ইনসাইড বাংলাদেশ

নিরাপদ সড়ক: শুধুই কি প্রতিশ্রুতি?


প্রকাশ: 29/07/2022


Thumbnail

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের কিছু শিক্ষার্থী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের ফুটপাথে বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একটি বাস থামলে সেটায় ওঠার চেষ্টা করেন তারা। ঠিক ওই সময় জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাস আগে যাত্রী তোলার জন্য নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসে এবং একটি বাস বেপরোয়াভাবে ফুটপাতে দাঁড়ানো ওই শিক্ষার্থীদের ওপরে উঠে যায়। ওই ঘটনায় প্রাণ হারায় দুই শিক্ষার্থী এবং গুরুতর আহত হয় ১২ জন। এই ঘটনার জের ধরে বিক্ষুব্ধ সহপাঠীরা রাস্তায় নেমে আসে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশে সর্বত্র। শিক্ষার্থীরা সড়কের অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

সেই সড়ক দুর্ঘটনার ৪ বছর পূর্তি আজ। নিরাপদ সড়কের জন্য ৯ দফা দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত চলমান থাকে যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সড়ক আন্দোলন। ওই সময় নীতিনির্ধারক মহল এবং দায়িত্বশীল সবাই সড়ক নিরাপদ ও বিশৃঙ্খলমুক্ত করতে নানা আশ্বাস দেন। ওই বছর ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভায় একটি খসড়া ট্রাফিক আইন অনুমোদন করা হয়, যে আইনে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যায় মৃত্যুদণ্ড এবং বেপরোয়াভাবে চালিয়ে কারো মৃত্যু ঘটালে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। আইন অনুমোদন হওয়ার পর সড়ক ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ৪ বছর হলেও সেই আইনের বাস্তব কোনো প্রয়োগ এবং প্রভাব দেখা যায় না।

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পাঁচ দফা অনুশাসন দেন। এর মধ্যে দূরপাল্লার চালকদের জন্য মহাসড়কের পাশে বিশ্রামাগার নির্মাণ, দূরের পথে বিকল্প চালক রাখা এবং একজন চালককে আট ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাতে না দেওয়া উল্লেখযোগ্য। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর মহাসড়কে বিশ্রামাগার নির্মাণের একটি প্রকল্প নিয়েছে। ওই বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে করা একটি কমিটি ওই বছরের আগস্টে ৩০টি সিদ্ধান্ত নেয়, যেগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে ১৫ দিনের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচলের সময় দরজা বন্ধ রাখা, স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানামা বন্ধ রাখা, বাসের দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক ও সহকারীর ছবিসহ নাম, চালকের লাইসেন্স নম্বর প্রদর্শনের নির্দেশনার কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসাবে, ২০১৮ সালে সড়কে ৪ হাজার ৭৬ জনের, পরের বছর আরও বেশি ৪ হাজার ৩৫৮ জনের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে করোনার ফলে লকডাউন থাকার কারণে প্রাণহানি কিছুটা কমে ৩ হাজার ৫৫৮ জন হয়। গত বছর সড়কে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭৭৬ জনে। চলতি বছর প্রাণহানি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৬৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পরের বছর সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৪ হাজার ১৩৮ জন। ২০২০ সালে করোনাভারাইসের কারণে লকডাউনে থাকায় মৃত্যুর সংখ্যা সামান্য কমে ৩ হাজার ৯১৮ জন হয়। আর চলতি বছর সাত মাসেই সে সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ হাজার ৫০২ জনে। অর্থাৎ প্রতিদিন সড়কে প্রাণ গেছে অন্তত ১৪ জনের।

নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতি এবং আইন শুধুই কি কাগজে-কলমে আবদ্ধ? আজও সেই প্রতিশ্রুতি বলি হয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসে থাকা ১১ জন শিক্ষার্থী। ৪ বছর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশে যখন আইন অনুমোদন করা হয় তখন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দেশের মানুষ। কিন্তু সেই আইনের নেই কোনো প্রয়োগ, পরিস্থিতির নেই কোনো অগ্রগতি। এখনও আগের মতোই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা, দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না ট্রাদিক আইন, কোন অদৃশ্য অপশক্তি রয়েছে অনিরাপদ সড়কের অন্তরালে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭