপাতাত মধ্যপ্রাচ্যই দিতে পারে। যদিও কাতারের মতে ইউরোপের বার্ষিক চাহিদা অনুযায়ী এককভাবে জ্বালানী সরবরাহের সামর্থ্য শুধুমাত্র রাশিয়ারই আছে। 

যাইহোক, রাশিয়া-ইরান এখন আমেরিকার মাথা ব্যাথার বড় কারণ। তারা যদি চীনের সাথে মিলে আলাদা জোট গঠন করে সেটা সামরিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে আমেরিকা ও তার বন্ধুদের বেশ বিপদে ফেলবে। এখন দেখা যাক, আমেরিকা তার মধ্যপ্রাচ্যীয় বন্ধুদের সাথে ইসরায়েলের সাথে মেলবন্ধন করে রাশিয়া-ইরান এবং চীনকে কিভাবে প্রতিহত করে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭