সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ চায় বিকল্পধারা বাংলাদেশ। তবে এর আগে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে এই মেশিন সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে বলে জানিয়েছে দলটি।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে এমন প্রস্তাবনা দেয় দলটি। বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। এতো অন্যদের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে জনগণের অধিকার বঞ্চিত হওয়ার করুণ ইতিহাস রয়েছে। তার মধ্যে জনগণের ভোটাধিকার না পাওয়া অন্যতম। চুয়ান্ন সালের নির্বাচন ও বিশেষ করে ৭০-এর নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের নানা টালবাহানা ও নির্মমতার ফলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মানুষ দ্রুত স্বাধীনতার প্রশ্নে আপসহীন হয়ে ওঠে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নশীল দেশের গৌরব অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মত বিনিময়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে বর্তমান সরকার এবং নির্বচন কমিশন বহু বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছে। তার একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন। গণতন্ত্রের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরেপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। আপনারা নতুন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এজন্য আপনাদেরকে অভিনন্দন। ইতিমধ্যে আপনারা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছেন। তাই বিকল্পধারা বাংলাদেশ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে কিছু সুপারিশ তুলে ধরছে।
তাদের সুপারিশগুলো হলো
(১) সব কেন্দ্রে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করা হলে অন্তত ভোট কারচুপি বন্ধ হবে। একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবে না-তার নিশ্চয়তা চাই।
(২) নির্বাচনের সময় ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি না হয় তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
(৩) নির্বাচন ক্যাম্পেইনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
(৪) ভোটারদের ভোট দেওয়ার গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
(৫) ভোটকেন্দ্রে অনাকাঙ্ক্ষিত লোকের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
(৬) ভোটকেন্দ্রে পেশীশক্তি ব্যবহার রোধে প্রতি কেন্দ্রে সামরিক বাহিনীর অন্তত ৫ সদস্যের নিয়োগ দিতে হবে।
(৭) ভোটকেন্দ্রে দ্রুত সময়ে ভোট গণনা সম্পন্ন করে ভোটের ফল উপস্থিত এজেন্টদের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ফল দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোষণা করতে হবে। বিকল্পধারা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সার্বিক সাফল্য কামনা করছে।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহি. বি চৌধুরী এ সময় নির্বাচন কমিশনকে মানুষের মনে বিশ্বাস স্থাপনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, মানুষ যদি বিশ্বাস করে বর্তমান ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, তাহলে সবাই নির্বাচনে আসবে।
তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনীর পোশাক দেখলেই মানুষের আস্থা বেড়ে যায়। আসলেই ভোট হবে কি না, কীভাবে হবে, সেটা বিষয় না। সেনাবাহিনী যদি ভোটকেন্দ্রে থাকে, পাঁচ জন করেও যদি থাকে তবে অনেক আস্থা বাড়ে। ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোটের মাধ্যমে বড় ধরনের পরিবর্তন নির্বাচনী ব্যবস্থায় আসবে। এর আগে ব্যাপক প্রচার করতে হবে।