ইনসাইড থট

এটিএম শামসুল হকের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি


প্রকাশ: 20/07/2022


Thumbnail

দেশের একজন কৃতি সন্তান জনাব এটিএম শামসুল হক আজ চলে গেলেন। ছাত্রজীবন থেকে মেধাবী এই ব্যক্তি ছাত্রজীবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ছাত্রলীগের একজন সংগঠকে পরিণত হয়েছিলেন এবং জাতির পিতার নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের একজন সৈনিক ছিলেন। ছাত্রলীগের একজন নেতা হিসেবে তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রলীগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের ছাত্রসংসদে ভিপি এবং জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে এটিএম শামসুল হককে কারাবরণ করতে হয়েছিল। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার কারণে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব নিতে পারেননি। পরে তদানীন্তন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগদান করেন। ঐ সময়ে পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তা হয়েও জাতির পিতার নেতৃত্বে চলমান বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে গোপনে কাজ করে গেছেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অবিভক্ত ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি সকল অফিস আদালত বন্ধ রাখেন এবং বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেন। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান জান্তা বন্দী করে পাকিস্তানে নিয়ে বন্দী করে রাখে। এর মাত্র কয়েকদিনের মাথায় ঢাকার জেলা প্রশাসক এটিএম শামসুল হককেও পাকিস্তান সরকার গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়।

স্বাধীন বাংলাদেশে এই কৃতি সন্তানকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে সরকারের তথ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ করেন। ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। ৭৫ এর পর বেশ কয়েক বছর তিনি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সিরডাপের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালে সরকারের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে খালেদা জিয়ার সরকারের দলীয়করণ নীতির প্রতিবাদ করে স্বেচ্ছায় চাকুরী ছেড়ে দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা আরও কয়েকজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং মেধাবী ও আদর্শিক ব্যক্তিবর্গের সাথে তাঁকেও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মনোনীত করেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন।

১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে জনাব এটিএম শামসুল হককে কুমিল্লা সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছিলেন। নেত্রীর মনোনীত হিসেবে তাঁর প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন সত্ত্বেও বিএনপির ভোট ডাকাতি এবং নানা ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আমি তাঁর সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেছি এবং বিভিন্ন সাংগঠনিক ও অন্যান্য বিষয়ে সহায়তা প্রদান করেছি। তিনি একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন খাঁটি সৈনিক ছিলেন। একজন জীবন্ত ইতিহাস হিসেবে তাঁর কাছ থেকে আমি বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক ঘটনা শুনেছি, জাতির পিতার সাথে তাঁর নানা অভিজ্ঞতা ও স্মৃতির কথা শুনেছি। তাঁর দীর্ঘ প্রফেশনাল এবং রাজনৈতিক জীবনে তিনি কোন বিতর্কিত কাজ করেছেন- এমন কথা কেউ কখনও শুনেননি।

জাতির এই মেধাবী ও দেশপ্রেমিক সন্তানের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭