কালার ইনসাইড

কাস্টিং কাউচ, শোবিজ কলুষিত হওয়ার অন্যতম কারণ…

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/01/2018


Thumbnail

ভাইয়া কাজ দেন। পরিচালক কিংবা প্রযোজকের কাছে এমন অনুরোধ কিংবা আকুতি প্রায়ই আসে। কেন কাজ দিবে? যোগ্যতা অনুযায়ী আপনি কী প্রাপ্য? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অযোগ্যরা কাজ পায়। সুযোগ পাওয়ার উপায় কী? পরিচালক- প্রযোজকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাড়ালেই কাজ মিলবে বলে অনেকের ধারণা।

সেই ব্যক্তিগত সম্পর্কটা কী হতে পারে? ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রযোজক যোগাড় করে দিতে হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজকের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়তে হবে। এটা তো অন্যতম প্রধান চাওয়া- পাওয়া।

কিন্তু প্রযোজক- পরিচালকের পেছনে যারা কাজ পাওয়ার জন্য লাইন লাগায় তাদের কোন দোষ নেই? তাদেরও একটা ধারনা জন্মেছে এভাবেই হয়তো বাড়তি সুযোগ পাওয়ার উপায়। তাই তারা যেকোন উপায়ে কাজটা পেতে চায়। সবুরে মেওয়া ফলে, যদি নিজেদের যোগ্যতাটা বাড়ায়। তাহলে এক না একদিন সফলতার শীর্ষে পৌছানো সম্ভব।

যোগ্যতা থাকলে উল্টো পরিচালক কিংবা প্রযোজকরা আপনার পেছনে ঘুরবে। নামী ও গুনী নায়িকার ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটাই হয়। তাঁর শিডিউল পাওয়া কষ্টকর।

এমনটা সাধারণত নতুনদের ক্ষেত্রেই ঘটে। পুরানরা সময়টা পার করে নিজেকে একটা অবস্থানে টিকিয়ে রাখে। শুরুর পরে প্রাথমিক চলনটাই আসলে তার ঝড়ে পড়ার সময়।

বাংলাদেশের অনেক অভিনেত্রীই এমন অভিযোগ তুলছিলেন, তার মধ্যে রয়েছে পূর্ণিমা, পরীমনী, ফারিয়া শাহরিন, হুমায়রা ফারিন খান, অমৃতা খান, আঁচল, মৌসুমী সহ আরো অনেকে। তাঁরা এ নিয়ে মুখও খুলেছে সাহস করে। অনেকে এর শিকাড় হয়ে নানা কারণে মুখ খুলতে চায় না।

বলিউড কিংবা হলিউডের ইদানিংকালের কয়েকটি ঘটনার কথাই উল্লেখ করা যায়। বলিউডের `কাস্টিং কাউচের` ঘটনা ঘটে অহরহ। ‘কাস্টিং কাউচ’ বলিউড ইন্ডাস্ট্রির রিয়ালিটি। এ কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেন অনেক শিল্পী। কেউ বা আবার লুকিয়ে রাখতে চান। শুধু নারীরাই নন, পুরুষরাও কখনও কখনও ‘কাস্টিং কাউচ’- এর শিকার। ইন্ডাস্ট্রিতে রণবীর সিং এখন পরিচিত নাম। জনপ্রিয়তার নিরিখেও তিনি প্রথম দিকেই রয়েছেন। কিন্তু তিনিও ‘কাস্টিং কাউচ’ এর কবলে পড়েন। কীভাবে? ভারতীয় গনমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, ‘এক ভদ্রলোক তাঁর আন্ধেরির বাড়িতে আমাকে এক বার ডেকেছিলেন। আমি খুব সুন্দর পোর্টফোলিও তৈরি করে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি সেটা দেখলেনই না। বরং বলেছিলেন, তোমাকে আরও স্মার্ট হতে হবে। আরও সেক্সি হতে হবে। তার পর আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে বলেছিলেন, আমরা কিছুই করব না। আমাকে এক বার ছুঁতে দাও…’। পরে রণবীর জানতে পেরেছিলেন এমন ব্যবহার তিনি অনেকের সঙ্গেই করে থাকেন।

বলিউডে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন আয়ুষ্মান খুরানা। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি প্রথমে টেলিভিশনে অ্যাঙ্কারিং করতাম। এক কাস্টিং ডিরেক্টর আমাকে সরাসরি যৌন প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম, আমি স্ট্রেট। না হলে আপনার প্রস্তাব ভেবে দেখতাম।’

কাল্কি কোয়েচলিন, দীপিকা পাড়ুকোন, কঙ্গনা রানাউত, মমতা কুলকার্নি সহ অনেকেই মুখ খুলেছেন এ বিষয়ে।

হলিউডে তো গতবছর তুলকালাম হয়ে গেছে। হলিউড প্রযোজক হার্ভে ওয়েনস্টেন-এর যৌন কেলেঙ্কারির পর ফের যৌন হেনস্থার অভিযোগে তোলপাড় হয়েছে হলিউড। পরিচালক, লেখক অ্যান্ড্রু ক্রেসবার্গের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেয়েছেন।

যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #MeToo ক্যাম্পেন সাড়া ফেলেছিল গোটা বিশ্বে। কিভাবে `কাস্টিং কাউচের` শিকার হতে হয়েছিল সেটাও বর্ণনা করেছেন অনেক অভিনেত্রী। এ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন বলিউডের বর্ষীয়ান প্রযোজক মুকেশ ভাট। `কাস্টিং কাউচ` ইস্যুতে  `বিশেষ ফিল্মমস`-এর এই কর্ণধার বলেন, বলিউডে নিয়মিত এ ধরনের ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষদের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ ওঠে। পুরুষরা এসব করেও থাকে। তবে সব ক্ষেত্রে কেবল পুরুষদের দোষ দিলে চলে না। ভালো খারাপ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে। এখন যুগ বদলেছে। এমন অনেক মেয়েই রয়েছে, যারা স্বেচ্ছায় প্রস্তাব দেয়।’

এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রযোজক আব্দুল আজিজ। যিনি শুরু থেকেই তার সিনেমায় নতুনদের সুযোগ দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রযোজক হিসেবে পরিস্কার। কারো সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে সেটা পরিস্কার করেছি। কখনো কাজের সুবাধে কারো কাছ থেকে সুযোগ নিতে চাইনি। জাজ এমনই একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে থেকে আসলে কেউ এমন কাজ করার সুযোগ পাবে না। এরকম কিছু যদি ঘটে আর প্রকাশ পায় পুরো প্রতিষ্ঠানটাই বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য। সেটা আসলে জেনেশুনে আমি করবো না। এসব যারা করে তাদের মধ্যে আসলে পরিচয়হীন লোকজনের সংখ্যাই বেশি। আর নতুনদেরও আসলে সতর্ক থাকতে হবে। অনেকেই অনেক সময় স্যোসাল মাধ্যমে আমাকে নক দেয়। বলে ভাইয়া যা করতে বলবেন করবো। আমি কি উত্তর দিবো! বলি নিজের চেহারাটা গিয়ে আয়নায় দেখো। তারপর নিজেকে প্রস্তুত করো। যদি মনে হয় তুমি নায়িকা হতে পারো। তাহলে সুযোগ মিলবে। যদি মনে করো তুমি সহশিল্পী হতে পারো। সেটার জন্য চেষ্টা করো। এইসব দিয়ে না দিয়ের দিন আসলে শেষ হয়ে যাবে একদিন। এর জন্য সকলের প্রফেশনাল হতে হবে। ’



বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭