ইনসাইড থট

যুদ্ধ নয় সুবিধাভোগী বুদ্ধিজীবী-পরিকল্পনাবিদরা সংকটের কারণ


প্রকাশ: 22/07/2022


Thumbnail

জ্বালানি সংকটে সরকারের পদক্ষেপ সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি করেছে বলে সরকারি দলের বক্তব্য শুনছি। সুযোগ বুঝে বিরোধীরাও নানা তথ্য দিয়ে সরকারের ইমেজ ক্ষুন্ন করবার চেষ্টা করছেন। আজকের সংকটে সরকার কতটুকু দায়ী সেটা জনগণকে বোঝানো সহজ হবে না। আগামী নির্বাচনে বেশ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। আজকের সংকট আমাদের একটি সত্য উপলব্ধি করতে সহায়ক। আমাদের পরিকল্পনার অদক্ষতার এই সংকটের কারণ তা বলবার অপেক্ষা রাখে না। সরকারকে নানা জনে নানা ভাবে সতর্ক করেছে। কিন্তু সেগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে। দেশের অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। সেই অভিযোগ মাথায় নিয়েই সরকার সমস্যার সাগর পাড়ি দিতে চেয়েছ। পদ্মা সেতুর সাফল্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে বাজার মূল্য, লোডশেডিং, সামাজিক অস্থিরতা, ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রভৃতি কারণে। এসব কিছুর সঙ্গে যুক্ত আছে অদক্ষ ও অযোগ্য লোকের আচরণ ও কর্মকান্ড, মিডিয়ার সুবিধাবাদী চরিত্র এবং সুবিধাভোগী পরিকল্পনাবিদরা। জো বাইডেন থেকে মহিন্দ রাজপক্ষ সকলেই কোননা কোনোভাবে সুবিধাবাদী পরিকল্পনাবিদের কূটবুদ্ধির শিকার হন। ভুল করে দুর্নীতি থেকে সুনীতিতে ফেরার চেষ্টায় করেও ভ্রান্ত পথ অনুসরণ ওই তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের প্ররোচনায়। মূলতঃ বঙ্গবন্ধুর দর্শন মুখে থাকলেও বাস্তবে আমরা যোজন যোজন দূরে।আছে হাইব্রিড লালন পালন। আজকের  সংবাদ- কুইক রেন্টাল আর কতকাল, মেগা প্রকল্পের ঋণ... বাংলাদেশ কি শ্রীলংকার পথে... কথাগুলো কিন্তু জনগণের নজর কাড়ছে।

আমাদের বুদ্ধিজীবীরা টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কথার অনেক ফুলঝুরি ছড়ালেও তারাই জাতিকে সঠিক পথটি বলতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারাও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং তাদের অর্থাৎ ধনীদের স্বার্থ সংরক্ষণের পক্ষেই কথা বলেন। সরকারকে সত্য উপলব্ধি করতে বাধা সৃষ্টি করেন এবং ভুল পরিকল্পনা নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

এক প্রবাসী লিখেছেন- পদ্মা সেতুর সুবিধা নিয়ে আমাদের নাগরিকরা আরও বেশি করে ভারত চলে যাচ্ছেন! সকলের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে একটি সত্য আমাদের কাছে প্রতিভাত হয়- আমরা সৎ নই- আমরা সৎ নই বলে আমাদের নাগরিকরা আমাদের উপর আস্থা পায় না।আর সেই অনাস্থা থেকে তারা টাকা পরোক্ষভাবে পাচার করে দেশ ছেড়ে চলে যায়।

কে যেন একজন বলছিলেন আমাদের নাগরিকরা ভারতে চলে যায় কারণ আমাদের এথিকস নেই। বিগত রোজার ঈদের সময় নিউ মার্কেট এলাকায় দোকানদারদের ব্যবহার নিয়ে একটি সংঘাত ঘটে গেলো। সেখান থেকে আমরা কিন্তু শিক্ষা নেইনি। আমাদের দোকানিরা মিথ্যা, অসততা ও ব্যবহার করেন। আমাদের ডাক্তার সাহেব মনোযোগ দিয়ে রোগীর সমস্যা শুনেন না। আমাদের ছাত্ররা ক্লাসে মনোযোগী নয়। আমাদের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দায়সারা পাঠদান করেন। আর এসবের সঙ্গে মিশে আছে লোভ। আমরা লোভী। আমরা রাতারাতি ধনী হতে চাই। একটি জমি একটি ভালো ফসল পেতে হলে মনোযোগ দিয়ে চাষ করতে হয় তা আমরা করি কি? আমরা করি না। বীজ বপন করে যেন তেন ভাবে ফল পেতে চাই।

আমাদের বিদ্যুৎ সংকট হবার কথা নয়। আমরা দেদারছে উড়াচ্ছি। আমি একটি পর্দার দোকানের তাকালাম। তারা ৬৮ টি বাল্বব জ্বালিয়ে রেখেছে। শুধু তাই নয় সেখানে চলছে এসি। এই যে অপচয় তা মালিকের নজরে নেই। সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল। এতো বাতির খরচ দেবে ক্রেতা। সুতরাং, ভয় কিসের!

কিভাবে আমরা সততার পথে আসতে পারি? কিভাবে আমাদের কষ্টের বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারি? এসব নিয়ে কেউ লেখে না। লিখলে কেউ পড়ে না। পড়লে হয়তো একটা গালি দেয় -বেটা সাধু সাজছে। নিজের দায়িত্ব পালন করে না। আবার আমাদের জ্ঞান দেয়!

আমরা দারিদ্রের দুষ্ট চক্রর কথা জানি। কিন্তু এরকম আস্থার দুষ্ট চক্র আমাদের ভাবায়। কিভাবে পরিত্রাণ পাবো এই দুষ্ট চক্র থেকে? উপায় একটা নিজের কাজটি ভালোভাবে করো। এই যে আমি লিখছি - প্রতি সপ্তাহে লিখছি।  এগুলোর তেমন কোনো আবেদন নেই।  কারণ আমি লিখছি  নিজের কথাটা ভেবে। পত্রিকার পাতায় আমাকে নিয়মিত থাকতে হবে। তাই পরিকল্পিত ভাবে কিছু করছি না। আমার কাছে নেই তথ্য। আছে কিছু শোনা কথা, কান কথা। আর সেগুলোর উপর ভিত্তি করে লিখছি। আমার লেখার গভীরতা নেই। কারণ আমি গভীর চিন্তা করতে পারিনা। আমার মাথায় নানা চিন্তা। আমি সব বিষয়ে পন্ডিত। সুতরাং, Master of All Master of None.

এই লেখার মাঝপথে পাশের মুদি দোকানে গেলাম। এখন থেকে রাত ৮ টায় দোকান বন্ধ। সুতরাং, পুরো এলাকাটা নীরব। কেবল লন্ড্রি ও মুদি দোকান খোলা। নেই আলোর ঝলকানি, ধাতব চিৎকার। দোকানির সঙ্গে আমার আলোচনা। কোথায় যেন দেখলাম তেলের দাম ৫৩ টাকা কমেছে। দোকানি বললেন মোটেও সত্য নয়।  কমেছে ৫ টাকা। সামনের দোকান গুলোর বাড়িতে হিসাব দিলাম। বললেন আপনি অংকে কাঁচা। আপনি দেখেছেন কেবল বাথরুমের বাতি ৬৮ টা। আসলে দোকানের বাতি ১০০০ টা। হতেও পারে। আমি হয়তো ভুলে দেখেছি! আমি আমার লেখায় কত ভুল করি। মনোযোগ দিয়ে দেখিনা।

আমাদের দেশে কিছুদিন যাবৎ দেখছিলাম আলোর ঝলকানি। আমরা কি নির্দয় ভাবে অপচয় করছি তা বলে শেষ করা যাবে না।সরকার লোড শেডিং দিচ্ছে। সেটা নিয়ে আমরা অনেকে কাব্য করছি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সূর্য ও চাঁদ দিয়েছেন। সেগুলোর সুন্দর  ব্যবহার না করে আমরা বিদ্যুতের আলোয় পথ চলছি। এভাবে একটি আমাদের সক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে। সেই সতর্ক বার্তা ১৯৮৭ সালের টেকসই উন্নয়নের ধারণায় দেয়া আছে। আমাদের অধিকার নেই আগামী প্রজন্মর অধিকারকে ধ্বংস করবার। কিন্তু কিছুতেই আমরা অবদমিত হচ্ছি না। কিভাবে আমাদের মাঝে চিন্তায় চেতনায় পরিবর্ত আনা যায় তা নিয়ে সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। সচিবালয়ের গিয়েছিলাম একটি কাজে। সেখানে আলোচনা করছিলাম। আমাদের এক প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে কথা হলো। তাদের সকলের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো আমাদের শিশুরাই পারে আমাদের মাঝে পরিবর্তন আনতে। আর শিশুর মনে ভাল মন্দের ধারণাটা দেবেন শিক্ষক। তাহলেই আমরা পরিবর্তন আশা করতে পারি। কিন্তু সেখানেও চলছে ফাঁকিবাজি। সেগুলো দেখার কেউ নাকি নেই। কথাগুলো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। শিক্ষক যেখানে ফাঁকিবাজ সেখানে ভালো কিছু আশা করা যায় কি? এক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিসে একটি অভিযোগ দিতে গিয়েছি। অফিসের সচিব বললেন আগে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ দিন।তিনি যদি বলেন তবে অভিযোগ রাখবেন। আমি থ হয়ে গেলাম! বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি হয় এমন দশা তবে মানুষের যাবার জায়গা আর থাকে কি?

আসলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই নষ্ট হয়ে গেছি।আমাদের লোভ আমাদেরকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেলেছে যে আমরা তেমন কোনো প্রভাব রাখতে পারছি না।আমাদের ধস নেমেছে।সেই ধস জাতির জন্য ভয়ানক পরিনিতি বয়ে আনবে। আমাদের এখন ৫৩ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।আজকে দেশের মানুষ, আমাদের তরুণ সমাজ Ranking নিয়ে ভাবছে।আর আমরা ফস করে বলে ফেলি- Ranking নিয়ে ভাবছি না! আমরা এখন মুড়ি মুড়কির মতো গণ পিএইচডি দিচ্ছি।আর মোয়ার মতো অধ্যাপক পদ বিলোচ্ছি! এখন সচিব আর সচিব। বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কেরানি নেই! যার  কিনা কেরানি হওয়ার যোগ্যতা ছিলনা সে হয়েছে ডেপুটি,যার ছিলোনা হেড মাস্টার হওয়ার যোগ্যতা সে হয় অধ্যাপক- সেখানে আমরা কি-বা আশা করতে পারি! যদিও অনেক তরুণ শিক্ষক উচ্চমানের গবেষণা করছেন।কিন্তু তাদেরকে আমরা সঠিক মূল্যায়ণ করতে পারছি কি?

এক সময় বুদ্ধিজীবিরা একটি কথা বললে মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনতো।  তাদের বক্তব্যে জাতি অনুপ্রাণিত হতো।  সেই শক্তিশালী অবস্থানটি আজ শিক্ষকদের কারণেই নেই। পৃথিবীর অন্য দেশে কেন সমস্যা জানিনা , তবে আমাদের দেশের সমস্যা বুদ্ধিজীবীদের চেতনা ভ্রম।  সেখান থেকে ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে। সেই সুদিনে অপেক্ষায় জাতি।  বিবৃতি নয় মাঠে নেমে শিক্ষকদের কাজ করতে হবে-ভুল বলছি কি?

সন্ধ্যা বেলার হাঁটা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে গেলাম। নিচতলায় একটি কক্ষ ছিল যেখানে নতুন জার্নালগুলো থাকতো। ভেতরে গিয়ে দেখলাম সেগুলো আর সেখানে নেই। আছে কোরিয়া, আমেরিকার বই। অথচ নতুন জ্ঞানের বইগুলো এখানেই থাকার কথা। পাশেই বঙ্গবন্ধু কর্নার।  এখনো উদ্বোধনী হয়নি।  দুটো শীতাতপ যন্ত্র আছে। দোকান- মার্কেট -অফিস ঝকঝকে রাখতে কিংবা বসের মেজাজ ঠিক রাখতে শীতাতপ ব্যবস্থা রেখেছি। টাইলস থাই গ্লাস লাগিয়েছিল, কিন্তু ১৯৮২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যতবড় দেখেছিলাম এখনো সেই রকম আছে। অথচ ছাত্র বেড়েছে অনেক। এই দৈন্যতা আমাদের দুর্ভাগ্য ! বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার বঙ্গবন্ধু কর্নারের মতো। পুরো পাঠাগারটি যেদিন ঐরকম করতে পারবো সেদিন আমরা ranking এর কথা হয়তো ভাববো! জ্ঞান চর্চায় যে লোড শেডিং চলছে সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে।

জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় সূর্যের আলোকে উপযুক্ত ব্যবহারের নীতির অংশ হিসেবে নাকি বিনামূল্যে সোলার প্যানেল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা নাকি জনগণকে প্রভাবিত করতে পারেনি। যে প্যানেল দিয়ে একটি ফ্যান চলে না তা কিভাবে জনপ্রিয় হয় ? একটি পরিবারের চাহিদা যেখানে ১৫ কিলোওয়াট সেখানে আমার দিয়েছি ১ কিলোওয়াট। সেটা দিয়ে খুদি খুদি কয়েকটা বাতি জ্বলে। আমার মতে ৫০ হাজার কোটি টাকা যদি ভর্তুকি সৌর বিদ্যুতে দেয়া হতো তাহলে আমরা ১ কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুত আজ বিনা খরচে পেতাম এবং সেটা অন্তত ১০-১৫ বছর  সেবা দিতো। আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত আমাদের ভুল পরিকল্পনা আমাদেরকে আজ সংকটে ফেলেছে। জ্বালানি সংকট আরও ঘনীভূত হবে আগামী দিনে। সুতরাং এখনই ভাবতে হবে কিভাবে সৌর শক্তি ব্যবহার করে উন্নয়ন করা যায়।আশা করি আমাদের বোধোদয় হবে। আমাদের পরিকল্পনায় ভুল আছে। সেগুলোকে পুনরায় পর্যালোচনা করতে হবে। পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতা প্রমানের সুযোগ দিয়েছে। স্বাধীনতাকে অর্থপূর্ণ করতে সৌর জ্বালানি নীতি গ্রহণ করা ছাড়া ভালো কোনো উপায় নেই।

আমাদের দেশ প্রেমে ঘাটতি আছে সেখানে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের পেশাজীবীদের প্রতি আস্থার অভাব আছে বলে আমরা বিদেশী সেবা নিতে ছুটে যাই। সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলেই আমরা আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে পারবো। আজ যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বিশ্বের আনাচে কানাচে তা আমাদেরকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। একটি মহাযুদ্ধর দিকে পৃথিবীর মানুষ এগোচ্ছে। সামাজিক বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। সেটাকে গুরুত্ব দেয়া একান্তভাবে জরুরি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭