আগামী ১২ আগস্ট সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সিনেটের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ এ তথ্য জানান।
রহিমা কানিজ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার এ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২ জন সিনেট সদস্যকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নূরুল আলম বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩–এর ১১ (১) ধারা অনুযায়ী, সিনেট সভায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে উপাচার্য নিয়োগের জন্যই এ নির্বাচন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এর ১৯ (১) ধারা অনুযায়ী, ৯৩ জন মনোনীত ও নির্বাচিত সদস্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট গঠিত হয়। তাঁদের মধ্যে শিক্ষক প্রতিনিধি ৩৩ জন, রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি ২৫ জন, রাষ্ট্রপতি মনোনীত সিনেট সদস্য ৫ জন, ছাত্র প্রতিনিধি ৫ জন এবং অন্যান্য ২৫ জন।
তবে বর্তমান সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে ৮২ জন সদস্যের ভোটাধিকার আছে। এর মধ্যে শিক্ষক প্রতিনিধি ও রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধির সংখ্যা ঠিক থাকলেও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধিদের ৫টি পদ ৩০ বছর ধরে শূন্য। এ ছাড়া আচার্য মনোনীত পাঁচজন শিক্ষাবিদের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেট সদস্যরা তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হন। সেই হিসেবে ৬৮ জন শিক্ষক ও রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধির মেয়াদ গত বছরই শেষ হয়েছে। তবে অধ্যাদেশ অনুযায়ী, পরবর্তী সিনেট সদস্য মনোনীত বা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সিনেট সদস্যরা স্বপদে বহাল থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য নূরুল আলম।
এদিকে, উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষ করে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। শিক্ষকেরা বলছেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকেরাই কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যেতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন বলেন, নির্বাচন হওয়া-না হওয়া নিয়েই শিক্ষকদের মধ্যে একধরনের বিভক্তি আছে। অনেক শিক্ষকই শোকের মাসে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন। আবার অনেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ সিনেট সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনের বিষয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন হলে ভালো হতো।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সহসভাপতি মোহা. মুজিবুর রহমান বলেন, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগপন্থীদের মধ্যেই তিন থেকে চারটি প্যানেল হতে পারে। এটি শিক্ষক রাজনীতির জন্য ভালো কোনো বার্তা নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রশাসনিক পর্ষদের মধ্যে ২০১৫ সালের অক্টোবরে সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন, ২০১৬ সালের এপ্রিলে ডিন নির্বাচন, একই বছরের জুন মাসে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য, অর্থ কমিটি ও শিক্ষা পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সিনেটের রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। সে সময় আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজ’ থেকে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে জয়লাভ করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। পরে দুই মেয়াদে দেশের প্রথম নারী হিসেবে উপাচার্যের দায়িত্বপালন করেন তিনি। চলতি বছরের ২ মার্চ ফারজানা ইসলামের মেয়াদ শেষ হয়। এর এক দিন আগে (১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নূরুল আলমকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। পরে ১৭ এপ্রিল তাঁকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট ৪ বছরের জন্য নূরুল আলমকে সহ–উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়।