ইনসাইড টক

‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার হওয়ার আগে পৃথিবীর অন্তত ২০টি দেশ শ্রীলঙ্কা হবে’


প্রকাশ: 16/07/2022


Thumbnail

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, বাংলােদেশের কিছু লোক আছে, যারা কিছু দিন পর দেশে কিছু হলেই বলে বসেন যে, বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে যাবে, বাংলাদেশ আফগানিস্তান হয় যাবে ইত্যাদি। আর এখন বলা হচ্ছে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তো বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার দৃশ্যপট এক নয়। শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আমরা হয়তো কিছু শিখতে পারি, কিন্তু দেশ শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে সেটা কখনোই যুক্তিসঙ্গত নয়। শ্রীলঙ্কার এখনকার পরিস্থিতির পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে, যা বাংলাদেশে নেই বা বাংলাদেশের সাথে সে বিষয়গুলোর কোনো মিলও নেই। শ্রীলঙ্কার রাজাপক্ষে সরকার জনসন্তুষ্টির জন্য কতগুলো পপুলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভ্যাটের পরিমাণ ১৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া। এতে করে সরকারের রাজস্ব আদায় অর্ধেক কমে গেছে। দ্বিতীয়ত হলো, পরিবেশবাদী আন্দোলন এবং সুশীল সমাজের দাবির প্রেক্ষিতে তারা অগার্নিক চাষাবাদ চালু করেছিল অর্থাৎ কীটনাশক এবং সার ব্যবহার করা বন্ধ করেছিল। ফলে তাদের খাদ্য উৎপাদনও অর্ধেকে নেমে আসে। তৃতীয়ত হলো, ২০১৯ সালে ওই দেশে যে বিষ্ফোরণ ঘটে, সে বিষ্ফোরণের কারণে তাদের পর্যটন খাতে বড় ধাক্কা লাগে। এর মধ্যে আবার করোনা শুরু হয়। যেকারণে তাদের পর্যটন খাত স্থবির হয়ে পড়ে। যা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির একটি অন্যতম বড় চালিকা শক্তি ছিল। এ সময় তাদের রেমিট্যান্সও কমে যায়। আরেকটি অন্যতম বড় বিষয় হলো তাদের যতগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে প্রতিটি ডিজেল নির্ভর। সারা বিশ্বে যখন ডিজেলের দাম বেড়ে যায় তখন শ্রীলঙ্কা সে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাত শুধু ডিজেল নির্ভর নয়। আমাদের কয়লা বিদ্যুৎ আছে, পানি বিদ্যুৎ আছে, গ্যাস বিদ্যুৎ আছে, ডিজেল বিদ্যুৎ আছে, এখন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। অনেকগুলো বিকল্পতে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে কানাডাভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জিডিপির আকার অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। অথচ কেউ কেউ বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, শ্রীলঙ্কা শুরু বৈদেশিক লোনই নেয়নি, তারা বাণিজ্যিক লোনও নিয়েছিল। অর্থাৎ বন্ড বিক্রি করেও তারা লোন করেছে। পরে সে বন্ডের উচ্চ হারে সুদ হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ কখনো এক বন্ডও কারো কাছে বিক্রি করে লোন করেনি। বাংলাদেশের বৈদেশিক যে লোন এবং জিডিপির যে পরিস্থিতি সেটা একেবাবে স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের যে সমস্যাটা হয়েছে সেটা হলো হঠাৎ করেই আমাদের আমদানি নির্ভর কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এগুলোর কোনো কোনোটার দাম দ্বিগুণ তিন গুণ হয়ে গেছে। এ কারণে আমদারি খরচ বেড়ে গেছে। এছাড়া রপ্তানি থেকে আমদানি আমাদের সব সময় বেশি ছিল। এখান যে ঘাটতি দেখা দিতো সেটা আমাদের রেমিট্যান্স দিয়ে সেটা পূরণ করা হতো। কিন্তু এখন সমস্যা হয়েছে সারা বিশ্বে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা অনুসারে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। সেকারণে আবার অফিসিয়াল এবং খোলা বাজরের ডলারের দামের পার্থক্য বেড়ে গেছে। ফলে প্রবাসীরাও অফিসিয়ালভাবে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাচ্ছে। যা সরকারি হিসেবে যোগ হচ্ছে না। তবে এখন রেমিট্যান্স আস্তে আস্তে বাড়ছে কারণ গত বছরই বিদেশে কাজের জন্য গেছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ যা গত ১০ বছরের হিসেবে সবচেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকার অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছে যেকারণে সেটা আস্তে আস্তে প্রবাসীদের হুন্ডির প্রবণতা কমাতে শুরু করছে। তাছাড়া অপ্রয়োজনী যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব বেশি দরকার নয়, সেগুলো আমদানি করতে সরকার নিরুৎসাহিত করছে। রেমিট্যান্স যেন বাড়ে সেটার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং এগুলোর ফলাফল আমরা আগামী এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে পাবো।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখনো প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার রির্জাভে আছে। আগে আমাদের আমদানি-রপ্তানির যে ঘাটতি হতো সেটার ব্যবধানও এখন আস্তে আস্তে কমে আসছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেটা একটা ভারসাম্যের মধ্যে চলে আসবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণে যদি কোনো দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যায় তাহলে সবার আগে শ্রীলঙ্কা হওয়ার কথা তুরস্ক আর পাকিস্তানের। কারণ তুরস্কের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন মাত্র ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। আর পাকিস্তানের অবস্থা আরও খারাপ। মাত্র ৫ শতাংশ। পৃথিবীর আরও অনেক দেশ এ ধরনের ঝুঁকিতে আছে। সে হিসেবে বাংলাদেশ এই তালিকায় নেই। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার হওয়ার আগে পৃথিবীর অন্তত ২০টি দেশ শ্রীলঙ্কা হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭