ইনসাইড থট

ইউক্রেনের সংঘাত, দেশীয় রাজনীতি এবং ভবিষ্যত (২য় পর্ব)


প্রকাশ: 27/07/2022


Thumbnail

সাম্প্রতিক একটি CNN সাক্ষাত্কারে, যুদ্ধবাজ, ইরাক আর আফগানিস্তানের সরকার পরিবর্তনের জন্য যুদ্ধ এবং মুসলিম বিরোধীদের একজন প্রবক্তা পরিকল্পনাকারী, জন বোল্টন গর্ব করে বললেন "আমি এমন যে কেউ যিনি অভ্যুত্থানের (coup d’etat) পরিকল্পনা করতে সাহায্য করেছি - এখানে (USA, ৬ই জানুয়ারি) নয় কিন্তু, আপনি জানেন অন্যান্য দেশে - অভ্যুত্থানের (coup d’etat) জন্য অনেক কাজ আর পরিকল্পনাকা করতে হয়..." এটি একটি বিস্তৃত এবং সাধারণ জ্ঞান যে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য আমেরিকার সিআইএ আর যুক্তরাজ্যের MI6 ইরানের প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেক-এর মতো অনেক বিশ্বনেতাকে উৎখাত করেছে, এমনকি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিদেরও হত্যা করেছে এবং শাসন পরিবর্তনের জন্য অভ্যুত্থান ঘটাতে সাহায্য করেছে, অগণতান্ত্রিকভাবে একটি নির্মম স্বৈরশাসকে (যারা তাদের কোলের কুকুর হয়ে থাকবে) চাপিয়ে দিয়েছে। আমরা আরো জানি প্রায় ৫০০০০০ থেকে ১২০০০০০ লাখ ইন্দোনেশিয়ান মানুষকে সশস্ত্র বাহিনী এবং সরকারের প্ররোচনায় কমিউনিস্ট এবং অবিশ্বাসীদের থামানোর নামে গণহত্যা করা হয়েছিল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা ন্যাটো দেশগুলি দ্বারা সমর্থিত ছিল। ওয়াশিংটনের অভ্যন্তরীণরা (যারা তাদের প্রতিটি কর্মদিবস ব্যয় করে গণতন্ত্রের আমেরিকান মূল্যবোধ, মানবাধিকারের বর্ণনা বজায় রাখার নামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের জন্য হুমকি হিসাবে দেখা সরকারগুলিকে দুর্বল করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে) বোল্টনের এই সত্য স্বীকার আর প্রকাশের জন্য দারুন রাগান্বিত, অসন্তুষ্ট, অনুমানযোগ্যভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। জন বোল্টন বলেন, অভ্যুত্থান ঘটাতে তারা যে পদ্ধতি অবলম্বন করে তার মধ্যে একটি হলো সেই দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অশান্তি, জীবনমানের অবনতি, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সংবাদপত্র ব্যবহার করে গুজব মিথ্যাচার ছড়ানো এবং ভয় অস্থিরতা সৃষ্টি করা। ইদানিং কালের কিছু ঘটনা আর আলামত বিশ্লেষণ করে আমি আশ্চর্য হয়েছি যে আমরা কি এখন বাংলাদেশেও তেমন কিছু ঘটতে দেখছি? আমি আশা করি এবং প্রার্থনা করি এটি যেন না হয়।

 

চীনের বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের প্রেক্ষাপট ব্যবহার করে (যদিও চিনের বিনিয়োগ জাপান বা বিশ্বব্যাংকের চেয়ে কম); ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে রাশিয়ার খোলাখুলি সমালোচনা না করা, জাতিসংঘের প্রবিধানে তাদের পক্ষে ভোট না দেওয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিছু চুক্তি বা জোট চুক্তিতে রাজি না হওয়া, বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে সাহস সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া এবং নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা; অর্থনীতি এবং মানব উন্নয়নের সাথে আরও ভাল হওয়া এবং পশ্চিমা হুকুম মেনে না নেওয়ার কারনে সেই শক্তি কিছু ঘটনা ঘটার পরিকল্পনা করছে কি!!! যেমন তারা ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে খাদ্য আমদানি করতে না দিয়ে বাংলাদেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল। আমি শুনেছি বিএনপি দলের স্বেচ্ছাসেবক শাখার একজন নেতা ১৫ আগস্টের গণহত্যার কথা উল্লেখ করে "আরেকটি ১৯৭৫হুমকি দিয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে নির্মম, অতি নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হয়েছিল, এমনকি তার ছোট সন্তানকেও রেহাই দেয়নি। "আরেকটি ১৯৭৫ তৈরি করার" হুমকি ছিল একটি নির্বাচনে পতিপক্ষ দলকে পরাজিত করার চেষ্টা না করে রক্তস্নানের মাধ্যমে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার সম্ভাব্য প্রচেষ্টার একটি স্পষ্ট নির্দেশক। বিএনপির প্রধান সহযোগী জামায়াত তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে। সারা দেশে গ্রামে গ্রামে কমিটি করেছে। অনেকেই মনে করেন, জামায়াত গত বছর দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছিল, ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করেছে বা করছে। কিছু দল আর তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা বার বার দেখছি চিনের ভয় দেখিয়ে ক্রমবর্ধমান মিথ্যাভাবে শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের তুলনা করে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

 

বাংলাদেশের ৭টি অনলাইনে পাওয়া পত্রিকা সহ, প্রথম আলো ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ আমি প্রতিদিন পড়ি। ইউটিউবের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের টিভি টক শো গুলো দেখি। সেদিন ডা: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের লেখাবড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে বড় ধাক্কা আসছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যপ্রবন্ধটি পড়লাম। তিনি কোনো প্রমাণ ছাড়াই, যখন বাংলাদেশ কখনো ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি, ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধে বড় ধাক্কার কথা বলে বিভ্রান্তি ভয় তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। আমি এখানে ব্যাখ্যা (paraphrasing) করছি, তিনি আরও বলেন, আইএমএফ থেকে ঋণ না নিলে বাংলাদেশ আরেকটি শ্রীলঙ্কায় পরিণত হবে। যখন উন্নত দেশগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন সেসব দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে দেশে ক্রমবর্ধমানে অর্থ প্রেরণ করবে?! স্বাভাবিকভাবেই রেমিট্যান্স একই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রাখছে না কিন্তু এখনও তা খারাপ নয়। আমরা দুই ঈদেই রেমিট্যান্স বাড়তে দেখেছি। বাংলাদেশ সরকার হুন্ডি বন্ধে প্রণোদনা বাড়িয়েছে। সেইসাথে প্রায় বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করছে। বাংলাদেশ কল্পনাপ্রসূত প্রকল্পে যাত্রা করেনি কিন্তু সেগুলিতে বিনিয়োগ করেছে যা ভবিষ্যতে সম্পদ তৈরি করবে। ডা: ভট্টাচার্যের IMFএর একজন ভাড়া করা লবিস্টের মতো বাংলাদেশকে আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন যদিও এর আগের দিন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে বাংলাদেশের এই মুহূর্তে আইএমএফ থেকে কোনো ঋণের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেননি বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ঋণ নিলে, ঋণের বোঝা আরো বাড়ালে বাংলাদেশ কিভাবে তা ফেরত দেবে। তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে IMF অনেক সময়ে অর্থ ঋণ দেয় যাতে দেশগুলো সেই টাকা দিয়ে তাদের চলতি ঋণ আর ঋণের সুদ পরিশোধ করতে পারে, যাতে করে তারা ঋণ খেলাপি না হয়, অধিকাংশ সময় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যয় করার জন্য নয়। IMF এর দেয়া টাকা আরেকটা ঋণ, যা সুধ আর প্রশাসনিক খরচ সহ শোধ করতে হবে। এই ঋণ অনেক কঠোরতা ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। আমি আশা করি তিনি বিশ্বব্যাংক আইএমএফ কর্তৃক আরোপিত কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচির (Structural Adjustment Programme) কথা ভুলে যাননি। আমি তখন ডেন হেগে, নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন সহায়তা তহবিল সম্পর্কে পরামর্শ দিতে একজন সিনিয়র জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছিলাম এবং আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল কিভাবে গরিব আর উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের উপর আরোপিত কঠোরতা কর্মসূচির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বিশেষ করে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাত সহ অন্যান্য সামাজিক খাতগুলো। তাই দেবপ্রিয়র এই IMF থেকে ঋণের উপদেশ, ঋণ পরিশোধে ধাক্কা আর অসুবিধা সম্পর্কে তিনি আগে যা বলেছেন তার বিপরীত।

 

আমি দেবপ্রিয়কে চিনি এবং তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমি অবশ্যই স্বীকার করবে যে প্রাথমিকভাবে আমরা তার ব্যক্তি হিসেবে আকর্ষণ দেখে গর্বিত ছিলাম। তিনি একজন কমনীয় ব্যক্তিত্ব সম্পুর্ণ লোক এবং খুব মসৃণ বক্তা। যখন আমি জেনেভাতে ডব্লিউএইচও-তে ছিলাম, তিনি বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনের প্রধান এবং হাইকমিশনার হিসেবে এসেছিলেন। অনেকবার আমি তার এবং তার পরিবারের সাথে আমাদের বাড়িতে এবং অন্যদের বাড়িতে ব্যক্তিগত ডিনার খেয়েছি, সময় কাটিয়েছি। আনেক বার তিনি আমাদেরকে তাঁর সরকারি বাসভবনেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার (গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা নয় আমি বলি সামরিক অভ্যুত্থানের নেতাদের) দ্বারা তার চাকরি পেয়েছিলেন এবং তিনি সেই সময়টিকে খুব ধূর্ততার সাথে ব্যবহার করেছিলেন নিজেকে পরিচিত করতে। তিনি নিজেকে দুর্দান্তভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে প্রচার করেছিলেন। তিনি এখন পরিচিত, জেনেভা পোস্টিং তাকে সে ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছে। তিনি একজন পেশাগত কূটনীতিক নন, কিন্তু আমি ভাবছি যে তিনি কখনও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দ্বারা এই সুযোগটি পেতেন কিনা। অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে কোনো পরামর্শ না দিয়েই, এখন তিনি শুধু বাংলাদেশ সরকার কী ভুল করছে তা নিয়ে কথা বলেন এবং আমরা এখন পর্যন্ত যা অর্জন করেছি তা নিয়ে গর্ব করে খুব কম কথা বলেন। তিনি দাবি করেন তিনি একজন স্বাধীনচেতা চিন্তাবিদ। ভাবছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে রাখতেন তাহলে তিনি কী বলতেন বা লিখতেন!

 

তারপর প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক শরফুদ্দিন আহমেদের লেখাটিলোডশেডিংয়ের তো জাদুঘরে থাকার কথা, বাইরে এল কেমনে?” পড়লাম। এটি ভয় এবং নেতিবাচকতায় পূর্ণ, বিশৃঙ্খলার অনুভূতি দেয় এই কথা বলে যে বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। হ্যাঁ বাংলাদেশের দামি গ্যাস জ্বালানি কিনতে সমস্যা হচ্ছে, ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। দাম বাড়ছে, সরকারকে লোড শেডিং এবং বিদ্যুতের সময়সীমা চালু করতে হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে এবং এখন .৫৬%; টাকার কিছুটা অবমূল্যায়ন হচ্ছে, সন্ধ্যা ৮টার পর দোকান বন্ধ করতে এবং আলো নিভিয়ে দিতে হচ্ছে। আগেও ছিল, এখনও সব খাতে দুর্নীতি বাড়ছে। লেখাটা পড়ে মনে হবে বাংলাদেশ যেন একটা দ্বীপে অবস্থিত দেশ, আর আমরা সেখানে বসবাস করছি এবং সেখানে বাহ্যিক পরিবর্তন যেমন কোভিড বা ইউক্রেন যুদ্ধ, বা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। আমি এই লেখককে চিনি না, তাই তিনি আসলে কে সে সম্পর্কে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না। তবুও বলব, এই ধরনের বুদ্ধিজীবীদের জন্য আমার একটি নাম আছে কিন্তু সুশীল হিসেবে থাকার জন্য আমি এখানে তা লিখব না। বহু বছর ধরে আমি আমার আন্তর্জাতিক আনেক কাজে দেখেছি কিছু কিছু বুদ্ধিজীবীকে টাকা দিয়ে কেনা বা বেচা যায় কারণ তাদের অনেকেরই কোনো দেশ প্রেম, আত্মমর্যাদা, বোধগম্যতা, গর্ব অনুভূতি বা সততা নেই। ভদ্যলোক মনে হয় সইচ্ছায় বলেননি বা ব্যাখ্যা করেননি কি কারনে আর শুধু কি বাংলাদেশেই এই পরির্বতন আর অসুবিধা গুলো হচ্ছে? আসুন অন্যান্য দেশে কী ঘটছে তা দেখা যাক।

 

আরেকটি এই তথাকথিত কিছু দল আর বুদ্ধিজীবীদের অভিযোগ আর তাদের মিথ্যা প্রচারের বিষয় হল, মূল খরচ থেকে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তারা জনগনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে এই বলে যে সরকার যেন জেনেশুনে ইচ্ছা করে দুর্নীতি করার জন্য তা করছে। যেন কোভিড এবং লকডাউনের কারণে বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ পণ্য পরিবহনের ঘাটতি সময় আর খরচ বৃদ্ধির কোন কারন নয়। আমরা কি জানি আজকাল একজন ব্যক্তিকে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য কতমাস অপেক্ষা করতে হবে - সরবরাহ-চেইন সমস্যার কারণে নজিরবিহীন অন্তত কয়েক মাস বিলম্ব করতে হবে। আমি বলছি না, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আর ব্যবস্থাপনার কোনো দোষ নেই। আমি একমত যে সরকারকে অবশ্যই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে কিন্তু এটি কি কেবল বাংলাদেশেই ঘটছে। এখানে সুধু একটি উধারন উল্লেখ করি। সুরক্ষা পরীক্ষা এবং সংকেত সিস্টেমের সমস্যাগুলির কারণে বিলম্বিত, এমনকি মহামারী শুরু হওয়ার আগে, লন্ডনের ক্রসরাইল সাড়ে তিন বছর দেরিতে খুলেছে এবং মোট খরচ ১৮. বিলিয়ন পাউন্ড (২৩. বিলিয়ন ডলার) যা বাজেটের চেয়ে বিলিয়ন পাউন্ডেরও (২১.%) বেশি (কতটা পদ্মা সেতু তৈরি করার খরচের সমান তা)

 

বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে কী ঘটছে সে সম্পর্কে কথা বলা যাক। সম্প্রতি জেনেভায় আমরা আমাদের গাড়ি জন্য পেট্রোল কিনতে গিয়েছিলাম। আমরা যখন কাউন্টারে পেমেন্ট করতে গেলাম, উচ্চ মূল্য এবং বেশ মোটা খরচের বিল দেখে বললাম, "দুঃখিত এটা আমাদের বিল হতে পারে না পেট্রোল পাম্পের দোকানদার শুধু মুচকি হাসলেন। জ্বালানি দাম এত বেড়েছে ভাবতেই অবাক লাগছে। কূটনৈতিক অবস্থার কারণে আমাদের সুইজারল্যান্ডে কোন ট্যাক্স বা ভ্যাট দিতে হয়না। তাই যারা ট্যাক্স বা ভ্যাট দেয়, তাদের খরচ এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তা করুন তো? জ্বালানির দাম অনেক বেড়ে গেছে দেখে আমরা সম্পূর্ণ বিস্মিত হয়েছি। ভাবতে পারেন বাংলাদেশ সরকার যদি সেই অনুযাযী জ্বালানি আর বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, তাহলে কেমন অস্থিরতা বাড়বে! রাজনৈতিক দল এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা কীভাবে লিখবেন এবং টকশোতে বলবেন? কিন্তু যদি তাড়াতাড়ি পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয়, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যেকোনো পরিণতির জন্য বিশ্বের সবার মত আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে। বিনামূল্যে কিছুই আসে না তাই আমাদের হয়ত জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে।

 

জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ আমি লিভারপুলে ছিলাম, দেখলাম খাবার এবং নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। আমার গাড়িতে জ্বালানি ভরতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আগের সমান খরচে মাএ অর্ধেক ট্যাংক ভরতে পারলাম। আমি ভাবছিলাম নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি এই বৃদ্ধির সাথে কিভাবে মোকাবিলা করছে। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা যাদের বাড়ি ভিত্তিক সহায়তা প্রদানের জন্য তাদের গাড়ি ব্যবহার করতে হয় তারা পেট্রোল খরচ আর বহন করতে পারছে না। যদিও এখনও তারা শুধু কিছু ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে যখন জ্বালানির দাম অর্ধেক ছিল সেই হারে। তাদের মধ্যে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। বিশাল ঋণের কারণে ঋণের সুদ পরিশোধ গত মাসে বেড়ে £১৯. বিলিয়ন হয়েছে, গত বছরের জুনের তুলনায় £১০. বিলিয়ন বেশি এবং ১৯৯৭ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ - অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে। মনে রাখবেন এটি শুধুমাত্র মাসিক সুদ প্রদান, আমাদের সরকারের মাসিক বা বাৎসরিক বাজেট পরিমান কি তা ভেবে দেখুন। ভেবে দেখুন সুধু মাএ সেই পরিমান মাসিক সুদ দিয়ে আমরা কত পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারতাম। কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, পরিবারের আর্থিক পতন এবং ক্রয় ক্ষমতা হ্রাসের জন্য অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দুর্ভাগ্যবশত এখনও সরকারকে আরো ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতি এখন .% শ্রমিকের ঘাটতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট যুক্তরাজ্যের আরও অনেক রেস্তোরাঁকে তাদের দরজা বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। রেল, বিমান, চিকিৎসা খাতের কর্মচারির পাশাপাশি আইনজীবীরা ধর্মঘট করছেন। উচ্চ জ্বালানি খরচের প্রতিবাদে মহাসড়কে কিছু গাড়ি রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচলের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় রাজনৈতিক মাথাব্যথা কারন হয়ে উঠছে।

 

ঘরে বসে সরকারের অনুদান পাওয়ায় আর কম ব্যয়ের জন্য মার্কিন পরিবারগুলি মহামারীর আগের তুলনায় আরও আরামদায়ক আর্থিক অবস্থানে রয়েছে, তবে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি সেই লাভগুলিকে ক্ষয় করতে শুরু করেছে, নিরাপত্তাহীনতা এবং মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে ক্ষোভের অনুভূতি জাগিয়েছে। এক বছরের আগের তুলনায় আর্থিকভাবে ভালো থাকার কথা বলে পরিবারের অনুপাত ২০২১ সালের মে ৪২% থেকে ২০২২ সালের মে মাসে ৩৭% নেমে এসেছে। যারা বলছে তারা খারাপ অবস্থায় আছে ২২% থেকে লাফিয়ে ৪৬%হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ২৮.৪৩ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি % কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস অনুসারে, ২০২১ অর্থবছরের জন্য সরকারী ঋণের সুদ $৪১৩বিলিয়ন হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। ২০৩১ সালের পূর্বাভাস অনুযায়ী যা $৯১৪ বিলিয়ন ডলারে পৌছাবে। আপনি যদি ২০২১ সালে ৩৩২. মিলিয়ন লোকের (ইউএস সেন্সাস ব্যুরো) মার্কিন জনসংখ্যার অনুমান নেন, তবে $২৮.৪৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ঋণের বোঝা $৮৬,০০০-এর বেশি সমতুল্য হবে।

 

ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি .% এই সমস্ত দেশ জনগণকে তাদের বাড়ি গরম করার সিস্টেম এবং গ্যাসের শিল্প ব্যবহার কম বা বন্ধ করতে বলছে। বন্ধ করা কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আবার শুরু করছে (আমি শুনেছি জাপান সম্প্রতি বাংলাদেশে দ্বিতীয় মেগা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই সম্মত ঋণ দিতে অস্বীকার করেছে) ফ্রান্স তাদের বন্ধ করে দেওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনরায় চালু করছে। সুইজারল্যান্ড একটি জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এতে বেশ কিছু পদক্ষেপ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান থেকে শক্তি সাশ্রয়ের আহ্বান, যেমন দোকানের জানালার লাইট এবং হিটার বন্ধ করা, প্রায় ৩০,০০০ বৃহৎ শক্তির শিল্প গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুৎ রেশন করা। সরকার আরও কঠোর ব্যবস্থা হিসাবে দিনে চার থেকে আট ঘন্টা পর্যন্ত দেশের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ বন্ধের সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করেছে। বিদ্যুতের ঘাটতি হলে পরিকল্পনাটি কার্যকর করা হবে, সুইস ইলেকট্রিসিটি কোম্পানির অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান (ভিএসই), মাইকেল ফ্রাঙ্ক তা জানিয়েছেন।

 

সুইডেন প্রায় ১০% মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হচ্ছে। যদিও পেনশনধারীরা এখন বেশি পেনশন ভাতা পাচ্ছেন কিন্তু অনেকের মতো পরিষেবাধারীরা খুব কম বেতন বৃদ্ধি এবং কোনো ভর্তুকি ছাড়া জীবনযাত্রার সংকটের ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবেলা করতে লড়াই করছে। এমনকি তুলনামূলকভাবে উচ্চ বেতনের কর্মকর্তা বলছেন "এটি অসহনিয় এবং মাথা খারাপের কারন হয়ে দাডিয়েছে"

 

গত সপ্তাহে জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী দেশটির গ্যাসের ব্যবহার কমাতে জরুরি পদক্ষেপের একটি নতুন তরঙ্গ ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের ফলে ক্রমাগত সরবরাহ শৃঙ্খলের ঘর্ষণ, অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ শক্তি এবং উচ্চ পণ্যমূল্যের পরিস্থিতিতে, জার্মান অর্থনীতিকে একটি প্রযুক্তিগত মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। উচ্চ বিদ্যুতের দাম এবং গ্যাসের ঘাটতির হুমকি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। কোম্পানিগুলি আগামী মাসগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ ব্যবসায়িক কার্যকলাপের ভবিষ্যদ্বাণী করছে।

 

ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং চীনের কঠোর কোভিড-১৯ লকডাউনের জন্য দায়ী বিশ্ব অর্থনীতির উপর ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা, জাপানের রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী, টেকসই প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকেও কমিয়ে দিয়েছে।

 

পাউন্ড এবং ইউরোর মূল্যও মার্কিন ডলারের বিপরীতে হ্রাস পাচ্ছে। ভারতীয় রুপিও তার মূল্য হারাচ্ছে, এখন প্রতি ডলার ৮০ রুপি। পাকিস্তানি রুপিও দ্রুত মূল্যায়ন হয়ে আজ তা প্রতি ডলারে ২৩১ রুপি। ভারতীয় মুদ্রাস্ফীতি আজ .০৪% এবং পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতি ২১.৩২% বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আসন্ন মন্দার পূর্বাভাসের সাথে বাংলাদেশে এর প্রভাব পরবে তা তো স্বাভাবিক। ভবিষ্যতের জন্য জনগনকে জানাতে এবং প্রস্তুত করতে আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মিথ্যা, গুজব আতঙ্ক ছড়াবেন না।

 

প্রশ্ন আর সমাধান বাংলাদেশে শাসন বা সরকার পরিবর্তন বা কোনো অভ্যুত্থানে নয়, বরং পশ্চিমা শক্তিকে তাদের আধিপত্য, দ্বৈত নৈতিকতা ভণ্ডামি বন্ধ করতে হবে। আধিপত্য আধিপত্যের কথা ভুলে যেতে হবে এবং ইউক্রেনের এই প্রক্সি যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। রাশিয়া পশ্চিমকে বসতে হবে এবং যুদ্ধ নৃশংস নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ সহ উন্নয়নশীল দেশগুলি যদি ভারত বা চীন বা সৌদি আরবের মতো সস্তায় যেখানেই জ্বালানি খাদ্য কিনতে চায়, তাকে হুমকি দেবেন না। পশ্চিমা দেশগুলি কিছু সময়ের জন্য এই দুর্দশা সহ্য করতে পারে তবে উন্নয়নশীল দেশগুলির সেই ক্ষমতা এবং বিলাসিতা নেই। রাশিয়া এবং পশ্চিম দয়া করে এই যুদ্ধ এখনই বন্ধ করুন। আসুন কিছু স্বাভাবিকতায় ফিরে যাই, আসুন আমরা সম্প্রীতির সাথে একসাথে বাস করি। এই সংকটময় মুহূর্তে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে বিদেশি হস্তক্ষেপ থেকে বাঁচাতে হবে। আসুন আমরা নিজেদেরকে বিক্রি করে, কঠোর সংগ্রাম করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অর্জন করা আমাদের দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করি। আমরা অবশ্যই এবং শীঘ্রই একসাথে এই জটিল পরিস্থিতি এবং কষ্ট কাটিয়ে উঠব। আসুন একটি স্বাধীন গর্বিত জাতির গর্বিত মানুষ হই।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭