এডিটর’স মাইন্ড

লাপাত্তা দুই উপদেষ্টা


প্রকাশ: 28/07/2022


Thumbnail

সরকারের এখন যে দুইজন ব্যক্তিকে সবচেয়ে বেশি দরকার, সেই দুইজন ব্যক্তিই লাপাত্তা হয়ে গেছেন। এই দুইজনই ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিলো, তখন থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। প্রথমদিকে দুজনই সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদে এসে দুইজনই অনেকটা নিষ্ক্রিয় এবং পর্দার আড়ালে। এদের একজন হলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষক ড. গওহর রিজভী। অন্যজন ড. মসিউর রহমান। ড. গওহর রিজভী প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অনুপস্থিত। তিনি লন্ডনে একটি গবেষণার কাজে আছেন বলে জানানো হয়েছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ছুটিও নিয়েছেন। মাঝে মাঝে তিনি অল্প কয়েকদিনের জন্য দেশে আসেন কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোনো কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, এই সময় ড. গওহর রিজভীকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো।

ড. গওহর রিজভী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অন্তত পরিচিত এবং তাঁর সুনাম রয়েছে। এখন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে নানা রকম চাপে রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর বিভিন্ন রকম চাপ প্রয়োগ করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্র চলছে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। এই সময়ে বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার ক্ষেত্রে যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছে না বলেই মনে করেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। বরং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে গওহর রিজভীর মত একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিকের খুব দরকার ছিলো। তাছাড়া এখন বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেখানে কিছু কূটনীতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলা ইত্যাদি ব্যাপারে গওহর রিজভীর কোনো বিকল্প নেই বলেই অনেকে মনে করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় যখন আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলো এবং বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচন কি সম্ভব হবে সেটি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলো তখন ড. গওহর রিজভী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং প্রধানমন্ত্রী পরামর্শক্রমে সে সময় ড. রিজভী বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে এই নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই ড. গওহর রিজভী কেন অনুপস্থিত, তা আওয়ামী লীগের কাছে না, জনগণের কাছেও একটি বড় প্রশ্ন।

ড. মসিউর রহমান, সর্বশেষ তাকে দেখা গিয়েছিলো গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনে। সে সময় পদ্মা সেতুর কারণে যারা বিতর্কিত হয়েছিলেন সেরকম দুজন- ড. মসিউর রহমান এবং সৈয়দ আবুল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে ডেকে নিয়েছিলেন এবং তাদের সাথে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। কিন্তু এরপরে আর ড. মসিউর রহমানের খোঁজখবর নেই। ড. মসিউর রহমান একজন মেধাবী অর্থনীতিবিদ। এই বর্তমান সংকটে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার দরকার ছিলো বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে আইএমএফ এর সাথে ঋণচুক্তি কিভাবে হবে, ডলার সংকট থেকে কিভাবে বাংলাদেশ মুক্তি পাবে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নির্দেশনাগুলো কি ধরনের হবে, কৃচ্ছতা সাধনের পথ ও নির্দেশনা কি রকম হবে ইত্যাদি বিষয়ে ড. মসিউর রহমানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতো। তাছাড়া ড. মসিউর রহমান একজন শিক্ষিত পণ্ডিত হিসেবে পরিচিত। তিনি যদি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথাবার্তা বলতেন, সেটি জনগণের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হত। কিন্তু এখন পর্যন্ত ড. মসিউর রহমান পর্দার আড়ালে রয়েছেন। সরকারের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলছেন যে, উপদেষ্টারা যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে উপদেষ্টা থেকে তাদের কি লাভ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭